রাজনীতির নতুন দিগন্ত – সাগর চৌধুরী।

20190609_152141.jpg

রাজনীতির নতুন দিগন্ত – সাগর চৌধুরী।

সাগর চৌধুরী।।

সারা বিশ্ব যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, তখন সারাবিশ্বে গণতন্ত্র আর বাম ডান নানা দলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের গীবত করছে। যুগের চাহিদা আর ক্ষমতার লড়াইয়ে অনেকেই পিছিয়ে পড়ছে যোজন যোজন দূরে।

ভারতীয় উপমহাদেশে গত কয়েক বছরের রাজনীতির রেখাচিত্রের দিকে তাকালে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও দ্বিধায় পড়েন। এর চলন্ত এবং জ্বলন্ত উদাহরণ ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় দেশ ভারতের রাজনীতি এবং মোদি সরকারের আবার ও ক্ষমতা দখল।

শপথ বাক্য পাঠ করছেন প্রধানমন্ত্রী।

গণতন্ত্র নামক খাঁচায় মোড়ানো টিয়া পাখিটি ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাস করলেও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক ছিল না মোটেও। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষমতায় আরোহনের ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত কেমন উড়ে গেল বাতাসে!

ভারতের সেরা সেরা বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, সমাজসেবক, কবি ও লেখক, চলচ্চিত্রকার, শিল্পীরা সহ আরো কত কত মানুষ মোদি সরকারের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ছিল! কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কোর্টে দাবার গুটি কেমন করে মোদি সরকার পেল?

আফগানিস্তানে গণতন্ত্র বলতে কোন কিছু আছে এমন কথা স্বয়ং ঈশ্বরও বলতে পারবে না! একদিকে আমেরিকার আগ্রাসন অন্যদিকে তালেবানদের দেশরক্ষার হুমকি আর প্রধানমন্ত্রী সে তো আগেই বলেছি খাঁচায় মোড়ানো টিয়া পাখি।

দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ মিয়ানমার। এখানে গণতন্ত্রের নামে সুচির সরকার ক্ষমতায় থাকলেও ভেতরে ভেতরে রয়ে গেছে, রন্ধে রন্ধে রয়ে গেছে, সেনাবাহিনীর ক্ষমতার দাপট। সুচি দেশের স্বাধীনতা ও গনতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনের জন্য সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছেন। শান্তির জন্য পেয়েছেন নোবেল পুরষ্কার। সেই সুচির দেশেই আজ মানুষ ঘড় হারা।

মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বলছে সেনাবাহিনী এবং সরকার দেশের জন্য কাজ করছে কিন্তু দেশ থেকে ভিটেমাটি হারা মুসলমান রোহিঙ্গারা সরকারের বিষয়ে একই কথা বলতে পারছে কি? সারা বিশ্বে আজ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের করুণ চিত্র ফুটে ওঠেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা যেন একটি বিষয় হয়ে উঠছে দিনকে দিন।

ভারতীয় উপমহাদেশে গণতন্ত্রের রক্ষায় সমানতালে চলছে যুদ্ধ। কাশ্মীর থেকে নাগাল্যান্ড আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমার কোথায় নেই এই যুদ্ধ?

তারপরও আমরা গণতন্ত্রের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলি, তারপরও আমরা দেশ রক্ষায় সকল মানুষের সমান অধিকার বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপরও আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখি। নতুন কোন গনতন্ত্রের আশায় বুক বাঁধি।



শপথ গ্রহন করছেন বি এন পি থেকে নির্বাচিত সংসদ।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সূচনা পর্বটি খুব সুখকর ছিল না এই অঞ্চলের গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষের কাছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে, পূর্ব বাংলা; তথা বাংলাদেশের সকল জনগণের কাছে তারা দমন, নিপিড়ন, গুম ও খুনের মত কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখে। ফলশ্রুতিতে দেশের সাধারন স্বাধীনতা কামি মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশ স্বাধীন করে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা দখলের কারণে গণতন্ত্র বা সাধারণ মুক্তিকামী মানুষের গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার আশা ম্লান হয়ে যায়।

স্বাধীনতার পরপরই দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা, দেশে সামরিক অভ্যুত্থান, দেশ ও জনগণকে রক্ষার স্বার্থে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল ইত্যাদি বিষয়গুলো বাংলাদেশে গনতন্ত্রের জন্য কালো সংকেত বলে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রে নতুন মাইলফলক যোগ করে ১৯৯১ সালের নির্বাচন। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভোটাভুটির মাধ্যমে সরকার গঠন করা। পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সুন্দর ও সাবলীল নির্বাচন দিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে কিছুটা হলেও গণতন্ত্রের স্বাদ দিয়েছিল।

যদিও সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বছরের পর বছর ক্ষমতা ধরে রাখা, বাংলাদেশের স্বনামধন্য রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে হেয় করার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টিও সাধারণ জনগণের কাছে একটি আতংক হয়ে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশের পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করার পরও আওয়ামী লীগ সরকার খুব ধৈর্যের সাথে তাদের মেয়াদকাল পূর্ণ করে। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করলেও রাজপথ, সংসদ এবং ভোটের বাক্স তাদের খালি থেকে যায়। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে, গণতন্ত্রের ইতিহাসে, মুক্তিকামী বাংলাদেশী মানুষের কাছে যেমনি একটি প্রশ্ন তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও বড় একটি প্রশ্ন।

বাংলাদেশের সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রায় সব প্রধান প্রধান দলগুলো অংশগ্রহণ করে। হেরে যাওয়া দলগুলো বিভিন্ন রকম অনুযোগ অভিযোগ করলেও আওয়ামী লীগ সরকার সংসদের নেতৃত্ব আবারও ফিরে পায়।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি সংসদে না আসার হুমকি দিলেও, বি এন পি থেকে যে কয়জন সংসদ সদস্য ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, একমাত্র বি এন পি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকি সবাই সংসদের অভিভাবক ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ বাক্য পাঠ করেন। তারা সবাই বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্য হিসাবে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধাও ভোগ করেন।

সর্বশেষ আজ রবিবার সকালে একমাত্র একজন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য পেল বিএনপি। আর শপথও নিলেন দলের মনোনীত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।

এবারে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ পেল তার সর্বশেষ সংসদ সদস্য। গণতান্ত্রিক পন্থা, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য, গণতন্ত্রের আলোয় আলোকিত হোক এবারের জাতীয় সংসদ।

বাংলাদেশের সকল জাতীয় সংসদ সদস্যদের জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

সাগর চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top