ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১শ ৫৪টিতে বিনা প্রতিদ্বিন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত
বিশেষ প্রতিবেদকঃ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী সদস্য, সাধারণ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার হিড়িক পড়েছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ১২১১ ইউপির মধ্যে ১৫৪টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৭৩ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে ৮১ জন নির্বাচিত হন।
এছাড়াও দুই ধাপে ইউপিগুলোর মধ্যে সাধারণ সদস্য পদে ২৭১ জন এবং সংরক্ষিত নারী সাধারণ সদস্য পদে ৮৮ জন প্রত্যক্ষ ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। তিনটি পদে এখন পর্যন্ত ৫১৩ জন নির্বাচিত। এর মধ্যে কুমিল্লার লাকসামের পাঁচটি ইউপির সবকয়টি পদে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে অন্য যে কোনো বারের চেয়ে এবার বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সব রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। কেননা দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, কোনো প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে কমিশনের কিছুই করার থাকে না। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন আয়োজনের। বর্তমান কমিশন সেই কাজটি করে যাচ্ছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৃণমূলের ইউপি নির্বাচনে বরাবরই রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে থাকে। কিন্তু ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার কারণে এখন অনেক যোগ্য রাজনীতিবিদ প্রার্থী হতে চান না। কারণ নির্বাচনে বরাবরই স্থানীয় প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ এবং প্রতিপক্ষের হয়রানির আশঙ্কা থেকেই প্রার্থী হন না। এই কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, ১২১১টি ইউপির ১৫৪ জন চেয়ারম্যান, ১০ হাজার ৮৯৯টি (প্রতি ইউপিতে ৯ জন করে সদস্য) সদস্য পদের মধ্যে ২৭১ জন এবং ৩ হাজার ৬৩৩টি (প্রতি ইউপিতে তিন জন করে সংরক্ষিত সদস্য) সংরক্ষিত সাধারণ সদস্যের মধ্যে ৮৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট ইউপিগুলোয় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ৩৬০ জন প্রার্থী ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, সংরক্ষিত নারী সাধারণ সদস্য পদে ৭৬ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে রয়েছেন ২০৩ জন। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত ৮১ জনের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনীত প্রার্থী।
এর আগে গত ২০ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই দফায় প্রথম ধাপে ৩৬৫টি ইউপির ভোট অনুষ্ঠিত হয়। গত ২০ জুন অনুষ্ঠিত ২০৪টি ইউপির মধ্যে ২৮ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এছাড়াও ভোট ছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য হিসাবে পাঁচ জন এবং সাধারণ সদস্য হিসাবে ২৯ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের স্থগিত ১৬১ ইউপির মধ্যে ৪৫ জন চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত সদস্য সাত জন এবং সাধারণ সদস্য ৪৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। অর্থাৎ প্রথম ধাপে জনগণের ভোটবিহীন ৭৩ জন চেয়ারম্যান, ১২ জন সংরক্ষিত সদস্য এবং ৬৮ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মোট তিনটি পদে ১৫৩ জন নির্বাচিত।
পাঁচটি ইউপির সবাই ভোট ছাড়া নির্বাচিত: কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পাঁচটি ইউপির সবকয়টিতেই ভোট ছাড়াই সব প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচনে একক প্রার্থী থাকায় ঐ পাঁচটি ইউপিতে ভোট করা লাগবে না।
পাঁচটি ইউপি হলো—লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড়, গোবিন্দপুর, উত্তরদা, আজগরা এবং লাকসাম পূর্ব।
এটিকে ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নজিরবিহীন ঘটনা বলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলছেন, ইউপি নির্বাচনে কখনোই এমন ঘটনা ঘটেনি। পাঁচটি ইউপির পাঁচ জন চেয়ারম্যান, ৪৫ জন সাধারণ সদস্য, ১৫ জন সংরক্ষিত সদস্য পদের সবাই নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা।