আদম ১৩ – শাহানা সিরাজী
হাওয়ার ভীষণ মন খারাপ
অনেক দিন আগেই সে নিজের জিহবা কেটে দেয়,চোখ -কান বন্ধ করে দেয়
কিন্তু আজ তার পরাণ ছটফট করছে
কিছু বলার জন্য
কিছু দেখার জন্য
কিছু শোনার জন্য
কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি নেমেছিলো
আকাশ তাকে হাতছানি দিচ্ছে
সে চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে আছে!
তার নিঃশব্দ দুনিয়া স্থির!
হাওয়া ভাবে, সবই তো কেটে -ঝেঁটে- বেঁধে দিলাম
মন কেন ওড়ে,মন কেন আকুলায়!
কার জন্য? কোন সে নিষ্ঠুরতমের জন্য!
হাওয়া হাত বাড়ায়
বৃষ্টির শীতলতা তার অনুভুতিতে ঝংকার তুলতে তুলতে থেমে যায়
না না! এতো রাম-রাজ্য নয়!
এখানে প্রাণের স্পন্দন থাকতে নেই!
তার বধির কান দু হাতে চেপে ধরে
বন্ধ চোখে আরো বেশি ছানি টেনে দেয়।
আদম ফিরেনি আজো ঘরে
দিঘির জলে পদ্মের বদলে বিষাক্ত শর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। হাওয়া দিলো ঝাঁপ
অমনি বিঁধে গেলো হাজার শরের বিষফলা!
হাওয়া নির্বিকার!
গন্ধমের স্বাদ সে না পেলেও আদম পেয়েছিলো
বুভুক্ষের মতো পান করেছে আর শিহরিত হয়েছে
সেদিন আদম এনে দিয়েছিলো শিউলির মালা!
হাওয়া জানতো কী সে মালা শুকিয়ে যাবে!
হাওয়া হিমালয়-কন্যা হয়ে যায়
তারপরই জেগে ওঠে হাজারো হাত!
নিজেকে চিনতে পারে না
একদল অচেনা লুটিয়ে পড়ে তার চরণে
ক্ষমা করো মাগো, একী তোমার রূপ!
ক্রোধোমত্ত আদমের তলোয়ার ফালা ফালা করে সেই দলকে
এখানে আমিই একমাত্র আমি
অন্য কেউ নয়!
বসুমতি কেঁপে ওঠে
চার দিক হতে উত্থিত হয় শাখের শব্দ
সমুদ্রে ভীষণ গর্জন…
আদম তৃপ্তির ঢেকুর তোলে
উপাসনায় বসে,ক্ষমা করো প্রভু হে,
ক্ষমা করো, হাওয়াকে আগের রূপে ফিরিয়ে দাও।
যতোবার জন্ম নেবো ততোবারই হাওয়াকে চাই-
ইশ্বর মৃদূ হাসে,লাস্যময়ী তো তোমারই ছিলো
তোমার জন্যই স্বর্গ ছেড়েছে!
তুমিই তাকে বিষশরে গেঁথেছো
এ শর খোলার দায়িত্ব তোমারই
হাওয়া সামনে চলতেই ভালোবাসে…
শাহানা সিরাজী
কবি,প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক।