ধর্মের লেবাস নিয়ে ধর্ষণ – শাহানা সিরাজী

PicsArt_10-06-11.28.22.jpg

ধর্মের লেবাস নিয়ে ধর্ষণ

ধর্ষণ শব্দটিই অরুচিকর । এ শব্দটিই মানবতা বিরোধী। যৌনতা প্রতিটি প্রাণী জগতেই আছে । প্রকৃতি তাঁর নিজের খেয়ালেই এর বিস্তার করেছে সমস্ত জীব জগতে। আমরা জানি উদ্ভিদেরও পরাগায়ন লাগে বংশ বৃদ্ধির জন্য। প্রাণীর ক্ষেত্রেও বংশ বৃদ্ধিই যৌনতার মূল লক্ষ্য। অন্যান্য প্রাণীর যৌনতা সীমিত হলেও এবং একমাত্র লক্ষ্য বংশ বৃদ্ধি হলেও মানুষের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। মানুষের মৌলিক চাহিদা হলো আহার- বিহার-আরাম। আহারের সংস্থানের জন্য চাকুরি, ব্যবসা -বাণিজ্য ইত্যাদি নানা পেশায় আমরা নিয়োজিত থাকি। আহার তো হলো , এবার বিহার? আহার অণ্বেষণে যেমন আমাদেরকে কাঠামোর ভেতর থাকতে হয় তেমনি বিহারকেও করেছে শৃঙ্খলিত। মানুষ যেহেতু উচ্চ এবং উন্নত বুদ্ধি সম্পন্ন সেহেতু ধীরে ধীরে তাঁরা নিজের প্রয়োজনে, সমাজের প্রয়োজনে কিছু আইন এবং অডিনেন্স তৈরি করে নিয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম ধর্ম। আমরা ধর্মকে মনে করি বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। দৈনন্দিন কাজে আমরা কে কতোটুকু যাবো – এ নির্দেশনা ধর্ম থেকেই পাই। ধর্মীয় গুরু, মাওলানা, ঠাকুর, ভিক্ষু,পাদ্রীর কথা আমরা যে কোন মূল্যে বিশ্বাস করি। ধর্মকে আমরা ভয় পাই। কারণ ধর্মই বলে দিয়েছে একজন নর-নারী কার সাথে কী ভাবে কখন তাঁর বিহারের আয়োজন করবে।
ইসলাম সাত জন নারীকে পুরুষের জন্য এবং একই প্রকার পুরুষদের নারীর জন্য হারাম করেছে। মা –বোন, খালা, ফুফু, দাদী, নানী , কন্যাকে করেছে পুরুষের জন্য হারাম। একই ভাবে বাবা-ভাই-পুত্র- চাচা- মামা -দাদা -নানাকে করেছে নারীর জন্য হারাম। বাদবাকি সব পরস্পরের জন্য বৈধ। ইসলামে যৌনতা অবশ্যই করণীয় একটি কর্ম। এ ধর্মে সন্ন্যাসীর স্থান নেই, একাধারে চার মাসের বেশী স্ত্রীকে কাছে না রাখলে স্ত্রী আলাদা হয়ে যাবার অধিকার রাখে। কোন নারী যদি স্বামীর সাথে একসাথে রাতে একই বিছানায় না থাকে তাহলে ফেরেশাতারা সারা রাত সে নারীকে লানত দেয়। আবার স্বামীর জন্যও বলা হয়েছে স্ত্রী তৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে আনন্দ দিতেই হবে। এ রকম অনেক হুঁশিয়ারি আছে পস্পরের জন্য।
ইসলাম যৌনতাকে যেমন অবশ্যই করণীয় কর্মের ভেতর রেখেছে তেমনি এর জন্য ইসলাম স্বীকৃত পন্থাও রয়েছে। যৌনতার জন্য বৈবাহিক সম্পর্ক বাধ্যতামূলক। বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে যৌনাচারকে হারাম এবং গর্হিত অপরাধ করা হয়েছে যার এক মাত্র শাস্তি গর্দান কেটে ফেলা । এ ধর্মে সন্ন্যাসের কোন স্থান নেই। ইসলাম যৌনাচারকে প্রাত্যহিক জীবনের অনুসঙ্গ হিসেবেই অনুমতি দিয়েছে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এটিকে মানুষের জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছে। সাথে এ সম্পর্কে বিধি বিধান দিয়েছে।
