দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হবে না – ইকবাল মাহমুদ

PicsArt_12-09-06.10.21.jpg

দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হবে না – ইকবাল মাহমুদ
 

সাগর চৌধুরীঃ দেশব্যাপী যথাযথ মর্যাদর সাথে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন করলো দুর্নীতি দমন কমিশন। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনের সড়কে শান্তির প্রতীক পায়রা ও ফেস্টুন উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন দুুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, এসময় দুদক কমিশনার  এএফএম আমিনুল ইসলামসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এর আগে কমিশনের চেয়াম্যান ইকবাল মাহমুদ কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা এবং কমিশনের পতাকা উত্তোলন করেন। উদ্বোধনের পর পরই কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে রক্ষিত রেজিস্টারে নিজ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি এবং পোস্টার ও কার্টুন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দুদক চেয়ারম্যান ।

রেজিস্টারটি ৯ ডিসেম্বর হতে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বসাধারণের স্বাক্ষরের জন্য দুুদক মিডিয়া সেন্টারে উন্মুক্ত রাখা হবে । দুদক চেয়ারম্যান মহানগরীর সম্মানিত নাগরিকবৃন্দের দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর রেজিস্টারে স্বাক্ষর প্রদান করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্ব-স্ব দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরার আহ্বান জানান।

দুদক মিডিয়া সেন্টারের সামনে  আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, আজ বিশ^ব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে। দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়, এটি বৈশি^ক সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এজাতীয় সমস্যা একক দেশ বা একক প্রচেষ্টায় নির্মূল করা কঠিন। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সরকার, মিডিয়াসহ সকলের সমন্বিত ও পূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়াম্যোন বলেন, দুদকের বার্তা পরিস্কার-যে বা যারা দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন-দেশে এমনকি বিদেশে পালিয়ে গেলেও সুখে থাকতে পারবেন না।

এই অবৈধ সম্পদ শান্তিতে ভোগ করতে পারবেন না, দুদক তাদের পিছনে নিত্য তাড়া করবে, করবেই।

উদ্বোধনের পর দুদক চেয়ারম্যান কমিশনের প্রধান কার্যালয় ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, দুদকের প্যানেল আইনজীবী, ঢাকা মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য, গার্ল গাইডস,বয়েজ স্কাউট, সততা সংঘের সদস্য, আনসার, বিএনসিসি, বিভিন্ন এনজিও,ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো,  ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ নগরীর সর্বস্তরের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নিয়ে  ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দুর্নীতিবিরোধী  মানববন্ধন করেন।

অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য এই মানববন্ধনে দুর্নীতিেিরাধী প্লাকার্ড, ব্যানার ফেস্টুন শোভা পায়। শুধু ঢাকা নয় দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একই সময়ে দুর্নীতিবিরোধী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানবন্ধন শেষে বেলা ১১:০০ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি শিক্ষার্থী ও সততা সংঘের সদস্যদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, দেশ অনেক দিক দিয়ে এগিয়েছে, তবে দেশকে  দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে আরো এগিয়ে যেত। দুর্নীতিমুক্ত করা গেলে দেশ শোষণমুক্ত সোনার বাংলা হবে।
তিনি বলেন, দুদক চেয়ারম্যান যথার্থই বলেছেন একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।

দেশের নাগরিকদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগ্রত করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যদি প্রথম থেকেই দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব যেমন নকলমুক্ত, প্রক্সি না দেওয়া, ভর্তিবাণিজ্যের মতো অনৈতিকতা থেকে মুক্ত থাকতে পারে, তাহলে তারা দুর্নীতি করবে না, অন্যকে দুর্নীতি করতেও দিবে না। ছাত্র-ছাত্রীরা এভাবে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠলে বাংলাদেশ একদিন দুর্নীতিমুক্ত হবে।
তিনি তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন , তোমরা দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাও এবং নিজেরা শপথ করো। আজকের এই দুর্নীতিবিরোধী শপথ ভবিষ্যৎ জীবনে প্রতিভাত করো।

একই অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই লাল সবুজের পতাকা পেয়েিেছ। আমি জাতির পিতাসহ মাহন শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর  শ্রদ্ধা নিবেদন  করে বলছি,  দুর্নীতির কারণেই তাদের আশা-আকাক্সক্ষা আমরা পুরোপুরি পূরণ করতে পারি নাই। ৪৮টি বছর ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম চলছে। এটা লজ্জার।  শুধু দুদকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান একা যুদ্ধ করে দুর্নীতি হয়তো কাক্সিক্ষতমাত্রায়  বন্ধ করতে পারবে না, তবে আমাদের আশার আকাক্সক্ষার প্রতীক হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের এইসব শিক্ষার্থীরা, যারা ২০৩০ সালের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে। মাত্র গুটি কয়েক মানুষের দুর্নীতির কাছে আমাদের পরাজয়ের কোনো সুযোগ নেই। এই লড়াইয়ে বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই। ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সরকার , রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, আইনজীবী, মিডিয়া সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দুর্নীতিবাজদের পরাভূত করা হবে। এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। দুর্নীতিবাজদের আইনের মুখোমুখি করা হচ্ছে এবং করা হবে। ঘুষখোর-মুনাফাখোর-দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। দেশ থেকে বিদেশে পালিয়েও রক্ষা পাবেন না। দেশে-বিদেশে সর্বত্রই দুদক তাদের পিছু ছাড়বে না। এটাই আমাদের অঙ্গীকার। জাতির পিতার স্বপ্নের শোষনহীন বৈষম্যহীন তথা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম চলছে চলবে।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন,  তোমাদের উজ্জল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও  দমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত সরকারি পরিষেবা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। তোমরাই নেতৃত্ব দিবে শোষনহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের।

আলোনাসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়র বখ্ত প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top