প্রশাসনে পদোন্নতিতে বাড়ছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য

Ban_Govt4.jpg

প্রশাসনে পদোন্নতিতে বাড়ছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য
অসন্তোষ নিরসনে নেই কার্যকরী উদ্যোগ

বিশেষ প্রতিবেদকঃ প্রশাসনে বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে বৈষম্য কমছে না, বরং বাড়ছে। পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে। সরকারি কর্মকর্তাদের সাধারণ ২৭ ক্যাডারের মধ্যে ‘প্রশাসন ক্যাডার’ ছাড়া বাকি ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেই বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলছেন, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্য নিয়ে পদোন্নতিতে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন যে, অন্যান্য ক্যাডারে সকল পদের বিপরীতে উপযুক্ত কর্মকর্তা না পাওয়ায় পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্যতার অতিরিক্ত পদোন্নতি পাওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে।

প্রশাসনে উপসচিব থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পর্যন্ত কর্মরত বর্তমানে কর্মকর্তা ৩১৪৩ জন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব/মুখ্য সচিব রয়েছেন দুই জন। তারা দুই জনই প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত। সিনিয়র সচিব আছেন ১১ জন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন ১১ জন। সচিব রয়েছেন ৬১ জন। এর মধ্যে ৫৯ জন পদোন্নতি পেয়েছেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে। গ্রেড-১ কর্মকর্তা ১৬ জন থেকে প্রশাসন ক্যাডার থেকেই ১৬ জন রয়েছেন। অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন ৫০১ জন। এর মধ্যে ৪৪৬ জন প্রশাসন ক্যাডারের। আর ৫৫ জন অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তা। যুগ্মসচিব ৫৯৫ জন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৪৯৫। আর অন্যান্য ক্যাডার থেকে ১০০ জন পদোন্নতি পেয়েছেন। উপসচিব রয়েছেন ১৯৫৭ জন। এর মধ্যে ১৫৪২ জন পদোন্নতি পেয়েছেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে। আর ৪১৫ জন অন্যান্য ক্যাডার থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন। মোট ৩১৪৩ জন কর্মকর্তার মধ্যে প্রশাসন থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন ২৫৭১ জন। আর অন্যান্য ক্যাডার থেকে ৫৭২ জন পদোন্নতি পেয়েছেন। যা পদোন্নতি প্রাপ্তদের মধ্যে ১৮ দশমিক ২০ শতাংশ।

বর্তমানে উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য এসএসবির বৈঠক চলছে। আজ রবিবারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে বিসিএস এর পছন্দের ক্রমানুসারে বিভিন্ন ক্যাডারে প্রার্থীরা যোগদান করেন। ২৭টি বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডার একটি। যারা মাঠ প্রশাসনে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। কিন্তু উপসচিব হিসেবে ৩০ শতাংশ পদ বিভিন্ন ক্যাডার থেকে যারা আসতে ইচ্ছুক, তাদেরকে পদোন্নতি দিয়ে আনা হয়। কোনো সময় এ হার মানা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। যুগ্মসচিব থেকে ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো কোটা নির্দিষ্ট না থাকলেও পদোন্নতি বঞ্চনার হার অসংখ্য। উপসচিব বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তা পর্যায়ের কর্মকর্তা কোনো ক্যাডার পদ না হলেও তাদের পরিচিতি নম্বর দিয়ে পৃথক করা হয়, যেন সহজেই অন্যান্য ক্যাডারকে চিহ্নিত করা যায়।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯ (১) অনুযায়ী সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা, অনুচ্ছেদ ২০(১) এ প্রত্যেকের যোগ্যতানুসারে পারিশ্রমিক প্রদান ও অনুচ্ছেদ ২৮(১) এ কোনো গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য না করা, অনুচ্ছেদ ২৯(১) এ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও কার্যত এ বিধানগুলো প্রশাসনে অকার্যকর। সেখানে প্রশাসন ক্যাডারকেই গুরুত্ব প্রদান বা অন্যদেরকে বঞ্চিত করার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।

সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ধারা ৮ অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘সততা, মেধা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনক চাকরি বিবেচনাক্রমে পদোন্নতি প্রদান করিতে হইবে’ মর্মে উল্লেখ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া, পদোন্নতি প্রদান সম্পর্কিত বিষয় ও শর্তাদির জন্য বিধি প্রণয়নের কথা বলা হলেও তা হয়নি। অন্যদিকে, উক্ত আইনের ধারা ১৩(১) এ জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের জন্য আইনের বিধানের বিষয় বলা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top