ইসলামী আইন অনুসারে, বিবাহের মাধ্যমে স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যকার শারীরিক সম্পর্ক বা যৌন মিলন বৈধ করা হয়েছে এবং দৈহিক ও মানসিক যৌন চাহিদা পূরণের জন্য বিবাহের প্রতি ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলামে বৈবাহিক সম্পর্ককে আবেগীয় অথবা প্রজনন প্রক্রিয়ায় সীমিত রাখা হয় নি, বরং ইসলামে বিবাহকে এজন্য ব্যপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে যে, এটি কোন ব্যক্তির যৌন চাহিদা পূরণের জন্য বৈধ প্রতিষ্ঠানের জোগান দেয়। ইসলামে যৌনতাকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত পরিসরের নীতিমালা দেয়া হয়েছে; যাই হোক,কুরআন ও হাদিসে বিবাহের চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের মাঝে সীমাবদ্ধ যৌনতার বহু নীতিমালার সূত্র প্রদান করা হয়েছে, যেগুলো মানবজাতির কল্যাণ ও তাদের প্রাকৃতিক যৌন প্রবণতাকে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করে। সূরা বাকারায় (২ঃ২২২) বৈবাহিক জীবনে যৌনতাকে সরাসরি অনুমোদন দেয়া হয়েছে:
“যখন তারা [স্ত্রীরা] তাদের নিজেদের রজঃস্রাব হতে পরিচ্ছন্ন করে নেয়, তখন তোমরা তাদের সাথে সম্মিলিত হও যেভাবে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।”
— (২ঃ২২২)
বলা হয়েছে যে:
“যারা তাদের সতীত্বকে (গোপন অঙ্গকে, অবৈধ যৌন কর্মকাণ্ড থেকে) নিরাপত্তা দেয় তাদের স্ত্রীর বা যা তাদের যা তাদের হাত ধারণ করে (যুদ্ধবন্দী ও দাসীগণ) তাদের হতে ব্যতীত, তারা দোষারোপ হতে মুক্ত।”
— (মমিনুন ২৩ঃ৫-৬)
পাশাপাশি, হাদিসের উৎসও বিবাহের মাধ্যমে বৈধপন্থায় যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণের স্বীকৃত মর্যাদাকে অনুরূপভাবে ব্যাখ্যা করেছে। ওয়াসায়লুশ শিয়া নামক শিয়াদের হাদীস গ্রন্থে সাহাবীদেরদের বিবাহে উৎসাহিতকরণের উদ্দেশ্যে বলা মুহাম্মাদের বানীকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, যা হল:
“হে যুবক পুরুষেরা, আমি তোমাদেরকে বিয়ে করার পরামর্শ দিচ্ছি।”
— ওয়াসায়লুশ শিয়া (vol. 14, p. 25)
এছাড়া হাদীসে আছে
“হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যাদের বিয়ে করার সামর্থ আছে তাদের উচিত বিয়ে করা; এটি দৃষ্টিকে নত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। আর যাদের বিয়ে করার সামর্থ নেই তারা যেন রোজা রাখে, কেননা তা যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করে।”
— (বুখারী, মুসলিম)

