১৭ সোনার বার ছিনতাই নাটক অবসান, গ্রেফতার ১
জেলা প্রতিনিধিঃ অবশেষে রাজশাহীতে ১৭টি সোনার বার ছিনতাই নাটকের অবসান ঘটেছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় জড়িত নাটোরের বাগাতিপাড়া থানার জামনগর গ্রামের দ্বীনেশ ধরের ছেলে বর্তমানে পুঠিয়ার বাসিন্দা জিতেন ধরকে (৪৮) বোয়ালিয়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
আসামি জিতেনের বাড়ি থেকে পুলিশ কথিত ছিনতাই নাটকের ১৬টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে। আরেকটি স্বর্ণের বার তিনি ৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
গত ২১ ডিসেম্বর রাতে রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকায় প্রতিটি ১০ ভরি ওজনের ১৭টি স্বর্ণের বার (১৭০ ভরি) ছিনতাই নাটক সাজানো হয়েছিল। এ ঘটনায় স্বর্ণের মালিক দ্বিজেন ধর নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা করেন।
এরপর শুক্রবার বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ জিতেন ধরকে গ্রেফতার করে। এ বিষয়ে শনিবার আরএমপির সদর দপ্তরে আয়েজিত সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
আরএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, গ্রেফতার জিতেনের বড়ো ভাই দ্বিজেন ধর (৫০) ফেনীতে থাকেন। গত ২১ ডিসেম্বর তিনি ফেনীর দুটি জুয়েলার্স থেকে ১৭টি স্বর্ণের বার নিয়ে রাজশাহীর পুঠিয়ায় ভাই জিতেনের বাড়িতে আসেন। যার মূল্য প্রায় এক কোটি ১২ লাখ ৭১ লাখ টাকা। এরপর তিনি জিতেনকে স্বর্ণের বারগুলো রাখতে দেন। জিতেন একজন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। তিনি ওই স্বর্ণের বারগুলো আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন। এ জন্য তিনি বারের পরিবর্তে তিনটি সীসার রড কাগজে স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে স্বর্ণের বারের ব্যাগে রেখে দেন। আর আসল বারগুলো নিজের বাড়িতেই রেখে দেন।
পরে দ্বিজেন তার ভাই জিতেনকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহী শহরে জুয়েলার্সের দোকানে স্বর্ণের বার বিক্রি করতে আসেন। ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জিতেন আগে থেকেই ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে আসেন। জিতেন ও দ্বিজেন নগরীর শিরোইল এলাকায় পৌঁছামাত্র হঠাৎ দু’টি মোটরসাইকেল নিয়ে চারজন ব্যক্তি এসে নিজেদের ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয় দিয়ে তাদের হ্যান্ডকাপ দেখান। এরপর কারা জিতেনের কাছে থাকা ব্যাগ, মানিব্যাগ ও দু’টি মোবাইল কেড়ে নিয়ে চলে যায়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার জিতেন জানায়, ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছিলেন জিতেন নিজেই। তার পরিকল্পনা মোতাবেক মিজানুর রহমান মিজান ও মৃদুল নামের দুই ব্যক্তি পুঠিয়া থেকেই বাসের পেছনে পেছনে মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। তারা ব্যাগ ছিনতাইয়ের জন্য শহরে অন্য তিনজনকে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রস্তুত রাখেন। জিতেন ও দ্বিজেন বাস থেকে নামলেই সে তথ্য অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেন মিজান ও মৃদুল। এরপরই ব্যাগ কেড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আসল স্বর্ণগুলো জিতেনের বাড়িতেই ছিল। সেখান থেকে একটি বার আসামী নাটোর সদর থানার লালবাজার বাহাদুর শাহ মার্কেটের ‘বিনয় জুয়েলারী ও জুয়েলারী স্টোরে ৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় বিক্রয় করেছেন। জিতেনকে গ্রেফতারের সময় বাড়ি থেকে বাকি ১৬টি বার উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বোয়ালিয়া থানা পুলিশ ‘ক্লু-লেস’ ঘটনাটির রহস্য উদঘাটন করেছে।
এ ঘটনায় শুধু জিতেনকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। এখন তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।