ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া মুক্তি নেই – মাহমুদুর রহমান মান্না
নগর প্রতিবেদকঃ নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বাংলাদেশে এখন কেউ নিরাপদ নয়। জালিম সরকারকে দেশকে মনুষ্য বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। বাঁচতে হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশন (বিআরজেএ) আয়োজিত বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও সাদাত হুসাইনের নিঃশর্ত মুক্তি ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সম্মিলিত আন্দোলনের কারণে সরকার আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। রুহুল আমিন গাজী ও সাদাত হুসাইনসহ আটক সাংবাদিকদের মুক্ত করতে হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পেতে রাজপথে নামতে হবে। মুক্তির আন্দোলনকে হাইকোর্টের গেটে এমনকি প্রয়োজন হলে বিচারপতির দরজায় নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের উপর যে নির্যাতন শুরু হয়েছে সরকারের সাথে ঐক্য করে মুক্তি মিলবে না। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এক প্লাটফর্মে না আসলে নির্যাতন বন্ধ হবে না। কিছু লোক হয়তো সরকারের কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন। যেভাবে সাগর-রুনি আন্দোলনকে বিকিয়ে দিয়ে কেউ কেউ সুবিধা নিয়েছেন। এদের একদিন জবাব দিতে হবে। চিরদিন অন্ধকার থাকবে না। সুদিন অবশ্যই ফিরবে। সেই সুদিনের সাক্ষী হতে মানুষের মুক্তির আন্দোলনে এখনই শরিক হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। তিনি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহবান জানিয়ে বলেন, কোনো আন্দোলন বৃথা যায় না। যারা মনে করছেন এ আন্দোলন করে সরকারের পরাজিত করা সম্ভব নয় তারা ভুল পথে হাটছেন। আন্দোলনকারীরা কখনো পরাজিত হন না। জয় আমাদের হবেই।
সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ভিন্ন মত দমনের অংশ হিসাবে সরকার ঠুনকো অজুহাতে অন্যায়ভাবে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও সাংবাদিক সাদাত হুসাইনকে সাত মাস ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। দিন দিন তাদের শারিরিক অবস্থার অবণতি ঘটছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকারের উচিত তাদের মুক্তি দেওয়া। কিন্তু সরকার সেটা না করে নানা অজুহাতে আটক রাখাকে দীর্ঘ করছে। অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
বিআরজেএ’র চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতা মুদাব্বের হোসেন, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সরদার ফরিদ আহমদ, শাহীন হাসনাত, আবু ইউসুফ, রাশেদুল হক, দিদারুল আলম, আলমগীর হোসেন, ডিএম আমিরুল ইসলাম অমর, জেসমিন জুঁই ,বাবুল তালুকদার, ওয়াসিয়ার রহমান, এরশাদুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিআরজেএ’র মহাসচিব মুহাম্মদ আবু হানিফ।
এম আব্দুল্লাহ বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার আদায় আন্দোলনের আপোষহীন নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজীকে অন্যায়ভাবে সাত মাস জেলখানায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর। সরকার বিরোধী মতকে সহ্য করতে না পেরে তাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আটক করে এখন নানা অজুহাতে জামিন প্রলম্বিত করছে।
নুরুল আমিন রোকন বলেন, রুহুল আমিন গাজী ও সাদাত হুসাইনের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে অবশ্যই সুদিন ফিরে আসবে।
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকতা আজ ক্যান্সারে আক্রান্ত। এখন ক্যামোথেরাপি দিয়ে বাচিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে কতদিন বাঁচিয়ে রাখা যাবে সেটাই আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের কলম থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বর্তমানে সাংবাদিকরা যে নির্মমতার শিকার তা গত ৫০ বছরে এমন নজির নেই। এ রকম নির্যাতন শুধু ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলেই হয়ে থাকে। মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করে ফ্যাসিবাদী শাসন বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যাবে না।
আব্দুল হাই শিকদার বলেন, বর্তমান সরকার স্বাধীনতার দুশমন, জনগণের দুশমন। স্বাধীনতার চেতনাকে পায়ের নিচে পিষ্ঠ করছে। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে আপসহীন সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীকে মুক্ত করে মিথ্যা মামলার জবাব দেওয়া হবে।