স্বাস্থ্যখাতে মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের ঘাটতি; উপজেলা পর্যায়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

স্বাস্থ্যখাতে মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের ঘাটতি; উপজেলা পর্যায়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

স্বাস্থ্য প্রতিবেদকঃ স্বাস্থ্যখাতে চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য প্রশাসনে যোগ্য লোকের উপযুক্ত স্থানে পদায়ন হচ্ছে না। তদ্বির ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অযোগ্যরা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসছেন। মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্য প্রশাসনে সমন্বয়ের ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য প্রশাসনও চলছে ইচ্ছামতো। দীর্ঘদিন ধরে এটা চলে আসছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবাসহ প্রশাসনিক কর্মকান্ড। দুর্নীতির মূলেও রয়েছে অব্যবস্থাপনা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানোর তাগিদ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে চিকিত্সা সেবা, শিক্ষা ও প্রশাসনের সঠিক স্থানে উপযুক্ত ব্যক্তিদের বসাতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ৫০ বছর আগের কাঠামো দিয়ে আধুনিক যুগে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা চলবে না।

পঞ্চম গ্রেড পর্যন্ত যেসব চিকিৎসক আছেন তাদের নিয়োগ ও বদলির ক্ষমতা মন্ত্রণালয় নয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে রাখতে হবে। মন্ত্রণালয়ের কাজ হবে সঠিকভাবে সার্বিক কর্মকান্ড মনিটরিং করা। তবে সক্ষমতার অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্যে বরাদ্দকৃত টাকা খরচ হচ্ছে না। অদক্ষতার কারণে মাঠ পর্যায়ে বরাদ্দকৃত টাকা সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য খাতের মাঠ পর্যায়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। করোনা মহামারীর সময় দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের দুরবস্থার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পদে পদে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, স্বজনপ্রীতির ছবি একে একে প্রকাশ্যে এসেছে। মহামারীর এই সময়ে স্বাস্থ্যখাতে ‘অব্যবস্থাপনার’ অভিযোগ সংসদে গতকাল বিভিন্ন এমপিরা তুলে ধরেন। কয়েকজন সংসদ সদস্য বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। বেহাল দশা থেকে রক্ষা করতে কমিটি গঠন করতে হবে।

যার যে কাজ তাকে দিয়ে সেই কাজটি করানো হচ্ছে না স্বাস্থ্য খাতে। স্বাস্থ্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ হলো: ইপিডেমিওলজিস্ট ও পাবলিক হেলথ। ইপিডেমিওলজিস্টের কাজ হলো মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন রোগের তথ্য/উপাত্ত সংগ্রহ, রোগ নির্ণয় ও পরিসংখ্যান। ব্যবস্থাপনার কাজ করবেন পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞরা। নিপসমে ইপিডেমিওলজি কোর্স আছে। সেখান থেকে প্রায় ১০০ ইপিডেমিওলজিস্ট হয়েছেন। সমান সংখ্যক পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। ইপিডেমিওলজিস্ট ও পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন ও সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ সিভিল সার্জনই ইপিডেমিওলজিস্ট কিংবা পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ নন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরে ইপিডেমিওলজিস্ট পদ আছে, কিন্তু বসানো হয়েছে অন্যদের। নিপসমের পরিচালকের পদ ইপিডেমিওলজিস্টদের জন্য। কিন্তু তাদের পদায়ন করা হয় না। যার কারণে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়।

দুর্নীতি ও অনিয়মও হচ্ছে চরম। ৫০ থেকে ৩০ ধরনের ওষুধ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে সরকার বিনামূল্যে দেয়। কিন্তু রোগীরা দুই তিন ধরনের ওষুধ ছাড়া কিছুই পায় না। প্রশ্ন ওঠেছে বাকি ওষুধ যায় কোথায়?

এদিকে, দুর্নীতির চেইন অব কমান্ড সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের ইমার্জেন্সি বিভাগের মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্য সার্ভিস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সার্বক্ষণিক স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখতে হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনেক জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। সিদ্ধান্তের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। আর সেটা আসতে লাগে ২৬ জনের স্বাক্ষর। তাহলে ইমার্জেন্সি সার্ভিস কিভাবে পাওয়া যাবে? এর প্রভাব পড়ে রোগীদের উপর। অনেক রোগী সুচিকিৎসার অভাবে মারা যায়।

দেশের স্বাস্থ্যখাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে গবেষণার জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র পাঁচ কোটি টাকা। এরপর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ‘সমন্বিত স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল’ নামে এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এ তহবিল থেকে দুই অর্থবছরে কোনো খরচই করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এবারও ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিগত সময়ের মতো যদি পরিকল্পনার অভাব থাকে তবে এবারও অব্যবহূত থেকে যেতে পারে এই বরাদ্দ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে। সঠিক ব্যক্তিকে উপযুক্ত জায়গায় বসাতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সমন্বয়ের যে অভাব রয়েছে তা দূর করতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, চিকিত্সা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ইপিডেমিওলজিস্ট ও পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাদেরকে সঠিক জায়গায় বসানো হচ্ছে না। বহু বছর ধরে এটা চলে আসছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানো দরকার। অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিএমএ’র পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ব্যবস্থাপনা আধুনিক মানের হবে।

তবে জেলা এবং উপজেলার চিত্র আরও বয়াবহ।

ভোলা জেলার সিভিল সার্জন অফিসের সাধারণ কোন বিষয়ের তথ্য জানতে হলেও সিভিল সার্জনের অনুমতি ছাড়া মিলছে না। নানা ধরনের অযুহাত আর নানা রকম ছল করছে কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এযেন সাধারণ রোগীদের সাথে চরম প্রতারনা। যা সরকারী কর্মচারী হয়ে করা সমিচিন নয়।

ভোলা সদর উপজেলা হাসপাতালের আরএমও শেষ কবে অফিস করছেন স্বয়ং তার অফিস স্টাফদের কাছে জানতে চাইলে সবাই মুখে কুলুপ আটেন। একেমন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!

মুঠোফোনের কল রিসিভ করছেন না। তবে স্থানীয় রোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়। সরকারী আফিসে তিনি নিয়মিত অফিস না করলেও প্রাইভেট হাসপাতালে ঠিকই রোগী দেখছেন।

সাংবাদিক নাম শুনলেই যেন একরাশ ঘৃনা ছুড়ে দেয় চোখে মুখে। মনে হয়ে সাংবাদিক তাদের জাত শত্রু। আচার আচরণ এমন ঘৃণার দৃশ্য রীতিমতো অবাক করার মত।

দৌলতখান উপজেলা হাসপাতালের চিত্র মোটেও ভিন্ন নয়।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা হাসপাতালের আর এমও অফিস করলেও কোন বিষয়ে জানতে চাইলে মুখে কুলুপ আটেন।
ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর বলেন, আপনি সাংবাদিক আমি আপনাকে জানি। তবে এই হাসপাতালের বিষয়ে কোন প্রশ্ন করলে আপনি উপজেলা প.প কর্মকর্তার কাছে করেন।

উপজেলা প.প কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন করলেই সাংবাদিকদের মুঠোফোনে অহি নাজিল হয়। আর আপনারা তো জানেন নাজিল হওয়া অহি প্রকাশ যোগ্য নয়।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা প.প কর্মকর্তা কিন্তু সরকারী
হাসপালে কোন রোগী দেখেন না। কারণ তিনি অনেক বড় কর্মকর্তা। তবে অনুমোদন হীন প্রাইভেট হাসপাতালে মোটা অংকের ভিজিট নিয়ে নিয়েমিত রোগী দেখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top