খ্রিস্টান, মুসলিম এবং ইহুদী এ তিনটি প্রধান পাশ্চাত্য ধর্মই একমত যে বিয়ের আগে সহবাস করা নিষিদ্ধ। বিবাহ একটি পরিবার তৈরি করার স্বার্থে। তিনটি ধর্মেই একটি পবিত্র অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহ শুরু হয়। ধর্ম পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তার উপাদানগুলির জীবন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
বাইবেলের সময়ে কেবল ইস্রায়েলের রাজাদেরই উপপত্নীদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। উপপত্নী বিবাহ ছাড়াই একজন মহিলা সঙ্গী। একটি উপপত্নী যদি সঠিক উপায়ে করা হয় তবে মহিলার বিবাহের সমস্ত বাধ্যবাধকতার সাথে তার উপপত্নী স্ত্রীকে গ্রহণ করা উচিত, যদি সে তার পুরুষের কাছ থেকে পৃথক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে তা বিবাহবিচ্ছেদের প্রয়োজন হয় না। অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক শুরু করার আগে মহিলাকে অবশ্য তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। বিবাহিত মহিলাকে তিন মাসের জন্য বিবাহ বিচ্ছেদের পরেও এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয় যে তিনি যদি গর্ভবতী হন তবে গর্ভধারণের চিহ্ন না থাকার কারণে নির্ধারিত হয় যে পিতার পরিচয় জানা যায়। ইহুদি বিবাহের জন্য কেতুবা নামক একটি বিবাহ চুক্তিতে স্বাক্ষর করা দরকার যা মূসা এবং ইস্রায়েলের আইন অনুসারে পুরুষ এবং মহিলাকে বাধ্য করে। কনকউবাইনগুলি বিবাহ ও চুক্তির দায়বদ্ধতাগুলি যৌন এবং আর্থিক বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত থাকে। বিবাহের ক্ষেত্রে দুটি পক্ষই তাদের সন্তানের স্বার্থে আইনত এক হয়। উপপত্নী সম্পর্কের মধ্যে প্রত্যেকেই একটি মুক্ত আত্মা।
একটি উপপত্নী সম্পর্ক কখনও কখনও মেয়ে বন্ধু বলা হয়। তিনটি প্রধান ধর্মই সকলেই একমত যে কোনও মেয়ে বন্ধুর সাথে সহবাস করা নিষিদ্ধ। বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে যে যুবকরা গোঁড়া ধর্মাবলম্বী নন তারা জুনিয়র হাই স্কুল বা উচ্চ বিদ্যালয়ে অল্প বয়সে বিপরীত লিঙ্গের সাথে সামাজিকীকরণ শুরু করে। সামাজিকীকরণ এই দম্পতিদের মধ্যে যোগাযোগের দিকে পরিচালিত করে যার ফলে লিঙ্গ হতে পারে। এইভাবে মেয়ে বা ছেলে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্কে তাদের প্রথম অভিজ্ঞতা অর্জন করে। গোঁড়া ধর্মাবলম্বীরা তাদের বিয়ের সময় কুমারী হওয়া উচিত বলে মেয়েদের উপর নজর রাখে। ইহুদী ধর্মে বিবাহ চুক্তি লেখার ক্ষেত্রে কুমারীটির আরও মূল্য থাকে। বিবাহ বিচ্ছেদে শেষ হলে তিনি দ্বিগুণ প্রতিদান পান। বিবাহ যখন দুটি কুমারী দিয়ে শুরু হয় তখন পুরুষ ও স্ত্রী এটির আরও শক্তিশালী সূচনা হয়, একটি দৃঢ় বন্ধন।
দেখা যায় ইসলাম, খ্রিস্ট ,ইয়াহুদী তিনটি ধর্মই যৌনাচারের জন্য বিবাহকে গুরুত্ব দিয়েছে। এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে পাপ বলে চিহ্নিত করেছে সেই সাথে এর জন্য শাস্তিও ঘোষণা করেছে।
হিন্দুধর্মে যৌনতা অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সহজাত। ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ -এই চারটে প্রেক্ষিত স্পর্শ না করলে জীবনের বোধ বৃত্ত সম্পুর্ন হয় না- এটা হিন্দু মননের বীজ মন্ত্র।
1।ভগবান শব্দের একটি অন্যতম উৎপত্তি ভগ অর্থাৎ ছয় টি গুন আছে যার-ভগ যুক্ত বতুপ প্রত্যয়।সেই ছয়টি গুনে র একটি অন্যতম শৃঙ্গার।
2। হিন্দু দর্শনে যৌনতা ও একটা কর্ম।রমন তথা কাম না থাকলে সন্তান আসবে না।সন্তান না হলে পূর্বপুরুষকে শ্রাদ্ধ মন্ত্রে যে আশ্বাস অনুজ দিয়ে থাকেন যে তোমার আত্মার পুনরায় পিতৃ লোক থেকে ফিরে আসার জন্য একটি শরীর অর্থাৎ প্রাণে র ব্যবস্থা করবো আমি -সেই কথার ও খেলাপ হবে। পিতর নামের সেই নরক থেকে যে মুক্তি ঘটায় সেই পুত্র অর্থাৎ “ধরায় প্রাণের খেলা চির তরঙ্গিত” -র যে বৃত্ত সেটা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। তাই যৌনতা শুধু অশোভন স্বেচ্ছা সুখ নয় – জীবনের একটি দরকারি প্রকোষ্ঠ
3। মহাভারতের আদিপর্বে জরাতকারু মুনির গল্পে এই একই দর্শন বোঝানো হয়েছে যেখানে বলা হয় তার পূর্বপুরুষ রা মাথা উল্টো করে ঝুলছিলেন যেহেতু মুনি ছিলেন ব্রহ্মাচারী।
4। ইন্দ্রপ্রস্থে সিংহাসনে বসে নতুন রাজা যুধিষ্ঠির। নারদ এসে প্রথম প্রশ্ন করলেন – ” মহারাজ ধর্মের সাথে সাথে জীবনে কাম -ও আছে তো?” এতটাই গুরুত্বপূর্ন যৌনতা হিন্দু শাস্ত্রে।
যৌনতাকে পৃথিবীর কোন শাস্ত্রই অস্বীকার করেনি বরং প্রয়োজনীয়, স্বর্গীয় বলে অবিহিত করা হয়েছে। সেই সাথে যৌনতা হবে সমাজ স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
ইসলামিক আইন যারা ধারণ করে বলে দাবী করে কারা কী ভাবে অবৈধ যৌনাচার এবং ধর্ষণের মতো কাজ করে! আমরা সাধারণত আরবী ভাষা, আরবী জোব্বফ ,দাড়ি,টুপি পাগড়ি এ ধরণের পোশাকে যারা সজ্জিত হয় তাদেরকে শ্রদ্ধা সম্মান, ভক্তি আপনা থেকেই করি। তারা ধর্মীয় লেবাসে আছে। তাঁরা ধর্মের কথা বলে। মানুষ তাঁদের কথাকে শিরোধার্য করে নেয়।

আমার কথা ঠিক ততোটাই মানুষ ইগনোর করবে যতটাই করা যায়! কিন্তু একজন লেবাসধারী হয়তো দুই জামাত নয় তো পাঁচ জামাত পড়েছে তাঁর কথা কিন্তু বাংলা- ইংরেজী শিক্ষিত মাস্টার্স পাস মানুষটিও শুনবে। কারণ বেহেশত –দোজখের ভয়! কতো অনায়াসে মানুষ এই মানুষগুলোকে বিশ্বাস করে! গাছেরর প্রথম ফল , পুকুরের প্রথম মাছ, মুরগীর প্রথম ডিম সব তো এই লেবাসধারী হুজুর নামের লোকেরাই খায়। একজন লেবাসধারি লোক দেখলে এ বাংলার অশিক্ষিত, শিক্ষিত, ধর্মভীরু মানুষগুলো তাঁদের সন্তানকে পরকালের আশায়, জান্নাত লাভের আশায় এদের হাতে তুলে দেয়। নারী সন্তান, পুরুষ সন্তান সে যাই হোক মানুষ পরকালের চিন্তায় মশগুল থেকে এদের বিশ্বাস করে। কিন্তু কী অদ্ভুত হাবে তাঁরা মানুষের এ ইমুশান নিয়ে খেলা করে! আমি বলছি না সবাই করে কিন্তু যারা করে তাঁরা কী ভাবে পারে! মানুষের আবেগ, ভালো লাগার, বিশ্বাসের জায়গা নিয়ে তাঁরা কী ভাবে খেলে! আমরা দেখেছি ফেনীতে নূসরাত জীবন দিয়ে তাঁর প্রতিবাদ করেছে । সেই অধ্যক্ষ দু জামাত পড়ুয়া লোক নয়। সে ছিলো পুরোই নারীখেকো বাটপার সে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ অবস্থা দেখুন, দারুল হুদা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মোস্তাফিজুর রহমান যার বয়স ২৯ সে দোযখ, আখেরাত, বেহেশত এসব ভয় দেখিয়ে ১১ জন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছে। কী আশ্চর্য শিক্ষার্থীরা কী অকপটে , কী বিশ্বাসে অধ্যক্ষের কথা শুনেছে! হায়! বেহেশত, তুই এত সোজা!

২৯ বছর বয়সের একজন যুবকের নারী সার্বক্ষণিক দরকার। সে ইসলাম স্বীকৃত উপায়ে বিয়ে না করে কেন ইসলামের নামে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে? সাধারণ মানুষ যারা ধর্মের গভীরে প্রবেশ করে না, তাঁরা ধর্মের সত্য মিথ্যা এই মুফতী মোস্তাফিজ নামক জালিমদের থেকে শোনে বোঝে শিখে। এই খারাপ লোকটির এমন বিশ্রী আচরণে মানুষ ইসলামকে যেমন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে তেমনি প্রকৃত আলেম যারা সত্যিকার অর্থে ধর্মকেই ধারণ করে আছে তাদেরকেও ঘৃণা করবে। তাঁর চেয়ে জরুরী ধর্ষিতা নারীশিশুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। কারন সাইকোলজীর মতে সেকেন্ডারি পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের যৌনতা সম্পর্কে কিউরিসিটি থাকে কিন্তু ব্যাপারটি আসলে কী, কেন করা হয়, এর সুফল কী কুফল কী, দেহের জন্য মনের জন্য কতটুকু প্রয়োজন তা তাঁরা জানে না। কোমলমতী শিশুরা কখনো হোস্টেলে, কখনো স্কুলে, কখনো মাদ্রাসায়, আড়ালে আবড়ালে বয়স্ক মানুষ, শিক্ষক, হুজুর, বাবা- চাচা- মামা- প্রতিবেশি, কোচিং সেন্টারে নানা ভাবে নির্যাতিত হচ্ছেই। সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনাটি আমাকে ব্যথিত করেছে। কারণ মোস্তাফিজ যেমন বেহেশতের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে তেমনি কলেজের ছাত্র যারা হবে মানবতাবাদী, যাদের কাছে দুনিয়ার সব কিছুর উপরে থাকা দরকার মানবতা, নারী নয়, পুরুষ নয় শুধু মাত্র মানুষ, তারাও নির্মম অত্যাচার করে মেয়েটিকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দিলো।
নোয়াখালীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আরো বিশ্রী। একজন নারী যে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করে চলতে চায় তাকে কী ভাবে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করলো! পার্বত্য এলাকায় মানসিক অসুস্থ মেয়েটিকে বাবা মায়ের সামনে কেমন করে পাশবিক অত্যাচার করলো!-এসব দেখে মনে হয় আমরা একটি অন্ধকার যুগে বাস করছি। আমাদের রাষ্ট্র নেই, আইন নেই, শাসন নেই এমন কী ধর্মও নেই!
প্রতিদিন কোথাও না কোথাও শুধু নারী শিশু নয় ছেলে শিশুগুলোও নির্যাতনে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। পুরুষেরাও জানে তারাও নির্যাতনের ভেতর দিয়েই বেড়ে উঠছে। সেখানে একই অপরাধ নারীরাও করে আসছে। এ সব থেকে পরত্রাণের উপায় কী?

যৌনতা নিয়ে আমাদের পরিবার সমাজ কথা বলতে নারাজ। বাব-মা সন্তানকে যৌনতা সম্পর্কে ক্লিয়ার কোন ধারণা দেবেই না। এমন কী যৌনতা শব্দটি উচ্চারণ করে একাশিবার জিব কাটে, দাঁত দিয়ে হাত পায়ের বিশ আঙুল কাটে! কারন মহাপাতকী হয়ে গেছে! অথচ বসবাস করে ভুল যৌনতার ভেতর। তাই রাষ্ট্রের উচিত স্কুল থেকেই যৌনতার শিক্ষা শিক্ষার্থীর বয়স মেধা সামর্থ অনুযায়ী দেয়া। মানবতার চর্চ্চা করা। নর-নারীর সম্পর্ক যে অত্যন্ত সম্মানের সে সম্পর্কে ধারনা দেয়া, নারী শিক্ষা শুধু নয় বরং শিল্প সংস্কৃতির পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করা। উদার মানসিকতা নিয়ে যাতে শিশুরা বেড়ে উঠতে পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখা। ধর্মীয় ব্যাপারটি শুধুমাত্র কিছু বাহ্যিক ব্যাপারের ভেতর সীমাবদ্ধ না রেখে যেহেতু আমাদের ধর্মগ্রন্থ আরবী ভাষায় রচিত , ধর্ম বেত্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্ম গ্রন্থ আরবীতেই পড়তে হবে সেহেতু আরবী ভাষা বাধ্যতামূলক স্কুল কলেজ সর্বত্রই চালু করা। কারণ ধর্মগ্রন্থ একটি প্রেসক্রিপশন । এটিকে মুখস্ত না করে বুঝে পড়ুক।
পরিস্থিতি মুকাবিলা না করলে অভিজ্ঞতা হয় না এটা যেমন সত্য তেমনই কিছু পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিবার পূর্বাহ্নেই সন্তানকে সতর্ক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ধর্মগুরুরাই ভালো ভূমিকা পালন করা উচিত।
যৌনতা যেমনি এসেনশিয়াল তেমনি এর ব্যবহার বিধি বা আচরণ বিধিও রয়েছে। রাষ্ট্রের উচিত কোন নাগরিক যদি ধর্ষণ করে সাথে সাথেই তাকে শাস্তির আওতায় আনা। কারণ মানুষের মূল্যবোধ পরিবার- সমাজ- ধর্ম- রাজনীতি- শিল্প সাহিত্য সব কিছু দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই শুধুমাত্র একটা সাইড দিয়ে মূল্যবোধ অর্জন করা যায় না। মানুষ প্রাণীকূলের ভেতর উচ বুদ্ধি সম্পন্ন । কাজেই তাঁকে উচ্চ আচরণ করতে হবে। এ আচরণ একদিনে পরিবর্তন হয় না। দীর্ঘ দিনের অনুশীলনের মাধ্যমে পরিশীলিত আচরণ রপ্ত করতে পারে। এজন্য ন্যায় ও ন্যায্য বিচার এবং দ্রুতগতিতে বিচার করতে হবে। রাষ্ট্রীয় কাঠামো জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে । দেশে প্রতিনিয়ত শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই নানা ভাবে নানা মানুষ দ্বারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে অনেক সময় ঝামেলা চুকানো, বিয়ে দিয়ে দেয়া, জরিমানা করা ইত্যাদি করে আসছে। এ সব ধর্ষণের কিছু আছে কিশোর অপরাধ, কিছু গ্যাং অপরাধ, কিছু বিকৃত লালসাজনিত অপরাধ। রাষ্ট্র আইনের প্রয়োগ যথাযথ ভাবে করলে মানুষের ভেতর কিছুটা হলেও ভয় থাকতো। সে ভয় থেকেই তৈরি হতো পরিশীলিত আচরণের মতো পজেটিভ চিন্তা। আইনের প্রয়োগের মাধ্যমেও মানুষ মূল্যবোধ অর্জন করে। এ ছাড়া উপযুক্ত বয়স হলে বাবা মায়ের উচিত ছেলেমেয়েদের পার্টনারের ব্যবস্থা করে দেয়া। লেবাসধারী দেখলেই বিশ্বাস না করা, শিক্ষক হোক আর যেই হোক একা একা এমনকি ছেলে শিশুদেরকেও কারো কাছে না দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক মুভমেন্ট এখন সময়ের দাবী। হয়তো আমাদের ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগর নেই, হয়ত রাজা রামমোহন রায় নেই আমাদের আছে শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুতনয়া, আমাদের আছে রাজনীতিবিদেরা। তাদের সন্তান আছে, স্ত্রী, কন্যা আছে তাঁরা তাঁদের নিজেদের প্রয়োজনেই এ সামাজিক মুভমেন্ট করা জরুরী। দেশের যুব সমাজ তথা পুরুষ সমাজ ( ভালো অবশ্যই আছে) যে ভাবে ধর্ষণ ,যৌতুক একাধিক বিয়ে ইত্যাদি বিষয়ে নারীর উপর হামলা করছে অচিরেই তা রাজনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে ভয়ানক বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। আজ পাহাড়ী মেয়েকে ধর্ষণ করলো আপনার সন্তান মনে রাখবেন কাল সে আপনাকেই করবে। কারণ নীতি নৈতিকতা লজ্জা শরম এসব উঠে যাবে তাঁর। কার কাছে মূখ্য হয়ে উঠবে তাঁর উদ্যত শিশ্ন! আপনি তখন মা নন কেবলই একজন নারী হয়ে তাঁর সামনে উপস্থিত হবেন। এ দিনের কথা ভেবে দেখুন , কেমন লাগবে!

