ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার ক্ষনজন্মা শেখ হাসিনার জন্মদিন – মোল্লা জালাল

PicsArt_09-28-12.22.58.jpg

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার ক্ষনজন্মা শেখ হাসিনার জন্মদিন – মোল্লা জালাল

সব মানুষ ক্ষণজন্মা হয় না। ‘কর্ম’ মানুষকে ক্ষনজন্মা করে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা ইতিহাস-ঐতিহ্যের উত্ত্বরাধিকার প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী ক্ষনজন্মা শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন আজ। বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞের প্রান শক্তি শেখ হাসিনার জন্মদিনের শুভক্ষনে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় নিরন্তর প্রার্থনা।
১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুকে চোখে দেখেছি, ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস ময়দানের জনসভায়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এইচএম কামরুজ্জামান সবাইকে চোখে দেখেছি। কিন্তু কারো ছূঁয়া বা স্পর্ষ পাইনি। ২০০১ সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক হিসেবে ইসির সবাইকে নিয়ে একদিন জাতীয় সংসদের তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করতে যাই। সেদিন নেত্রীকে কাছে পেয়ে অনেক কথা বলছিলাম। তিনি মন দিয়ে আমার সব কথা শুনছিলেন। পরে চলে আসার সময় সালাম করে বিদায় চাইলে তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। সেই মুহুর্ত্বে আমার অনুভূত ছিল, তাঁর ছূঁয়া যেন আমার দেহে মনে অন্তরে বাংলাদেশের ইতিহাস মেখে দিচ্ছিলেন। মাথা তুলে মুখে তাকিয়ে তাঁর চোখে যে ‘জ্যোতি’ দেখেছিলাম সেই জ্যোতি আমার অন্তরাত্মাকে আলোকিত করেছিল। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুব তারা/ এ সমুদ্রে আর কভু হবো নাকো পথ হারা’। মুহুর্ত্বের জন্যও পথহারা হয়নি। মাঝে মধ্যে আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি, কিন্তু তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ পেয়েছি। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামকে দেখেছি, তাঁর পুত্র রাজনীতির সচ্ছ প্রতীক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এর সান্যিধ পেয়েছি। শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদকেও দেখেছি, তাঁর কন্যা সিমি হোসেন রিমি আপার কাছে গিয়েছি, খেয়েছি, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সুযোগ্য পুত্র জননেতা মোঃ নাসিম ভাইয়ের সাথে অনেক স্মৃতি। বাকি ছিল শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের পুত্র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে সাংবাদিকদের মাঝে করোনাকালিক পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তার চেক্ বিতরণ করতে গিয়ে তাও পূরণ হয়েছে।
ধর্ম,শাস্ত্র,বিধি-বিধান যা আছে, সব কিছুতেই মানব জাতির কল্যানের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর নবী, রসুল, অলি-আউলিয়া,দেব-দেবতা,ধমর্-গুরু সবাই মানবজাতি তথা প্রাণীকুলের কল্যানের জন্য কাজ করেছেন, বানী দিয়েছেন। তাদের নির্দেশিত পথেই মানব জাতি তথা মানুষ প্রাণীকুলের কল্যানে কাজ করে। এটাই ধর্মের শিক্ষা।
শাস্ত্র ভেদে সংখ্যা তত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আইয়্যামে জাহেলিয়ার যুগে শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম কায়েম করার জন্য দ্বীনের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে তাঁর চার সাহাবার নাম ইসলামের গৌরবোজ্জল ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। নবীজি তাঁর চার সাহাবা হযরত আবু বকর, ওমর, ওসমান ও হযরত আলীকে নিয়ে জীবন বাজি রেখে মানব কল্যানের জন্য শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। হিন্দু ধর্মালম্বীরা মহাভারতকে খুবই খুরুত্ব দেয়। মহাভারতের মূল বিষয় করুক্ষেত্র। কৈরবদের অত্যাচার-অনাচরের বিরুদ্ধে নরকুলে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য পান্ডবরা করুক্ষেত্র সৃষ্টি করেছিল। ধর্মাবতার যুধিষ্ঠির তার চার ভাই ভীম, অর্জুন, নকুল,সহদেবকে নিয়ে কৈরব বংশের মহারাজা ধৃতরাষ্ট্রের শতপুত্রকে পরাজিত করে নরকুলে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছেন।
