টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন
আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত পরিবেশ অধিদপ্তর
আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত পরিবেশ অধিদপ্তর। একশ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কারণে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তারা (কর্মকর্তা-কর্মচারী) দালাল নিয়োগ করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করছেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প থেকেও অর্থ লুটে নিচ্ছেন। এছাড়া সংস্থাটির একশ্রেণির কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ কাজে সহায়তাও করছেন তারা। পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে সংস্থাটির কর্মীদের একাংশের যোগসাজশ আছে। তাদের প্রভাবের কাছে আত্মসমর্পণ করায় অধিদপ্তরের কার্যকারিতা ব্যাহত হচ্ছে।
দেশের পরিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত সরকারি সংস্থাটির ওপর গবেষণা চালিয়ে উল্লিখিত অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ‘পরিবেশ অধিদপ্তরে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর ও উদ্বেগজনক আরও বেশকিছু দিক উঠে এসেছে। বিশেষ করে অধিদপ্তর কর্তৃক জনগণ ও সেবাপ্রার্থীদের পদে পদে হয়রানি এবং অবৈধ অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করার চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
সার্বিক বিবেচনায় পরিবেশ অধিদপ্তরে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে দশ দফা সুপারিশ প্রদান করেছে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সুশাসনের যতগুলো সূচকে আমরা গবেষণাটি করেছি তার সবগুলোতেই ঘাটতি পাওয়া গেছে। এতে পরিবেশ অধিদপ্তর সম্পূর্ণরূপে জর্জরিত। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপর থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি এক ধরনের বিপরীতমুখী ভূমিকা পালন করছে। অর্থাৎ সর্ষের মধ্যেই ভূতের দেখা মিলছে। অনিয়ম, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও সুশাসনের ঘাটতি দূর করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, প্রভাবশালী শিল্প কারখানার মালিকদের প্রভাব থেকে মুক্ত করে পরিবেশ অধিদপ্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ দূষণ ও এর বিপর্যয় থেকে উত্তরণে ব্যর্থতার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন সম্ভব হবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন বিষয়ক রিসার্চ ফেলো মো. নেওয়াজুল মওলা। এই গবেষণাটি তত্ত্বাবধান করেছেন একই বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম।
২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে মিশ্র পদ্ধতিতে গবেষণাটি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে তদারকি কর্মকর্তা যান। কিন্তু তারা ইটিপি, কারখানার পরিবেশ, পানির মান, লাইসেন্সের কাগজপত্র, ল্যাবরেটরি রিপোর্ট, টাকার রসিদ, ছাড়পত্র নবায়ন ও মূল সার্টিফিকেট ইত্যাদি বিষয় সাঠিকভাবে দেখেন না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কারখানার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন। দৃষ্টান্ত হিসাবে টিআইবির সমীক্ষাভুক্ত প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিল্পকারখানার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ওইসব প্রতিষ্ঠানে বছরে একবারও পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি হয়নি। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার তদারকিতে ঘাটতি থাকায় পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান ও নবায়ন ছাড়পত্র হস্তান্তর করতে সময়ক্ষেপণ করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ছাড়পত্র নিতে দালালের মাধ্যমে কাজ স¤পন্ন করতে গিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা হয়রানির শিকার হন। অন্যদিকে, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) কার্যালয় কর্তৃক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
গবেষণায় উঠে এসেছে, সমীক্ষাকৃত শিল্প কারখানার শতকরা ৫১ ভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ ছাড়পত্র দিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার শতকরা ৭০ ভাগ তথ্য সংগ্রহের সময় পর্যন্ত নবায়নের জন্য আবেদনই করেনি। দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কোনো তালিকা করেনি সংস্থাটি। ফলে ‘দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদান’ মানদণ্ডের আলোকে জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণে ঘাটতি রয়েছে। দূষণকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতে মামলার পরিবর্তে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা নির্ধারণে অধিদপ্তর বেশি আগ্রহী বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে দায়ের করা মামলার বাইরেও ফৌজদারি আইনের মামলার বোঝা রয়েছে পরিবেশ আদালতের ওপরে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সমীক্ষার আওতাভুক্ত শতকরা ১৭ ভাগ শিল্প কারখানা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিকট হতে অনাপত্তিপত্র না পাওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। আবাসিক এলাকায় শিল্প কারখানা স্থাপন না করার আইনি বিধান থাকলেও বেশিরভাগ শিল্প কারখানাই (৭২ শতাংশ) আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ক্ষেত্রবিশেষে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এটি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাথে প্রভাবশালী আমলা এবং ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের একাংশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক আছে। ফলে প্রভাব এবং যোগসাজশের মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ ইআইএ সম্পাদন করেও ছাড়পত্র দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য কোনো কোনো কর্মকর্তার সাথে দালালের পূর্ব যোগসাজশ এবং নিয়মবহির্ভূত অর্থের একটা অংশ প্রাপ্তির পর ছাড়পত্র প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। জরিপে শতকরা ৫১ ভাগ শিল্প কারখানায় পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জরিপের আওতাভুক্ত শতকরা ৫৭ ভাগ শিল্পকারখানা/প্রকল্প কোনো প্রকার পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ছাড়াই পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছে। জরিপকৃত শিল্প কারখানার শতকরা ৬৬ ভাগ পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের বিভিন্ন পর্যায়ে (যেমন অনাপত্তিপত্র পাওয়া, অবস্থানগত ছাড়পত্র পাওয়া) যোগসাজশের মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন করে থাকে। পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের ক্ষেত্রে শ্রেণিভেদে সার্বিকভাবে সর্বনিম্ন ৩৬ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
টিআইবি বলছে, আমলা-নির্ভরতা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও নিরীক্ষায় ঘাটতি, পেশাগত দক্ষতার অভাবসহ পরিবেশ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের দুর্বলতার পাশাপাশি আইনের কার্যকর প্রয়োগেও ব্যর্থ হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের কার্যক্রমে সুশাসনের বিভিন্ন নির্দেশক যেমন- স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, জনসম্পৃক্ততা এবং কার্যকর সমন্বয়ে ঘাটতি বিদ্যমান। একদিকে সামর্থ্যরে ঘাটতি এবং অন্যদিকে সরকারের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রভাবিত হয়ে বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান গ্রহণে ঘাটতিই ব্যর্থতার মূল কারণ। এছাড়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সরকারি বিভিন্ন বড় উন্নয়ন প্রকল্প এবং শিল্প কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার কার্যক্রমের অংশ হওয়ার কথা থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের বিদ্যমান ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থতা লক্ষণীয়।
টিআইবি গবেষণায় পেয়েছে, পরিবেশ সংশ্লিষ্ট আইন, নীতি ও বিধিমালা প্রতিপালনে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ১ হাজার ১শ ৪১টি পদের বিপরীতে ৬শ ৭৬টি পদে লোকবল শূন্য। এ কারণে সদর দপ্তরসহ সব দপ্তরে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। অধিদপ্তরের কার্যক্রমে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ও রিমোট সেনসিং প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা হয়নি। ফলে ম্যানুয়ালি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় পরিবেশ অধিদপ্তর সঠিকভাবে দূষণের মাত্রা শনাক্ত করতে পারে না। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিবেশ অধিদপ্তরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়া সত্ত্বেও এ খাতে প্রতিষ্ঠানটি বরাদ্দের সম্পূর্ণ অংশ খরচ করতে পারে না। দেশের বৃহৎ প্রকল্পসহ (যেমন রামপাল, মাতারবাড়ি, পদ্মা সেতু ইত্যাদি) সব ধরনের প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না। ক্ষেত্রবিশেষে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পরিবেশগত বিপন্নতা ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে স্থানীয় জনগণের মতামত পরিবেশগত সমীক্ষাতে (আইইই, ইআইএ এবং এসআইএ) প্রতিফলিত হয় না। বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে দূষিত রাজধানীর তালিকায় ঢাকার অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে হলেও দূষণ বন্ধে অধিদপ্তর সুরক্ষামূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অভিযোগ আছে, ইটিপি থেকে নির্গত পানির মান সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয় না।
প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিদপ্তরের ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ’ প্রকল্পের অধীনে অযৌক্তিকভাবে একই কর্মকর্তার ১০ বারসহ ১০ বছরে মোট ২৯৩ জন কর্মকর্তার বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে ভ্রমণ বাবদ অর্থ অপচয় করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মীদের একাংশের ক্ষমতা অপব্যবহার করে এবং অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জরিমানার অর্থ মওকুফ করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। কারখানায় ইটিপির কার্যকরতা তদারকির সময় অধিদপ্তরের কর্মীদের একাংশের পারস্পরিক যোগসাজশে এবং নিয়মবহির্ভূত অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ইটিপি অচল/বন্ধ রাখা হয় ও জরিমানা করা হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় অন্যতম অন্তরায় হিসাবে প্রভাবশালীদের হুমকি, হস্তক্ষেপ এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ৫-এর যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় কৃষি ও উর্বর জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরি করা হচ্ছে। এতে মাটি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। আবাসিক এলাকায় শিল্প কারখানা স্থাপন না করার নির্দেশনা থাকলেও পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, সব শ্রেণির শিল্প কারখানার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে অনাপত্তিপত্র ছাড়াই পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র প্রদান করা হচ্ছে।