ঢাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাজনৈতিক বক্তব্য দেবো, ভোট চাইবো না: তোফায়েল
ঢাকা সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইবেন না। তবে, তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেন। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ এ কথা বলেন।
এর আগে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির হারুনুর রশীদ সরকারি দলের এমপিদের নির্বাচনি প্রচারণার অংশ নেওয়ার সমালোচনা করেন।
ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রসঙ্গ টেনে হারুনুর রশীদ বলেন, সামনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচন কী আসলেই নির্বাচন হবে? এতে কী জনগণ ভোট দিতে পারবে? এই নির্বাচনের পরিবেশ কী সরকার নিশ্চিত করতে পারবে? এই বিষয়ে দায়িত্বশীলদের থেকে উত্তর পেতে চাই।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, নির্বাচন কী আসলে হবে নাকি নির্বাচনের নামে এভাবে প্রহসন চলতে থাকবে তার জবাব চাই। আমাদের নির্বাচনি মিছিল থেকে লোক ধরে বলা হবে ছিনতাইকারী, দেওয়া হবে গায়েবি মামলা। এটা কত দিন চলবে?
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সরকার মুজিববর্ষ পালন করছে। দেশের মেয়াদ ৫০ বছর হতে চলছে। আমরা কী এখনও গণতন্ত্রের পথে যেতে পারবো না? গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারবো না? নির্বাচনের পরিবেশ আমরা দেশে আনতে পারবো না? এটা সদিচ্ছার ব্যাপার। তার উদাহরণ আমার ইউনিয়নের ওই নির্বাচন। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তার জবাবে বলতে চাই এ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের ভোটের প্রচারণায় অংশগ্রহণের কোনও সুযোগ নেই। এই আইন আপনারা করেছেন। আপনারা আইন করে আপনারাই তা লঙ্ঘন করছেন। নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। সিনিয়র এমপি মন্ত্রীরা যদি পুলিশ প্রশাসনকে কিছু বলেন তার বাইরে কী তারা (পুলিশ) যেতে পারেন? অসম্ভব।
হারুনুর রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন বিএনপির প্রতি ১০ শতাংশ মানুষের সমর্থন নেই। উনি মাপলেন কী করে? উনার কী ৯ কোটি ভোটারদের মাপার মেশিন আছে? এটা মাপার একমাত্র মেশিন হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আপনি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। বিএনপির পক্ষে ৯০ ভাগ লোক আছে না আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে তার প্রমাণ হবে নির্বাচন অবাধ হলে। এটা নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা এবং নির্বাচনকে নিয়ে যে সহিংসতা চলছে তা বন্ধের দাবি করছি। না করলে আমরা সংসদ থেকে ওয়াক-আউট করবো।
পরে অবশ্য বিএনপি ওয়াক আউট করে।
বিএনপির হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির ভূমিকার নানা প্রসঙ্গ টানেন। এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও নানা মন্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ বিএনপি নির্বাচনে না জেতেন ততক্ষণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় না। এখানে হারুনুর রশীদ তার নিজের এলাকায় নির্বাচনের কথা বলেছেন। উনার কথায়ই প্রমাণ হয়েছে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। নিরপেক্ষ হয়েছে বলেই চট্টগ্রামে ভোট কম পড়েছে। আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তার করলে সেখানে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে পারতো। সেটা তো করেনি। আর ভোট মাপার যন্ত্র আছে হারুনুর রশীদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশি আসনও পাবে না। কিন্তু দেখা গেলা ২০০৮ সালে বিএনপিই ৩০টি সিট পেয়েছিল। এই আওয়ামী লীগের আমলেই বিএনপি ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল। বিজয়ী না হলে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না- এই স্লোগান ছিল বিএনপির মুখে মুখে।
ঢাকা সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই নির্বাচন শুরুর আগে থেকেই বিএনপি বলা শুরু করেছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। এটা তাদের ট্র্যাডিশন ও অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে হারুনের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে গেলে তারা স্বীকার করেছেন এমপিদের বিষয়টি। আমরা সংসদ সদস্যরা কী সুবিধাভোগী? আমরা কী অফিস হোল্ড করি? কমিশন চেষ্টা করেছিলেন এটা অ্যামেন্ড করতে কিন্তু পারেননি। আমরা কমিশনকে বলেছি, আমরা এটা পরিবর্তন করতে আসিনি। আমরা সরকারি দল। এটা করতে গেলে আমাদের ওপর মানুষের একটি বিরূপ ধারণা হবে।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, আমি মন্ত্রী ছিলাম, এখন এমপি। এটা আমার অপরাধ? ঢাকা উত্তরের বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ কী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন? তিনি মন্ত্রী ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। উপ রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ নন। গুরুত্বপূর্ণ হলাম আমি, শেখ সেলিম।
তোফায়েল বলেন, আমাদের মুজিববর্ষ শুরু হয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত হলো সব জায়গায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে সভা পালন করবো। আমরা ঢাকা সিটিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মুজিববর্ষের সভা করবো। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ওপর বক্তব্য দেবো। রাজনৈতিক বক্তব্য দেবো। কিন্তু আমরা প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইবো না।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সিটি করপারেশনে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপির সব সময় নেগেটিভ নির্বাচন ও নেগেটিভ পলিটিক্স করে আসছে। তারা ক্ষমতায় আসার জন্য অন্যপথ অবলম্বনের চেষ্টা করে। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাজনৈতিক অপশক্তির ওপর আশ্রয় করে। রাজনীতি বিরোধী হিসেবেই তাদের জন্ম।
নির্বাচনে সমন্বয়ক নিয়ে বিতর্ক প্রশ্নে তিনি বলেন, সমন্বয়কারীর মাধ্যমে তো নির্বাচন অবৈধ হতে পারে না- এটা তো কোনও প্রমাণ হতে পারে না। নির্বাচনকে তারা অন্যখাতে প্রবাহিত করে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এটাকে বড় করে দেখছে।
রাজনীতির কথা বলে কর্মকাণ্ড করে রাজনীতি ও নির্বাচন বিরোধী। এজন্যই তারা জনগণ দ্বারা পরিত্যক্ত হচ্ছে।
এরপর ফ্লোর নিয়ে তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘বলেছে ধর্মসভা করা যাবে না। আমি কাল থেকে মিলাদ মাহফিল করবো। প্রার্থীর জন্য দোয়া করবো। দেখি কে ঠেকায়?’