অন্য যারা অন্যায় করছে তাদেরটা যতোটা অন্যায় তারও বেশি অন্যায় মাদ্রাসার হুজুর-শিক্ষক- মুফতী এ সব লোকের। এরা জেনে শুনে পাপ করছে, এরা লেবাসধরে পাপ করছে, এরা মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছে। এরা সত্য এবং মিথ্যার মাঝে প্রভেদ রাখছে না, এরা সবার সামনেই অন্যায় ফতোয়া দিয়ে নিজেকে পাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করে। সুতরাং সিলেটের ঘটনায় অপরাধীদের যদি একবার মৃত্যুদণ্ড হয় তবে সিরাজ-মোস্তাফিজদের চৌদ্দবার গর্দান নেয়া দরকার। এরা শুধু ধর্ষণই করেনি এরা ইসলামের আলোকে কালো বানিয়ে পৃথিবীর সামনে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। কোন নারি আর পুরুষ যদি ভালোবেসে একসাথে থাকতে চায় এরাই ফতোয়া দেবে হারাম !হারাম! কিন্তু কী নির্ভয়ে বেহেশত দোযখের ভয় দেখিয়ে অন্যায় করে যাচ্ছে। অন্ধ সমাজের চোখে ছাই পড়ুক!

খ্রিস্ট ধর্মে পাদ্রী, পোপ হিন্দু ধর্মে ঠাকুর , বৌদ্ধ ধর্মে ভিক্ষু – এরা সাধারণের চোখে অসামান্য মানুষ । যে কোন অনুষ্ঠানে যে কোন সামাজিক ধর্মীয় কাজে এরাই অগ্রগণ্য । এদের আমরা চেয়ার ছেড়ে দিই এরাও পারে না নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে, তাই পাদ্রীরা নান, সিস্টার এদেরকে দাসীর মত ব্যবহার করে । রাজশাহীর তানোর উপজেলার এক গীর্জায় একজন কিশোরিকে আটকে রেখে টানা তিন দিন ধর্ষণ করে ফাদার প্রদীপ গ্রেগরি।
মন্দিরে দুই মহিলাকে আটকে রেখে লাগাতার ধর্ষণের অভিযোগ উঠল প্রধান পুরোহিতের বিরুদ্ধে। পাঞ্জাবের অমৃতসরে অভিযুক্ত প্রধান পুরোহিত-সহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দিনের পর দিন অমৃতসরের লোপোকে থানার গুরু জ্ঞাননাথ আশ্রম বাল্মীকি তীর্থে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন দুই মহিলা। সম্প্রতি নির্যাতিতা ওই দুই মহিলা পাঞ্জাবের তফশিলি কমিশনের সদস্য তারসেম সিংকে নিজেদের পরিস্থিতির কথা জানিয়েছিলেন।ধর্ষণে আরও দুই ব্যক্তির যোগ রয়েছে বলে ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছে পুলিশ।

ধর্ষণ, আর্থিক তসরুপ, প্রতারণা ও দুর্নীতির সঙ্গে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পরও বিলাসবহূল জীবনযাপনের অভিযোগ। আর এ সবের জেরেই প্রাক্তন এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে ১১৪ বছরের সাজা শোনাল থাইল্যান্ডের এক আদালত। দোষী উইরাফোন সুকফোনকে গত বছরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যার্পণের পর গ্রেপ্তার করেছিল থাই পুলিশ। এক নাবালিকাকে ধর্ষণ এবং আর্থিক কেলেংকারিতে তাকে ১১৪ বছরের সাজা দেয়া হয়।

মিয়ানমারের মন রাজ্যে খুন তান নামের এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর বিরুদ্ধে শত শত কিশোরী ও তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। নিজেকে আধ্যাত্মিক গুরু দাবি করে প্রলোভনের মাধ্যমে এসব অপকর্ম করেন তিনি। ওই খবর গণমাধ্যমে উঠে এলে মন রাজ্য সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

আমরা সাধারণ নাগরিক অন্যায় করতে পারি কারণ আমরা আইন জানি না ধর্ম জানি না কিন্তু যারা ধর্মের লেবাস লাগিয়ে রেখেছে তাঁরা সেই লেবাসের আড়ালে কি না করে যাচ্ছে!

