মোহাম্মদপুরের অঘোষিত যুবরাজ রাজমিস্ত্রী পুত্র কমিশনার রাজীব গোয়েন্দা জালে
স্টাফ রিপোর্টারঃ মন চাইলেই বদলান গাড়ি। পোষাক-আষাকে সব সময় থাকে নূতনত্ব। রাস্তা দিয়ে গেলে না কী তার ছড়ানো পারফিউমের সুগন্ধী থাকে কয়েক ঘন্টা। সাধারণ মানুষ হঠাৎ করে দেখলে মনে করেন আমিরাতের কোনো আমীরের সন্তান। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তার বাবা ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রি। যার কথা বলছিলাম তিনি তারেকুজ্জামান রাজীব। ঢাকা উত্তর সিটি করপরেশনের ৩৩ নম্বও ওয়ার্ড (মোহাম্মদপুর এলাকার) কমিশনার। বছর কয়েক আগেও রাজীবের বাবা তোতা মিয়া ও তার ৩ ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন ঢাকা শহরে। এখন তাদের সবারই আছে বাড়ি-গাড়ি।
ঢাকা সিটি করপরেশনের কাউন্সিলর হয়ে খুব অল্প সময়ে এই অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছেন রাজীব। বিগত ৪ বছরে সে ৮-১০টির বেশী নামী দামী ব্রান্ডের গাড়ী কিনেছেন। যার মধ্যে অনেক ব্রান্ডের গাড়ী অনেক মানুষই আগে কখনো দেখেননি। মার্সিটিজ, বিএমডব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডাব্লিউ স্পোর্টস কারসহ নামী দামি সব ব্রান্ডের গাড়ীই এসেছে রাজীবের হাতে।
মোহাম্মদপুর এলাকায় যুবলীগের রাজনীতি দিয়েই শুরু রাজীবের। চালাক চতুর রাজীব চাটুকারিতার মাধ্যমে অল্পদিনেই নেতাদের সান্নিধ্যে এসে মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহব্বায়ক পদ বাগিয়ে নেন। এই পদ পেয়েই এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে জুতা পিটা সহ লাঞ্চিত করার কারণে যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।
২০১৫ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তৎকালীন এমপির ইশারায় দলের মনোয়ন না পেয়েও দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন এবং তৎকালীন এমপির সাহায্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারিয়ে কমিশনার নির্বাচিত হন।
কমিশনার হওয়ার পরপরই তার চলাফেরা ও কার্যক্রম হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। হয়ে উঠেন মোহাম্মদপুর এলাকার মুকুটহীন স¤্রাট। তার ক্যাডার বাহীনির প্রচারনায় হয়ে যান স্বঘোষিত জনতার কমিশনার।
তারেকুজ্জামান রাজীব মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নং রোড এলাকায় মানুষের পানির পাম্পের জন্য নির্ধারিত জায়গায় মধ্যপ্রাচ্যের আর্কিটেক্ট দিয়ে ডিজাইন করে অত্যাধুনিক ফিটিংস দিয়ে রাজপ্রাসাদ এর আদলে আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ী বানান।
এছাড়া গুলশানে ফ্ল্যাট, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, দুবাইতে র্বুজ খলিফার পাশে একটি বাড়ি এবং সৌদি প্রবাসী মিজান নামক এক ব্যক্তির সাথে হোটেল ব্যবসায় অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে জনশ্রুতি আছে।
সাবেক এক এমপির পোষ্যপুত্র পরিচয়ে তারেকুজ্জামান রাজীব তার সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজী, দখলবাজী, টেন্ডারবাজী মাদক ব্যবসা সহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে হয়ে উঠেন আরও দুর্ধর্ষ ও বেপরোয়া।
তার লোকজন নির্দি¦ধায় সরকারী জমি দখল করে গড়ে তোলেন বিশাল বিশাল অফিস। তারেকুজ্জামান রাজীব ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী শুধুমাত্র চাদাবাজী-দখলবাজীতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তার কাজের প্রতিবাদ করলেই জনগণকে হতে হয়েছে নির্যাতনের শিকার। ২০১৭ সালে তৌসির নামে এক তরুণ তার লোকজনের মাদক ব্যাবসায় বাধা দেয়ার কারণে তারেকুজ্জামান রাজীবের নির্দেশে চাঁদ উদ্যান ্ইউনিট যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন উকিলের হাতে খুন হন। যদিও জাকির আটক হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারেকুজ্জামান রাজীবের সহায়তায় জামিনে মুক্তি লাভ করে। শুধু তাই নয় কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের লোকজনের আক্রমনের শিকার হন স্থানীয় ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ আরও অনেকে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে ক্যাডার সিএনজি কামাল, ভাঙারী রনি, ফারুক খান অভি সহ আরও অনেকের নামে থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে।
সম্প্রতি তারেকুজ্জামান রাজীব প্রচুর অর্থের বিনিময়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের আলোচিত দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমানকে ২ কোটি টাকা দিয়ে এই পদ কেনেন তিনি।
আলোচিত ক্যাসিনো ব্যবসার সাথে যুক্ত আছে রাজীবের নাম। তার নিয়ন্ত্রণে ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে অনেক জায়গায়ই ক্যাসিনো ব্যাবসা পরিচালিত হয় বলেও গোয়েন্দা সূত্র গুলো নিশ্চিত করেছে।
সম্প্রতি রাজীবসহ বেশ কয়েকজন কমিশনারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে রাজমিস্ত্রির ছেলে রাজীবের উত্থানের এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী কাউন্সিলর রাজীব গোয়েন্দা ও আইন-শৃৃংখলাবাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। দেশ থেকে যাতে পালাতে না পারেন সেজন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।