গভীরভাবে চিন্তা করলে সবকিছুর মধ্যে কেমন যেন একটা যোগসূত্র পাওয়া যায়। জগতের ক্ষণজন্মা মানুষগুলো যুগে যুগে ধর্ম ও মানবতার আত্মিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে মানুষের কল্যানে ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন। মানুষ আল্লার নবী বা রাসুল নয়। কিংবা নয় দেব-দেবতা। তবে কিছু মানুষের কর্ম দেবতুল্য হয়ে যায়। মানুষ তার কর্মে চির স্মরণীয় হয়ে থাকে। হয়ে আছেও। তেমনি হাজার বছরের শেষ্ঠ্র বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ধর্মের শ্বাসতঃ চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে ভাই তুল্য জাতীয় চার নেতাকে সাথে নিয়ে অত্যাচারি পাকিস্তানি শাসক-শোকদের বিরুদ্ধে ৭১ সালে যুদ্ধ করে বাংলাদেশটা স্বাধীন করে বাঙ্গালি জাতির অধিকার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তাঁরই সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা অনেকগুলো কারনে চির স্মরণীয়, বরনীয় হয়ে থাকবেন। ব্যক্তি হিসেবে তিনি অত্যন্ত সচ্ছ, সংবেদনশীল-মানবিক। নেতা হিসেবে দৃঢ়চেতা, দুরদর্শী। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। তাঁর কূটনৈতিক দুরদর্শীতা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। আর সে কারনেই চীন বিনামূল্যে লাখ লাখ ভ্যাকসিন দেয়, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিনা দাওয়াতে বার বার বাংলাদেশে বেড়াতে আসে। ভারতীয় কুটনীতিকরা দ্রুততম সময়ে তিস্তা চুক্তি সাক্ষর করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে। আমেরিকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার জন্য একপায়ে খাড়া বলে নিজে থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে জানায়। করোনা মহামারির এই সময়ে পৃথিবীর বৃহৎ শক্তির ধনী রাষ্ট্রগুলো যেখানে অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত সেখানে বাংলাদেশ শক্ত ভিত্তির ওপর দাড়িয়েছে। এডিবি তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশ দ্রুত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ৫৪ হাজার বর্গমাইলের এই ছোট্ট দেশটি আজ তার বিপুল জনসম্পদ নিয়ে সম্ভাবনার এক জনপদ।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রমাগত উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে। সে হিসেবে সমৃদ্ধির এই যাত্রা খুব বেশীদিনের নয়। এই সময়ে বাংলাদেশের সাফল্য সারা বিশ্বে নজিরবিহীন। মাত্র ২৪-২৫ বছরে বঙ্গবন্ধুর ৫৪ হাজার বর্গ মাইলের বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। গেল বছর জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদানের সুযোগ হয়েছিল । প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে আমেরিকা গিয়েছিলাম। জাতিসংঘের ওই অধিবেশেনে সারা বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা যোগ দিয়েছেন। সেখানে তুচ্ছ তাচ্ছিলের বাংলাদেশের সরকার প্রধান এবং তার সফর সঙ্গীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হওয়ার কথা যেনতেন কোথাও। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন। নিউইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে বাংলাদেশীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মার্কিন প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশীদের।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আবাস্থল ছিল অভিজাত হোটেল লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসে। জাতিসংঘ সাধারণ অভিবেশন চলাকালে ওই হোটেলেই অবস্থান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওই সম্মেলনে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেন সংস্থার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ। নর্থ ডেলিগেটস লাউঞ্জের মধ্যাহ্নভোজে জাতিসংঘ মহাসচিব নিজ টেবিলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের নিয়ে বসেছিলেন। ওই টেবিলে ডোনাল্ড ট্রাাম্প, এাঞ্জেলা মার্কেলের পাশে বসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ এশিয়ার কোনও সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানের জায়গা হয়নি ওই টেবিলে। এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতাও ওই টেবিলে আমন্ত্রিত হননি। আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাাম্প যখন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মাানে নৈশভোজ দিলেন সেখানেও গুরুত্ব পেয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়াও শেখ হাসিনার সঙ্গে তার হোটেলে সাক্ষাৎ করতে যান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনী ব্যক্তি বিল গেটস।
রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার অসামান্য অবদান ও কৃতিত্বের কারনে জাতিসংঘ অধিবেশনে তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল দু’টি পুরস্কার। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন। এই পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন বিশ্বব্যাপি উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতিমান এনগোজি ওকোনজো-আইয়েলা। তিনি শেখ হাসিনাকে যে সব বিশেষণে প্রশংসা করেছিলেন তা সত্যিই অবিস্বরণীয়। ভ্যাকসিন হিরো ছাড়াও তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননায় ভূষিত করে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল-ইউনিসেফ।
