নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের
বিরুদ্ধে জেলেদের চাল চুরির অভিযোগে দুদকের মামলা
অপরাধ প্রতিবেদকঃ আসামী (১) মােঃ মেহেরাজ উদ্দিন, চেয়ারম্যান, ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ (২) মােঃ গােলাম ফারুক, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, জাহাজমারা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, হাতিয়া, নােয়াখালী, (৩) তাহেরা বেগম, সদস্য, ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ ও (৪) ছকিনা খাতুন শাহানারা, সদস্য, ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদগণ উক্ত ইউপির জাটকা আহরনকারী হতে দরিদ্র ভিজিএফ ৩৮৯ জন জেলে প্রত্যেকের জন্য মার্চ/২০১৬ হতে জুন/২০১৬ পর্যন্ত ৪ মাসে ১৬০ কেজি হারে বিতরণের জন্য মােট ৬২.২৪ মেঃ টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা কমিটির অনুমােদিত তালিকার দরিদ্র ভিজিএফ জেলেদের নামীয় চাল যথাযথভাবে বিতরণের দায়িত্বে থেকে কম পরিমানে বিতরণ করেন; কোন কোন ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তদের না দিয়ে ভুয়া মাস্টার রােল তৈরী ও স্বাক্ষর করে দাখিল করেন।
তদন্তকালে সাক্ষীগণের জবানবন্দি দ্বারা গড়ে অর্ধ্বেক বিতরণ না করার প্রমাণ পাওয়ায় জেলেদের ৬২.২৪ মেঃ টন এর স্থলে ৩১.১২
মােঃ টন বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা হয়।
একইভাবে নােয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে জানুয়ারী/২০১৬ হতে জুন/২০১৬ পর্যন্ত হত দরিদ্র (ভিজিডি) মহিলাদের চাউল বিতরণের খাদ্য শস্য ছাড়করণ পত্র মােতাবেক নােয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ১১৯ জন কার্ডধারী ভিজিডি মহিলাদের নিকট বিতরণের জন্য (৩.৫৭০ +৩.৫৭০ + ৩.৫৭০ + ৩.৫৭০ + ৩.৫৭০ + ৩.৫৭০) = ২১.৪২ মেঃ টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা কমিটির অনুমােদিত তালিকার ভিজিডি মহিলাদের নামীয় চাল যথাযথভাবে বিতরণের দায়িত্বে থেকে কম পরিমানে বিতরণ করেন; কোন কোন ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তদের না দিয়ে ভুয়া মাস্টার রােল তৈরী ও স্বাক্ষর করে দাখিল করেন। তদন্তকালে সাক্ষীগণের জবানবন্দি দ্বারা গড়ে অর্ধেক বিতরণ না করার প্রমাণ পাওয়ায় জেলেদের ২১.৪২ মেঃ টন এর স্থলে ১০.৭১ মােঃ টন বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা হয়।
আসামীগণ বরাদ্দপত্র নিয়ে চাউল উত্তোলন করে গত ১৫-০৫-২০১৬ খ্রিঃ তারিখে চাউল বিতরণের সময় নির্ধারিত পরিমানে এবং তালিকা অনুযায়ী বিতরণ না করে কাউকে ১০ কেজি, কাউকে ২০ কেজি হারে চাউল বিতরণ করে প্রতিটি মাস্টার রােলে ৩০ কেজি উল্লেখ করে ভুয়া মাস্টার রােল তৈরী করেন। অত্র মামলা রুজুর পূর্বে ও পরে উক্ত অর্থ বছরে ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ১১৯ জন কার্ডধারী ভিজিডি মহিলার নিকট বিতরণের জন্য জানুয়ারী/২০১৬ হতে জুন/২০১৬ পর্যন্ত মােট ৬টি বরাদ্দপত্রের মাধ্যমে প্রত্যেকের নামে ৬ মাসে (৩০X৬)=১৮০ কেজি চাউল বিতরণের জন্য আসলেও যথাযথভাবে বিতরণ করা হয়নি। মহিলাদের ২১.৪২ মেঃ টন এর স্থলে ১০.৭১ মেঃ টন চাউল বিতরণ না করে এর সরকারী মূল্য প্রায় ৩,৬০০/- টাকা হারে
(৩১.১২+১০.৭১=৪১.৮৩*৩৬০০)=১৫,০৫,৮৮০.০০ টাকা অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করতঃ প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভংঙ্গ করতঃ আত্মসাৎ করেন। এছাড়া প্রত্যেক চাউল গ্রহীতার নিকট থেকে প্রতিবার চাউল গ্রহণের সময় ১৬০ টাকা হারে চাদা (চৌকিদারী ট্যাক্স উল্লেখ করলেও আদায় সংক্রান্তে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যগণ কর্তৃক রেজুলেশনে অনুমােদন নাই) আদায় করে ব্যাংক হিসাবে জমা না করে এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যগণের রেজুলেশনে অনুমােদন না করিয়ে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া বন বিভাগের নিয়ন্ত্রনাধীন খাল ও বাজার অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করতঃ
প্রতারণা মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভংঙ্গ করতঃ ডাক দিয়ে অলিখিতভাবে ইজারা প্রদান করে অর্থ আদায় করতঃ ইউপি ফান্ডে জমা
করে আত্মসাৎ করে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরােধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযােগ্য অপরাধ করেন। ০৩-১০-২০১৭ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়।
দীর্ঘ বিচার শেষে অদ্য ৮-২-২২ তারিখে নােয়াখালীর স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এএনএম মাের্শেদ আলম আসামীদের সবাইকে বর্ণিত ৪টি ধারায় (৩+২+২+২)= মােট ০৯ বছরের সাজা ও ৮০.০০ হাজার টাকা জরিমান করে জেল হাজত প্রেরণ করেন।
হাতিয়া (নােয়াখালী) থানা মামলা নং-১৩ তারিখ: ১৬-০৫-২০১৬ খ্রিঃ; ধারা: দন্ডবিধির
৪০৯/৪২০/৩৪২/৩৩২/১৮৬/৩৫৩ ধারা।
মামলা দায়েরকারী: জনাব ছিদ্দিক আহম্মেদ জুয়েল, সাবেক ইউপি সচিব, ১১নং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ, হাতিয়া, নােয়াখালী;
তদন্তকারী কর্মকর্তা মােঃ মশিউর রহমান, সাবেক পরিচালক, বর্তমানে উপপরিচালক, দুদক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা।