এবার অন্য কথায় আসি- আপনি মাওলানা, পুরোহিত ,ফাদার ভিক্ষু যাই হোন না কেন মূলত আপনিও মানুষ রক্তে মাংসে গড়া , আপনারও যৌন চাহিদা রয়েছে। আপনার ধর্ম আপনাকে যেভাবে যৌনাচার করার হুকুম দিয়েছে আপনি সেই ভাবেই করুন। ধর্মের বেসিক বিষয়গুলো আমজনতার কাছে তুলে ধরুন।
ভালোবাসা অমৃত স্বর্গীয়। কারো প্রেম ভালোবাসাকে কটাক্ষ না করে অন্যায়কে অন্যায় বলুন। নারীর উপর অবিচার বন্ধ করুন। আপনার সাথে জোর পূর্বক যৌনাচারে নারীকে বাধ্য করবেন না। পবিত্র লেবাসকে পুঁজি করে অন্যায় করবেন না।
সামাজিক শৃঙ্খলা বজিয়ে শান্তি নিশ্চিত করুন। নারী পুরুষ পরস্পরকে সম্মানের চোখে দেখবে, নারীর উপর ফতোয়া জারী না করে বরং নারীও যে মানুষ, তার পেট থেকেই পুরুষ বের হয় এ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করুন। উপার্জন করার অধিকার নারীরও রয়েছে। ঘরের বাইরে যাবার, আলো –বাতাস-তাপ-মাটি-পানির সংস্পর্শে যাবার অধিকার তারও রয়েছে। নারী-পুরুষ সমান তালে পা না ফেললে, কাজ না করলে কখনো উন্নত জীবন প্রত্যাশা করা যায় না। পুরুষ যদি মনে করে নারী মাত্রই খাবলে খাবার বস্তু তাহলে সে তাঁর মাকেই খেতে পারে! কারণ মাও নারী! (নাউজুবিল্লাহ)

আসুন আমরা ধর্মকে শ্রদ্ধা করি, ধর্মীয় লেবাসকে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করি এবং নারীকে সম্মান করি। হিন্দু ধর্মে নারীকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়- দূর্গা,কালি,সরস্বতী,লক্ষ্মী তাঁরা নারীরই প্রতীক, খ্রিস্ট ধর্মে মাতা মেরিকে সম্মানের চোখে দেখা হয়, ইসলাম ধর্মে সুরা নেসায় (নারী) মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের দেন মোহর পরিশোধ করো, যদি তাঁরা স্বেচ্ছায় কিছু ফেরত দেয় তা থেকে তোমরা খরচ কর। আবার বলেছন,আর তাঁর নিদর্শনালীর মধ্যে র‍্যেছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাঁদের কাছে প্রশান্তি পাও,তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এরমধ্যেই সে জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে যদি তাঁরা চিন্তা ভাবনা করে। সুরা রুম, আয়াত ২১। আরো বলেছেন নারী-পুরুষ, তোমরা পরস্পরের আচ্ছাদন। সুতরাং নারীর প্রতি অবিচার নয় বরং ভালোবাসুন। এতে আপনাদেরই লাভ-নারী নিজেই ভালোবাসার আধার। আপনাকে সে প্রেমে-কামে ভরিয়ে রাখবে।
ধর্ষণকে না বলুন, প্রেম-ভালোবাসাকে হ্যাঁ বলুন।

তথ্যসূত্রঃ কুরআন , হাদিস পত্র-পত্রিকা

শাহানা সিরাজী
ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ)
পিটি আই মুন্সীগঞ্জ
কবি, প্রাবন্ধিক ও কথা সাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top