ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী আজ

PicsArt_08-08-02.06.15.jpg

ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী আজ

বিশেষ প্রতিবেদকঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী ও রাজনৈতিক জীবনসঙ্গী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী আজ রবিবার।

দিবসটি উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী প্রদান করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাসে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল একজন সাবেক রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী। বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় চেতনাকে আরো শাণিত করেছিলেন এই মহীয়সী নারী। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্টজনের কথা উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম অগ্রগন্য।

বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পারিবারিক নাম রেণু। বঙ্গবন্ধুর বাল্যকালে বাবা-মা হারানো চাচাতো বোন রেণুর (বয়স মাত্র ৩ বছর) সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করেন পরিবারের সদস্যরা। মিশনারি স্কুল থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অল্প-বিস্তর প্রাথমিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর আর পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, বিচক্ষণ, দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল নারী। বঙ্গবন্ধুর জীবনে তার প্রভাব ছিল অপরিসীম।

বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘রেণু খুব কষ্ট করত, কিন্তু কিছুই বলত না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্য টাকাপয়সা জোগাড় করে রাখত, যাতে আমার কষ্ট না হয়।’ আর এক জায়গায় লিখেছেন, ‘সে [রেণু] তো নীরবে সকল কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু কিছু বলে না। কিছু বলে না বা বলতে চায় না, সেই জন্য আমার আরও বেশি ব্যথা লাগে।’

বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে গোপালগঞ্জ জেলগেটে কথোপকথন সম্পর্কে বলেন, “রেণু আমাকে যখন একাকী পেল, বলল, “জেলে থাকো আপত্তি নাই, তবে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখো। তোমাকে দেখে আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। তোমার বোঝা উচিত আমার দুনিয়ায় কেউ নাই। ছোটবেলায় বাবা-মা মারা গেছেন … তোমার কিছু হলে বাঁচব কী করে?’ …আমি বললাম, খোদা যা করেন তাই হবে, চিন্তা করে লাভ কী?”

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গমাতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত (বঙ্গবন্ধুর) পাশে ছিলেন, যখন ঘাতকেরা আমার বাবাকে হত্যা করল, তিনি তো বাঁচার আকুতি করেননি। তিনি বলেছেন, ‘ওনাকে যখন মেরে ফেলেছ, আমাকেও মেরে ফেল।’ এভাবে নিজের জীবনটা উনি দিয়ে গেছেন।” এভাবেই বঙ্গবন্ধুর জীবনের সুখ-দুঃখের সাথি হয়েই শুধু নয়, মৃত্যুতেও সাথি হয়েছিলেন তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শাহাদত বরণ করেন তিনি।

বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া পাঁচজন নারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পাচ্ছেন ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ পদক। আজ রবিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পদক বিতরণ করবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুটি ‘ই-পোস্টার’ প্রকাশ করা হয়েছে। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সারা দেশে ২ হাজার দুস্থ ও অসহায় নারীকে নগদ ২ হাজার টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার সেলাই মেশিন বিতরণ করা হবে।

রাষ্ট্রপতির বাণী

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের স্বার্থে বঙ্গবন্ধুকে অসংখ্যবার কারাবরণ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেই কঠিন দিনগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। পরিবারের দেখাশোনার পাশাপাশি স্বামীর মুক্তির জন্য মামলা পরিচালনা, দলের সাংগঠনিক কাজে পরামর্শ ও সহযোগিতাদান সবই তাকে করতে হয়েছে। বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে তাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়েছেন। আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী

জাতির পিতা রাজনৈতিক কারণে প্রায়ই কারাগারে বন্দি থাকতেন। এই দুঃসময়ে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হিমালয়ের মতো অবিচল থেকে একদিকে স্বামীর কারামুক্তিসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন; অন্যদিকে সংসার, সন্তানদের লালন-পালন, শিক্ষাদান, বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস যুগিয়ে স্বাধীনতা এবং মুক্তির সংগ্রামকে সঠিক লক্ষ্যে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশ ও জাতির জন্য তার অপরিসীম ত্যাগ, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতার কারণে জাতি তাকে যথার্থই ‘বঙ্গমাতা’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। বঙ্গমাতা যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top