জিয়াউর রহমানের জন্মদিন আজ
বিশেষ প্রতিবেদকঃ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৪তম জন্মদিন আজ।
১৯৩৬ সালের এইদিনে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাঘমারা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মনসুর রহমান। দিবসটি উপলক্ষে দুইদিনব্যাপী কমর্সূচি পালন করছে বিএনপি।
বগুড়া ও কলকাতায় শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত করেন জিয়াউর রহমান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। কমর্জীবনের অধিকারী শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গণমানুষের কাছে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সমাদৃত। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোসের্র প্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের কাছে প্রথম পরিচিত হলেও পরে তিনি বাংলাদেশের একজন বরেণ্য রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে রাজনৈতিক ঐকতানে নিয়ে আসা ও সুদৃঢ় অথৈর্নতিক ভিত্তির ওপর দঁাড় করানোর কারণে তিনি আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি আখ্যা পান। তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদশের্র ভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির সূচনা করেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের নতুন দশর্ন উপস্থাপন করেন জিয়াউর রহমান।
তিনি ১৯ দফা কমর্সূচি দিয়ে দেশে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যান। তার প্রতিষ্ঠিত বিএনপি দেশের মানুষের প্রিয় দল হিসেবে ‘৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ, ‘৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নিবার্চনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অধীনে অনুষ্ঠিত ’৮৬ সালের তৃতীয় ও ‘৮৮ সালের চতুথর্ এবং মহাজোট সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালে দশম সংসদ নিবার্চন বিএনপি বজর্ন করে। আর সপ্তম ও নবম সংসদ নিবার্চনে সংসদে বিরোধী দলে ছিল বিএনপি। সবের্শষ একাদশ সংসদ নিবার্চনে চরম ভরাডুবি হয় দলটির।
বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ‘৭১ সালে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা যেমন এ দেশের মুক্তিকামী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছিল, তেমনি ’৭৫ সালে দেশের স্বাধীনতা-সাবের্ভৗমত্ব যখন হুমকির মুখে, তখন সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসীন হন। পরে দেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবতর্ন এনে জিয়াউর রহমান চীনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পকের্র সূচনা করেন। দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ার সাতটি দেশকে নিয়ে ‘সাকর্’ গঠনের উদ্যোগ তারই। ওআইসিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর সংহতি জোরদার করার জন্য তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীণর্ হয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ পযর্ন্ত পঁাচবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সাকির্ট হাউসে মমাির্ন্তকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসী অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর তৎকালীন সরকার তাকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করে।
দুইদিনের কমর্সূচি :দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মদিন উপলক্ষে দুইদিনের কমর্সূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কমর্সূচির মধ্যে শুক্রবার বিকালে সুপ্রিমকোটর্ আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে আলোচনা সভা হয়েছে। আজ ঢাকাসহ সারাদেশের দলের কাযার্লয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১০টায় শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অপর্ণ ও ফাতেহা পাঠ হবে। দিবসটি উপলক্ষে পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় এই দুই দিনের কমর্সূচির পাশপাশি সারাদেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিটে যথাযোগ্য মযার্দায় দলের প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিন পালন করা হবে।
এদিকে জন্মদিন উপলক্ষে এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন আধিপত্যবাদ ও স¤প্রসারণবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক আপসহীন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক। তাই সকল ধরনের বৈদেশিক চাপ ও অশুভ প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টাকে অগ্রাহ্য করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ শহীদ জিয়ার এক অবিস্মরণীয় অবদান। যার কারনে দেশের সাবের্ভৗমত্ব শক্তিশালী হয় এবং স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশের আন্তজাির্তক ভূমিকা বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। তাই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেদের নীলনক্শা বাস্তবায়নের কঁাটা ভেবে জিয়াকে নিমর্মভাবে হত্যা করে। কিন্তু তার এই আত্মত্যাগে জনগণের মধ্যে গড়ে উঠেছে দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে এক ইস্পাতকঠিন গণঐক্য।