আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম অনুসন্ধানে কমিটি – হাইকোর্ট
তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘অনিয়ম-দুর্নীতিতে’ ডুবতে বসার ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি দায় নিরূপণ করতে কমিটি করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ২০০২ সাল থেকে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়ও নিরূপণ করবে এ কমিটি।
বাংলাদেশের ব্যাংকের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের ‘কারণ উদঘাটন’ (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং) কমিটির সুপারিশ করা হলে তার সঙ্গে আরো দুইজন সদস্যকে যুক্ত করে মঙ্গলবার ( ২৩ ফেব্রুয়ারি) ৭ সদস্যের কমিটি চূড়ান্ত করে দেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানকে সভাপতি ও বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. সারোয়ার হোসেনকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্যরা হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক একেএম ফজলুর রহমান, ফাইনান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. কবির আহাম্মদ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪ এর মহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল আমীন। আর আদালত যে দুজনকে কমিটিতে যুক্ত করেছে, তারা হলেন- সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মহিদুল ইসলাম ও সাবেক সচিব নুরুর রহমান।
ওই তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। আদালত আদেশে বলেছে, এ তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের সাথে কমিটির কোনো সদস্য জড়িত থাকলে বা কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে সেই সদস্য দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন। এই কমিটি তদন্তের প্রয়োজনে এই তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
বিআইএফসির পরিচালনা পর্ষদ অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে বিদেশি অংশীদারি প্রতিষ্ঠান ‘টিজ মার্ট ইনকরপোরেটেড’ এর করা এক আবেদনে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেয় হাই কোর্টের এ কোম্পানি বেঞ্চ।
সেই আদেশের পর্যবেক্ষণে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তদারকির দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত কর্মকর্তাদের সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কথাও বলা হয় আদালতের পর্যবেক্ষণে। হাই কোর্ট মনে করে, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধান চালানো উচিত।
এই পর্যবেক্ষণের পরই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে গত সোমবার তা আদালতে দাখিল করে। তবে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) বিদেশি অংশীদার ‘টিজ মার্ট ইনকরপোরেটেডর আইনজীবী ওমর ফারুখ এ কমিটির বিষয়ে আপত্তি তোলেন আদালতে।
এরপর আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবিত কমিটির সাথে দুজন স্বাধীন-নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে যুক্ত করে কমিটি চূড়ান্ত করে দেয়। আদালতে বাংলাদেশের ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।