“ছুটি নাই পুলিশের” – রথীন্দ্র নাথ বিশ্বাস

PicsArt_04-10-09.22.27.jpg

“ছুটি নাই পুলিশের” – রথীন্দ্র নাথ বিশ্বাস

আন্দোলন হচ্ছে, ছুটি বাতিল পুলিশের।
গোলাগুলি হচ্ছে ছুটি বাতিল পুলিশের!
জঙ্গি হামলা হয়েছে ছুটি বাতিল পুলিশের!
সামনে ঈদ,পূজা? ছুটি বাতিল পুলিশের!
সামনে নির্বাচন ছুটি বাতিল পুলিশের!
সামনে বড় কোন উৎসব ছুটি বাতিল পুলিশের!
রোগ,শোক, মহামারী, ছুটি বাতিল পুলিশের!
প্রাকৃতিক দূর্যোগ,ছুটি বাতিল!

এস এস সি পরীক্ষা ছুটি বাতিল পুলিশের,
এইচ এস সি পরীক্ষা ছুটি বন্ধ পুলিশের,
আরও কতো দিবসে যে পুলিশের ছুটি বন্ধ থাকে সেটা একজন পুলিশ সদস্য আর তার পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ জানেনা।

আপনাদের জন্য আমাদের ছুটি বাতিল হয়।
অজ্ঞাত লাশ,অপমুত্যু, ক্লুলেস খুন মামলা, অপহরন মামলা, ভিকটিম উদ্ধার, অজ্ঞাত চুরি,ডাকাতি মামলা, টার্গেট ওয়ারেন্ট তামিল, আসামীর গ্রেপ্তার,জিডি,অভিযোগ, হারানো ব্যক্তির সন্ধান, কমিউনিটি পুলিশং, বিট পুলিশং, উঠান বৈঠক, ৯৯৯ সেবা, স্বাক্ষী প্রদান, কোর্টে রিমান্ড শুনানি, ভাড়াটিয়ার তালিকা তৈরি, ভিআইপি ডিউটি, রাত্রিকালীন রণপাহারা, কতশত রেজিঃ,মেইনটেইন, এই প্রতিবেদন, সেই প্রতিবেদন, মামলা তদন্ত, অভিযোগপত্র, মামলা শেষ করার চাপ,আসামী গ্রেপ্তারের চাপ, উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের চাপ, আরো কতশত চাপ,,,,আর এসব চাপে পুলিশের নৈমিত্তিক ছুটি,বছরে ২০ দিন, ঐ গুলোও ছুটি চেপ্টা হয়ে যায়।

এই চেপ্টা ২০ দিন ছুটির মধ্যে পুলিশের কোন কোন সদস্য টেনে-টুনে ৫দিন,কেউ ৮ দিন,কেউ ১০ দিন,কেউ সর্বোচ্চ ১২ দিন,কেউবা কপাল গুনে পুরো ছুটি (জ্বী কপাল গুনে) ভোগ করতে পারে।

শুক্র,শনি ছুটি তো দূরের কথা, মাঝে মাঝে আমরা পুলিশেরা সাপ্তাহিক বারের নাম গুলোও ভুলে যাই।

রাত আর দিন,ঝড়- বৃষ্টি, রোদ সবই আমাদের কাছে সমান।

সারাদিন কর্ম ব্যস্থতার পর আপনারা নিরাপদে ঘুমান,,আর আমরা পুলিশ সদস্যরা সারাদিন কর্ম ব্যস্থতার পর রাতে আপনাদের ঘুম নিরাপদ করার জন্য, আপনাদের ঘর- বাড়ী,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,অফিস- আদালত,ব্যাংক পাহারায় নিয়োজিত হই,এবং সারা-রাত অবধি পাহারা দেই।

**আপনাদের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আমরা পরিবারের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থাকি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস,বছরের পর বছর!
**গ্রীষ্মের দুপুরে আপনারা যখন এসির ভেতরেও ঘামতে থাকেন তখন আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ধুলাবালির ভিতরে ডিউটি করি। বর্ষার দিনে আপনারা যখন বাসায় বসে খিচুড়ি খান আমরা তখন রাস্তায় দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ডিউটি করি।
আপনার ঝামেলার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আহত হই আমরা।

শেষ বিদায়ে তোমার লাশ টাও আমরাই কাধে নিলাম।কই তোমার প্রিয় সন্তান,বাপ-ভাই,আত্নীয় স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী,কেউ তো তোমার লাশ টা কবর দেয়ার জন্য এগিয়ে এলো না।

**তবুও দিন শেষে,পুলিশ খারাপ, আজীবনই খারাপ, ভালো হওয়া গেলোনা।
**যদিও আমরা ফাইল আটকে টাকা দাবি করি না, লাশ আটকে টাকা দাবি করি না! খাবারে ভেজাল দেই না! হুটহাট পন্যের মুল্য বাড়িয়ে দেই না, দাবী আদায়ে রাস্তাঘাট অবরোধ করি না।
তবুও আমরাই খারাপ,জাতীয় খারাপ।

সবশেষে কতিপয় সাহেবদের উদ্দেশ্য বলছি,
ভাই,দেশ প্রেম এতো সহজ জিনিস নয়, এর জন্যে অনেক বিসর্জন,অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
“মুত্যু সে তো আমাকে ছুঁবেই, তাই বলে ভয় পাবো, নাতো,এমন তো হবার কথায় নয়, মুত্যু যদি আসেই, তাকে সাহসিকতার সহিত আলিঙ্গন করিব- ময়দানে,” পরাজয়ে ডরে না বীর”।

তাই বলে কাপুরুষতা! না না, এটা তোমার সাথে,তোমার পেশার সাথে, দেশের স্বার্থে- বড়ই বেমানান।

অনুরোধঃ দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মাঠে আছি আমরা, সবাই সতর্ক থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, নিজ ঘরে থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি ও হোম- কোয়ারেন্টিন মেনে চলুন।

লেখকঃ রথীন্দ্র নাথ বিশ্বাস
কোর্ট পরিদর্শক, ভোলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top