“ভোলার বোরহান উদ্দিনে উদ্বুদ্ধ ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের বক্তব্য”
ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানা এলাকায় উপজেলা ঈদগাহ মাঠে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে পুলিশসহ সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঘটনা সংক্রান্তে যে কোনো প্রকার বিভ্রান্তি এড়াতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স প্রকৃত ঘটনাটি জনসমক্ষে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছে।
গত ১৮ অক্টোবর ২০১৯ খ্রিঃ ‘Biplob Chandra Shuvo’ নামে নিজ ফেইসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার প্রেক্ষিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) নামে এক যুবক রাত ৮.০৫ টায় ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানায় জিডি করেন। জিডি নং-৪৪০, তারিখ-১৮ অক্টোবর ২০১৯ খ্রিঃ। জিডি করার সময় থানায় অবস্থানকালেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য’র নম্বরে একটি কল আসে এবং তার কাছে চাঁদা দাবী করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে সে ওসিকে জানায়। ওসি বিষয়টি ভোলা জেলার পুলিশ সুপারকে জানায়। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সেদিন রাতের মধ্যেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য’র ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাককারী ও তার মোবাইলে কলকারী শরীফ এবং ইমন নামে দুই মুসলিম যুবককে যথাক্রমে পটুয়াখালী এবং বোরহানউদ্দিন থেকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে বোরহান উদ্দিন থানায় আনা হয়।
ইতোমধ্যে শুভ’র ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কথিত কমেন্টের জেরে এলাকার ধর্মপ্রান মুসলমান উত্তেজিত হতে থাকেন। ফেইসবুকে ধর্মীয় মন্তব্যের অভিযোগে মন্তব্যকারীর ফাঁসি দাবী করেন স্থানীয় আলেম সমাজ। পরদিন ২০ অক্টোবর ২০১৯ খ্রিঃ সকাল ১১ টায় ঈদগাহ মাঠ ময়দানে তারা প্রতিবাদ সভার ঘোষনা দেন। জেলা প্রশাসক, ইউএনও, থানার অফিসার ইনচার্জ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আলেম সমাজের প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে ১৯ অক্টোবর ২০১৯ খ্রিঃ সন্ধ্যায় বোরহান উদ্দিন থানায় দীর্ঘ সময় বিষয়টি আলোচনা হয়। আলেম সমাজের অভিযোগের ভিত্তিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য’কে আটক দেখানো হয়। এ বিষয়ে উপযুক্ত আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের নিশ্চয়তা পেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী আলেম সমাজ তাদের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচী বাতিল ঘোষনা করেন।
সমাবেশ বাতিলের ঘোষনা সত্তেও পুলিশ সার্বক্ষনিক সতর্ক থাকে। পরদিন সকাল থেকেই কিছু লোক ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হতে থাকে। ময়দানের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানোর জন্য ১৭ টি মাইক আনে একটি মহল। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সমবেত লোকজনকে সরিয়ে নিতে বললে উপস্থিত আলেমগন নিশ্চিত করেন, লোকজন কোনো রকম বিশৃঙ্খলা করবে না। ইতোমধ্যেই, এই পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এবং যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা দিতে সকালেই বরিশাল থেকে রেঞ্জ পুলিশের অতিঃ ডিআইজি ভোলায় আসেন। অতিঃ ডিআইজি ও ইউএনও’কে নিয়ে পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত জনগনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করে প্রয়োজনীয় সকল আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে তাদেরকে বার বার আশ্বস্ত করেন। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে সমবেত লোকজন ঈদগাহ্ ময়দান ত্যাগ করেন। উপস্থিত জনগনের উদ্দেশ্যে বক্তব্য শেষে পুলিশ সুপার ও অতিঃ ডিআইজিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ মাদ্রাসার একটি কক্ষে অবস্থান নেন। এরই মধ্যে, অন্য একটি গ্রæপ ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করতে থাকেন। তারপর, সহসাই একদল লোক বিনা উস্কানিতে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের উপর আক্রমন করে। আক্রমনকারীদের একদল আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপর আক্রমন চালায়। আক্রমনকারীদের গুলিতে পুলিশের একজন মারাত্মক জখম হয়। মারাত্বক আহত হন পুলিশের আরেক সদস্য। বরিশাল রেঞ্জের অতিঃ ডিআইজিও আহত হন। এই পরিস্থিতিতে, ইউএনও ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এর নির্দেশে আত্মরক্ষার্থে ও সরকারী জানমাল রক্ষার্থে ও উত্তেজিত লোকজনকে নিবৃত্ত করতে প্রথমে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ও পরে শটগান চালায় পুলিশ। পরবর্তীতে, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। আক্রমনকারীদের গুলিতে মারাত্মক আহত পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় নিহত ০৪ (চার) জনের মধ্যে অন্তত দুই জনের মাথা ভোতা অস্ত্র দ্বারা থ্যাতলানো বলে নিশ্চিত করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, এসবি, পিবিআই এবং জেলা পুলিশ হতে একজন করে মোট চারজন কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
অতএব, সার্বিক ঘটনা পর্যালোচনায় এটি স্পষ্ট যে, পুলিশ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে শুরু থেকে তৎপর থাকা সত্তেও এবং আলেম সমাজ পুলিশ কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে কর্মসূচী স্থগিত করলেও, কোনো একটি স্বার্থান্বেসী মহল ধর্মকে পুঁজি করে একটি সামাজিক অস্থিরতা তৈরীর অপপ্রয়াস চালিয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। ঘটনাস্থলসহ সারাদেশে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না করতে এবং কোন অবস্থাতেই ধর্মীয় উপাসনালয়ে আক্রমন না করতে সাধারণ জনগনকে অনুরোধ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি, গুজবে কান না দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য সকলের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।