সবারই ধর্মীয় উৎসব পালনের অধিকার – শাহানা সিরাজী

PicsArt_10-22-05.24.36.jpg

সবারই ধর্মীয় উৎসব পালনের অধিকার – শাহানা সিরাজী

সবারই ধর্মীয় উৎসব পালনের অধিকার রয়েছে। এমন কী ধর্ম পালন না করারও অধিকার রয়েছে। এটাই মানুষের মৌলিক অধিকার। কেউ যেন কাউকে আঘাত না করে।

একটি রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করতে পারে। আপনি বা আমি নিজেকে শ্রেষ্ঠ দাবী করে অন্য ধর্মের কাউকে হেয় করা,অন্য ধর্মকে অশ্রদ্ধা করা অসম্মা৷ন করা ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র জাতির জন্য সুফল বয়ে আনে না। আগে মানুষ। পরে ধর্ম
আগে বেঁচে থাকা পরে ধর্ম

আগে অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা পরে ধর্ম।
সে ধর্মানুযায়ী মানুষ তার ঘুম থেকে ওঠা থেকে ঘুমুতে যাওয়া পর্যন্ত সকল কাজ কর্ম করবে।

ইসলাম ধর্মের অনেক নান্দনিক দিক রয়েছে।সে সব জনসাধারণের কাছে যাদের তুলে ধরা দরকার তা কেউ তুলে না ধরে বরং এমন কিছু বিষয় মূর্খ মানবের মাঝে বিষকারে ছড়িয়ে দেয়া হয় যা উন্মাদনার সৃষ্টি করে। যা দ্বারা মানুষ সঠিক চেতনা হারিয়ে সুইসাইডিং স্কোয়াডে যোগদান করে কেবল জান্নাতের লোভে। অথচ জান্নাত তার মা- বাবা- আত্মীয়- স্বজন -পরিবার- প্রতিবেশীর ভেতরই লুকিয়ে রয়েছে। জান্নাত তার শব্দ চয়নের ভেতর লুকিয়ে রয়েছে। সে সবের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে এ পাস্পরিক দ্বন্দ্বের ভেতর জান্নাত খোঁজে। একটি শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে যখন আপনি সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন ঠিক তখনই জান্নাত পালায়। কারণ আপনি ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। কোরানে স্পষ্ট নির্দেশ আছে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

আমাদের সমাজ বহুসম্প্রদায়ভিত্তিক সমাজ। এখানে রাষ্ট্রীয় আইনে সকলের অধিকার সমান।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সার্বজনীন৷ আর প্রচলিত আইনে ধর্ম অবমাননা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷

রাষ্ট্র তার নিজস্ব সংবিধান অনুযায়ী চলে। তথাপিও প্রতিটি মানুষ যার যার ধর্মানুযায়ীই ব্যক্তিগত জীবন যাপন,বিয়ে, মৃত্যুর পর সৎকার স্ব স্ব ধর্মানুযায়ীই করে। এখানে রাষ্ট্র বাধা দেয় না। সামাজিক জীবনে, সঙ্ঘবদ্ধভাবে চলা,ব্যবসা-বাণিজ্য,অর্থনীতি, রাজনীতি,সামাজিক সুশাসনে রাষ্ট্র বিধিবিধান আরোপ করে। সামাজিক জীবনে আপনি কেবল একটি রাষ্ট্রের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র আপনাকে সকল সুযোগ সুবিধা দিতে,মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বাধ্য। কারণ আপনি রাষ্ট্রকেই প্রতিনিধিত্ব করেন।

রাষ্ট্র আপনার ব্যক্তিগত লাইফে এতো হস্তক্ষেপ করে না যতোক্ষণ পর্যন্ত আপনার কৃতকর্ম অন্যের,সমাজের এবং রাষ্ট্রের জন্য হুমকী স্বরূপ না দাঁড়ায়!

তাহলে আগেই জানতে হবে –
আমি কী কী করতে পারবো, কী কী করতে পারবো না।
সংবিধান সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার থাকতে হবে।
আপনি মুসলিম,আপনাকে আপনার ধর্ম বলে তোমরা গোমরাহী করো না,অন্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে আত্মীয়তা করো না। বেশ তো আপনি মেনেই চলিন। কী ঠেকা আত্মীয়তা করার। করলে রাষ্ট্র আপনাকে বাধা দেবে না।কারণ এটা আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ।
আপনার ধর্মীয় চিন্তাকে আপনি অগ্রাহ্য করলেন মাত্র! এতে সমাজের কারো কোন ক্ষতি হয়নি।
কিন্তু আপনি যদি কারো ধর্মীয় উপাসনালয়্র আঘাত করেন তখন আপনাকে ঠেঙিয়ে জেলে ঢুকানো রাষ্ট্রের কর্তব্য, আপনি সামাজিক শান্তি সংহতি নষ্ট করছেন। সে অধিকার আপনার নেই। রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত বিধি বিধান আপনাকে মানতেই হব্র। এটা আনুগত্য। আনুগত্য না থাকলে আপনি নাগরিক হতেও পারেন না!#

