শারমিনের সরবরাহ করা মাস্কের উৎস খুঁজছে পুলিশ
বিশেষ প্রতিবেদকঃ নকল ও ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে গ্রেফতারের পর ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নকল ও ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহকারী অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, শারমিন এসব মাস্ক কোথা থেকে সংগ্রহ করেছিলেন তা জানার চেষ্টা চলছে। তাদের ধারণা, প্রথম দুই লটের মাস্ক চীন থেকে আমদানি করা হলেও বাকি মাস্কগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই চক্রেও সঙ্গে আরও লোকজন জড়িত রয়েছে। তাদেরও শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি রমনা) মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা শারমিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমদানি সংক্রান্ত সকল নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখছি। তিনি কোথা থেকে এবং কার মাধ্যমে মাস্ক সংগ্রহ ও সরবরাহ করেছেন এসব বিষয় জানার চেষ্টা চলছে।’
করোনা মহামারির কারণে মাস্কের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশে নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক তৈরির একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাস্ক সরবরাহের সময় স্যাম্পল এবং প্রথম লটে আসল ‘এন-৯৫’ মাস্ক দিয়ে পরবর্তী সময়ে নকল মাস্ক সরবরাহ করছে। এই চক্রটি দেশেই নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক তৈরি করছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্ক সরবরাহ করতে গিয়ে এই কৌশল কাজে লাগিয়েছেন শারমিন। প্রথম দুই লটে অল্প কিছু আসল ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহ করার পর পরবর্তীতে নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহ করা শুরু করেন তিনি।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে শারমিন জাহান নকল মাস্ক সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করেন। সরবরাহকৃত সকল মাস্ক চীন থেকে আমদানি করা বলে দাবি করলেও আমদানি সংক্রান্ত নথিপত্র দেখাতে পারেনি। একারণে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তার সরবারহকৃত মাস্কের উৎস জানার চেষ্টা করছে। এটি জানতে পারলে বড় একটি নকল মাস্ক তৈরির সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, শারমিনের সরবরাহকৃত মাস্কগুলো থেকে কিছু মাস্ক পরীক্ষার জন্য জব্দ করা হবে। একই সঙ্গে শারমিন বিএসএমএমইউ থেকে কিভাবে মাস্ক সরবরাহের কাজটি হাসিল করেছে তাও জানার চেষ্টা চলছে। তার এই জালিয়াতির সঙ্গে বিএসএমএমইউ-এর কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত রয়েছে কি না তাও জানার চেষ্টা চলছে।
নকল ও ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহের কারণে শারমিনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়াতে পারেন না। কারণ কর্তৃপক্ষের মনোনীত ব্যক্তি মাস্ক যাচাই করে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু মাস্কে ত্রুটি থাকার পরও তা কেন গ্রহণ করা হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। এছাড়া কোনওরকম স্বচ্ছতা ছাড়াই কিভাবে মাস্ক সংগ্রহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে এবং এতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না তাও জানার চেষ্টা চলছে।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদেই শারমিন নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী এবং আওয়ামী লীগের গত দুই কমিটির সদস্য বলে নিজের পরিচয় দেন। কিন্তু দলীয় পরিচয়ে কোনও কাজ হবে না বুঝতে পেরে কিছুটা ভেঙে পড়েন। তবে ধূর্ত শারমিন গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শারমিনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় ব্যবসা করা যায় কি না সে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন।
নকল ও ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহের কারণে গত বৃহস্পতিবার রাতে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থেকে শারমিন জাহানকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। শারমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত। বর্তমানে তিনি শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা শারমিন জাহান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক, আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপকমিটিতেও সহ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।