খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সহ ৯ ছাত্র বহিষ্কার
অপরাধ প্রতিবেদকঃ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সহ ৯ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও তথ্য শাখা থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সাময়িক বহিস্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান নাহিয়ান সেজান (রোল-১৩০৭০২৪), তাহামিদুল হক ইশরাক, সিই বিভাগ, রোল-১৫০১০৯০, সাদমান সাকিব, এলই বিভাগ, রোল-১৫১৯০৩৩, আ. স. ম. রাগিব আহসান মুন্না, এলই বিভাগ, রোল-১৫১৯০৪৮, মাহমুদুল হাসান, সিই বিভাগ, রোল-১৬০১০২৯, মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান, এমই বিভাগ, রোল-১৬০৫০৩৯, রিয়াজ খান নিলয়, সিএসই বিভাগ, রোল-১৬০৭০৭৫, ফয়সাল আহমেদ রিফাত, এমই বিভাগ, রোল-১৬০৫০৯৩, নাইমুর রহমান অন্তু, এমএসই বিভাগ, রোল-১৬২৭০১০।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার বিষয়টি গত ২ ও ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৭৬তম জরুরি সভায় উত্থাপন করা হলে সিসিটিভির ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি পর্যালোচনা করে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশৃঙ্খলা ও আচরণবিধির আলোকে অসদাচরণের আওতায় সিন্ডিকেট ৯ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)।
কুয়েটের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার জন্য ড. সেলিমকে চাপ দেন। ঘটনার দিন দাপ্তরিক কক্ষে অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হন তিনি। ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা শুরু করেন। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য ক্যাম্পাসের কাছে বাসায় যাওয়ার পর ২টায় তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে প্রফেসর ড. মো. সেলিমের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
প্রফেসর ড. মো. সেলি্মের মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে অপমৃত্যুর অভিযোগ এনে তার কফিন সহ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে বিচার চান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলার জোর দাবি জানান। প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই দিন রাতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ওই তদন্ত কমিটির দুইজন সদস্য তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করেন।
প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম। এছাড়া দুইজন সদস্য হলেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান ও ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার। তবে এদের মধ্যে থেকে অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার লিখিত ভাবে ও ড. মো. আরিফুল ইসলাম অলিখিত ভাবে তদন্ত করতে অপারগতা জানিয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটির এই দুই সদস্য ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ চালাতে বিব্রত বোধ করছেন।
শুক্রবার (০৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে দ্বিতীয় দফায় ৫ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদকে। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আলহাজ উদ্দিনকে। এছাড়া কুয়েটের অধ্যাপক ড. খন্দকার মাহবুব, খুলনা জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে কমিটিতে। নতুন এই তদন্ত কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন সহ সিন্ডিকেট সদস্যরা অংশ নেন। ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তাল হওয়ায় এ জরুরি সিন্ডিকেট সভার ডাক দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
৩ ডিসেম্বর দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর ৭টি আবাসিক হলে থাকা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হল ছাড়েন।