বাংলাদেশের সংবিধানের ২ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত কর সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে –

(১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে

(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে

(২) কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোনো ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোনো ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না

সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং ১২ অনুচ্ছেদ ধর্ম নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে৷ সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল – জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে৷” তাই সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির চতুর্থ নীতিটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতা৷

সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা’-র ব্যাপারে বলা হয়েছে, ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য –

(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,

(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,

(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,

(ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে৷

সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি ধর্মের মানুষের স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে।

প্রতি বছর শারদীয় দুর্গাপূজার সময় প্রতিমা ভাঙচূরের ঘটনা ঘটে। কেন ঘটে? কারা ঘটায়?

কোন স্কুল- কলেজ- মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এগুলো করে?
উত্তর সম্ভবত না।
কিছু উচ্ছৃঙ্খল, যারা প্রকৃতার্থে নিজ ধর্মের আলোর(…..) সন্ধান পায়নি তারাই কুচক্রি। অন্যের অনুভূতিতে আঘাত করে।

আপনি যেমন নিরাকারে বিশ্বাস করেন তারাও তাই করে।আপনার অন্তরেও একটি মূর্তি থাকে, আপনিও আপনার নিরাকারকে কোন না কোন ভাবেই নিজের ভ্বতর লালন করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ও তাদের ইশ্বসরের বিভিন্ন প্রতিরূপ নিজেদের ভেতর অঙ্কন করে মূর্তিতে রূপ দেয়। আপনি কে সে সব ভেঙে দেয়ার? আপনি কে সে সব নিয়ে কটাক্ষ করার? আপনার বিশ্বাসকেও কেউ যেমন কটাক্ষ করতে পারে না,আপনিও পারেন না।

এতে শান্তি নষ্ট হয়,ফ্যাসাদ তৈরি হয়। পারস্পরিক অসম্মান অভক্তি আসে। সামাজিক কারণ যেতে হয় পূজার অনুষ্ঠানে, তাদেরকেও আসতে হয় ইদের সেমাই চিনির টেবিলে। তারা তো বলেনি আমাদের দূর্গাকে তোমরা পূজা করো,বলেছে কী?

কিন্তু তাদের আনন্দের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে পারি। তারাও পারে আমাদের ইদানন্দে একাত্মতা ঘোষণা করতে। এরে সামাজিক সম্পর্ক মজবুত হয়। আপনি যদি মনে করেন আপনার ধর্মই সেরা আর সব ভূয়া তাহলে আপনার ইহকাল পরকাল সবই ভূয়া। আপনার জন্মের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। আপনার মৃত্যুর উপরও নেই। আপনি যদি সেরা ধর্মের অনুসারী হোন তাহলে মানবতার কল্যাণে ব্রতী হোন। মানুষ আপনাকেই আপনাকে গ্রহণ করবে। যেমন করে মুহাম্মদ (স)কে গ্রহণ করেছে।
জোর নয়, মেরে ফেলা নয় বরং অন্তরের আলাও ছড়ান। আপনি তাদের মূর্তি ভাঙেন,জায়গা দখল করেন,য়াদের মেয়েকে হহর থেকে টেনে নিয়ে যান, মিয়ানমারে রক্তারক্তি, গুজরাটে রক্তারক্তি এতো সব কো৷ ধর্মে বিলা আছে?
ইসলামে তো এই সব নিষিদ্ধ। শিশু ইসলামের জন্য যা করেছে প্রতিষ্ঠিত ইসলামের জন্য তাও দরকার নেই।

৫৭ ধারা অনুযায়ী আপনি যেই হোন আপনাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া সম্ভব। সুতরাং সাবধান! কোন রূপ ঝামেলা করবেন না। স্ব স্ব ধর্ম পালন করুন।
কেউ না করতে চাইলে তাকেও আপনি জোর করতে পারেন না…

সুতরাং আসুন আমরা মিলে মিশে শ্রদ্ধায় সম্মানে ভালো লাগায় একে অপরের সাথে বন্ধন দৃঢ করি। আমার আব্বা মাওলানা ছিলেন। কিন্তু উতল বাবু স্যার,নীহার কান্তি স্যার,স্বপন বাবু স্যারকে কখনো অসম্মান করতে দেখিনি। উলটো বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে উনাদের জন্য আলাদা ভাবে রান্না করে যেভাবে উনারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সে ভাবেই আথিতেতা করেছেন।

কঙ্কাবতী দিদি,রীনা হোড় দিদি,রীনা সাহা দিদি পল্লব দাদা সহ সকল হিন্দু নাগরিকের জন্য শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা রইলো।

শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ)
পিটিআই মুন্সীগঞ্জ
কবি প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top