এ দু’টি পুরস্কার একসঙ্গে পাওয়া বিরল ঘটনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের যে মর্যাদা বেড়েছে তার প্রমান মিলে বহুমাত্রিকভাবে। আমেরিকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশী একাধিক লোককে দেখেছি সচ্ছন্দচিত্তে মার্কিনীদের সাথে দায়িত্ব পালন করতে। তাদের আচার আচরণে বাংলাদেশী সহকর্মীদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টিও প্রত্যক্ষ করেছি। অধিবেশনে যোগ দেওয়া রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যে আগ্রহ দেখিয়েছেন, গুরুত্ব দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন, খানিকটা দূর থেকে নিজের চোখে সব কিছু দেখেছিলাম। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপচারিতায় শেখ হাসিনার বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে আমার কাছে নরেন্দ্র মোদী বা ইমরান খানের চেয়েও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়েছিল। অধিবেশন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরতিহীন প্রোগ্রাম করেছেন। সফর সঙ্গী সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছুটতে ছুটতে টায়ার্ড হয়ে গেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একের পর এক কাজ করে গেছেন। তাঁর এই বিরতিহীন ছুটে চলায় বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৪৯ বছর আগে যে দেশের মানুষ এক বেলা খাবারের জন্য অমানুষিক শ্রম বিক্রি করতো সে দেশের মানুষ দুনিয়ার যে কয়টি দেশের মানুষ সল্প বা সামান্য মূল্যে খাদ্য পায়, বাংলাদেশ তাদের মধ্য অন্যতম একটি দেশ। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এই বাংলাদেশে নিজেদের উপার্জনে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা একটি বিস্ময়কর বিষয়। শুধুমাত্র খাদ্য নয়, আরো অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রমাগত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি এখন মোটামুটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাড়িয়েছে। প্রবৃদ্ধি ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলছে। চলতি অর্থ বছর শেষে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। যদি তাই হয়, তবে প্রবৃদ্ধির দিক বাংলাদেশ চীন , ভারত ও ভিয়েতনামকে ছাড়িয়ে যাবে। এর মূল কারণ হচ্ছে, দুরদর্শী নেতৃত্ব ও সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এখন প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আছে। প্রতিমাসে নূনতম ১০০ মিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স যুক্ত হচ্ছে। করোনাকালিন সময়ে সারা দুনিয়ার ধনী দেশগুলো যেখানে তাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অবিসাশ্ব্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
কিন্তু এত কিছুর পরও কিছু সমস্যা আছে যা বিতর্কের জন্ম দেয়। বহিঃবিশ্বে দেশের ভামুর্তি ক্ষুন্ন হয়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, দেশ প্রেমিক আমলাতন্ত্র ও দেশ প্রেমিক পুঁজির সংকট। বাংলাদেশে সব আছে শুধু এ দু’টির সংকট রয়েছে। একটি দেশ ও জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক আমলাতন্ত্র ও দেশপ্রেমিক পুঁজি খুবই জরুরি। এ দু’টি থাকলে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে অনাচার কম হয়। দেশপ্রেমিক আমলাতন্ত্র দুর্নীতি ও অনাচার রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে। আর দেশপ্রেমিক পুঁজি সাধারণ মানুষের জীবন যাপন স্বাভাবিক রাখায় বাজার নিয়ন্ত্রনসহ শ্রমের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারে। তাতে মানুষের মানবাধিক নিয়ে প্রশ্ন উঠে না। যদিও পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষে মানুষে ধর্মে গোত্রে সমাজে মানবাধিকারে ভিন্নতা আছে। সে কারনেই একেক দেশে মানবাধিকার ও বস্তুনিষ্ঠতার একেক রূপ দেখা যায়। ইউরোপীয় সমাজে যা বস্তুনিষ্ঠ, মানবাধিকার আমাদের সমাজে তা অনাচার-অনধিকার। সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠতার মানদন্ডকে সামনে রেখে কাজ করে, কথা বলে। কিন্তু এই বস্তুনিষ্ঠতার আড়ালে অনাচার-অনধিকার প্রশ্রয় পায় কিনা তা হয়তো অনেক সময় লক্ষ্য করে না। কিন্তু আজকের দিনের বাস্তবতায় সাংবাদিকদের সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। না রাখলে দেশ ও জাতির সাথে গাদ্দারি করা হবে। রাষ্টের চুতুর্থ ¯তম্ভের লোক হিসেবে রাষ্ট্রের দেওয়া মর্যাদার অবমাননা করা হবে। সুতরাং সে বিবেচনা থেকে আজ ও আগামীর বাংলাদেশের জন্য সাংবাদিকদের চারটি বিষয় মাথায় রেখে বস্তুনিষ্ঠ দায়িত্ব পালন করতে হবে :-
১. সর্ব প্রথম, বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ। এই ক্ষেত্রে কোন আপোষ নেই। কারণ, বাংলাদেশটা আকাশ থেকে পড়েনি। এটি সৃষ্টি হয়েছে। এই সৃষ্টির পিছনে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। একজন মানুষ সারাজীবন এদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবনপন সংগ্রাম করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুতরাং এ নিয়ে কোন ভিন্ন যুক্তি থাকতে পারেনা। এখানে একনিষ্ঠতাই বস্তুনিষ্ঠতা ।
২. দ্বিতীয় হচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধ’। ভারত-পাকিস্তানের মত আলোচনার টেবিলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙ্গালি জাতি ঐক্যবদ্ধ লড়াই করে দেশটা স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন,২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে। বুদ্ধিজীবিরা জীবন দিয়েছে। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গৌরব গাঁথা ও চেতনার প্রশ্নে আপোষ করার কোন সুযোগ নেই। এখানেও একনিষ্ঠতাই বস্তুনিষ্ঠতা, মানবাধিকার।
৩. তৃতীয় হচ্ছে ‘অসাম্প্রদায়িক সমাজ-রাষ্ট্র’। বাংলাদেশের হিন্দু, মুসলমান,বৌদ্ধ,খৃষ্টান, আদিবাসী,উপজাতি সবাই একেক জাতের, একেক ধর্মের। কিন্তু তারা সবাই বাঙ্গালি। হাজার বছর ধরে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের এই ভূখন্ডে সামাজিক সম্প্রতি বজায় রেখে বাঙ্গালির জীবন-সংগ্রামের ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব বাঙ্গালি মিলে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। সুতরাং বাঙ্গালির জাতিগত এই ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে কোন আপোষ বা ভিন্ন কোন যুক্তিক নেই। এ প্রশ্নে বস্তুনিষ্ঠতা হচ্ছে, একনিষ্ঠতা।
৪. সর্বশেষ হচ্ছে,‘উন্নয়ন’। মাত্র ৪৯ বছরের বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তান,শ্রীলংকাসহ অনেক দেশকে পিছনে ফেলে অর্থনৈতিক সূচকসহ বিভিন্ন সূচকে বহুদুর এগিয়ে গেছে। এক সময়ের তলাবিহিন ঝুড়ি হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের একটি সক্ষম রাষ্ট্র। উন্নত দেশের মহাসড়কের যাত্রী। আমাদের বর্তমান,সন্তান-সন্ততিদের ভবিষ্যৎ সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের জন্য উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। সুতরাং মানবাধিকারের অজুহাতে এর বিরুদ্ধে কোন রাজনীতিক যুক্তি,সামজিক ন্যায় বিচারের বাহানা গ্রহনযোগ্য নয়। এখনেও বস্তুনিষ্ঠতা হচ্ছে উন্নয়নের পক্ষে একনিষ্ঠতা।
এই চারটি আদর্শে যারা বিশ্বাস করেনা তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। রাষ্ট্রদ্রোহীর কোন মানবাধিকার নেই, থাকতে পারেনা। এই চার বিষয়কে সব কিছুর উর্ধ্বে রেখে যত খুশী বস্তুনিষ্ঠ হয়ে সাংবাদিকতা করুন কোন অসুবিধা নেই। কারণ, এই চারটি বিষয় ঐতিহাসিকভাবে মীমাংসিত। বিতর্কের কোন সুযোগ নেই। আশে-পাশে অসংখ্য নজির আছে। গান্ধীজিকে ভারত সরকার জাতির পিতার মর্যাদা দেয়। গান্ধীজি অসাম্প্রদায়িক, অহিংস রাজনীতির পুরোধা। কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা । কিন্তু আজকের ভারত শাসন করছে কট্টর হিন্দু মৌলবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি। কিন্তু তারা গান্ধীজিকে ফেলে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদি সময় পেলেই রাজঘাটে গিয়ে প্রার্থনা করেন। অপরদিকে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ইসলামিক রিপাবলিক পাকিস্তানের জাতির পিতা। তার দল মুসলিম লীগ। পাকিস্তানের রাজনীতিতে এখন আলেমুল গায়েব হয়ে গেছে। জিন্নার চিন্তা চেতনা বিরোধী জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি বহুদিন পাকিস্তান শাসন করেছে। জিন্নার মুসলিম লীগ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো ।পাকিস্তানে এখন অনেক নতুন দলের জন্ম হয়েছে। কিন্তু তারাও জিন্নাকে ফেলে দেয়নি,অমর্যাদা করেনা। পৃথিবীতে এরকম অসংখ্য নজির রয়েছে। সুতরাং কিছু লোকের প্রতিহিংসার কারণে জাতির গৌরবের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে উর্ধে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সুদুরের যাত্রী। ছোট্ট এই বাংলাদেশের পাশে এখন পৃথিবীর বড় সব শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো থাকতে চায়। সকলের আগ্রহের কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর দুরদর্শী নেতৃত্ব ও দেশাত্মবোধ বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রান শক্তি। তাই আজ তাঁর ৭৪তম জন্মদিনের শুভক্ষনে আগামীর বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার ক্ষনজন্মা শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনায় নিরন্তর প্রার্থনা।

লেখক : সিনিয়ির সাংবাদিক, সভাপতি-বিএফইউজে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top