দ্বীপ জেলা ভোলায় ৩টি গ্যাস কূপের সন্ধান

Picsart_24-09-10_16-21-56-110.jpg

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":false,"containsFTESticker":false}

দ্বীপ জেলা ভোলায় ৩টি গ্যাস কূপের সন্ধান

জেলা প্রতিনিধিঃ আরও  তিনটি  গ্যাসের সন্ধান মেলায় ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় নতুন করে শিল্পায়নের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশা জাগাচ্ছে নতুন শিল্পায়নের। এমনটি হলে দক্ষিণের এজেলাগুলোতে শিল্পায়নে দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। বিশেষ করে শিল্প কল-কারখানা তৈরীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির স্বপ্ন দেখছেন দ্বীপাঞ্চল জেলা ভোলার বিশ লক্ষাধিক মানুষ।

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাঁচিয়া ইউনিয়নের শাহবাজপুরে গ্যাসের ফের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে বাপেক্স। এরপূর্বে ১৯৯৪ সালে জেলার শাহবাজপুরে,২০১৭ সালে জেলা সদর ভোলা নর্থে এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে জেলা সদর ভোলার ইলিশায় পৃথক তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান লাভ করে  সরকার। এসব গ্যাসক্ষেত্রের ৯টি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে শাহবাজপুরে পাঁচটি কূপ উৎপাদনরত। বাকিগুলোতে এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) সূত্রে জানা যায়, ভোলায় আরো বেশি পরিমাণ তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ২০২৫-২৬ সালকে টার্গেট করে আরও অন্ত:ত পাঁচটি নতুন গ্যাসকূপ খননের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। রাশান কোম্পানি গ্যাজপ্রমের সঙ্গে যৌথভাবে সমীক্ষা চালিয়ে ৯টি সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০২৮ সালের মধ্যে ভোলায় আরো চারটি কূপ খনন করা হবে। বাপেক্স জানিয়েছে,২০২৮ সালের মধ্যে মোট ১৮টি কূপ খননের মাধ্যমে ৩৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ভোলার চরফ্যাশন, মনপুরা,জাহাজমারা পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার বর্গকিলোমিটারে ত্রিমাত্রিক জরিপকাজ পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া নদী এলাকায়ও দ্বিমাত্রিক জরিপ করা হবে। দৈনিক উৎপাদিত গ্যাস ভোলার তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং শিল্প ও আবাসিক খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ভোলায় এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলো হলো শাহবাজপুর, ভোলা-নর্থ ও ইলিশা।

তিন ক্ষেত্রে মোট ১ হাজার ৪৩৩ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) উত্তোলনযোগ্য গ্যাস রয়েছে। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ১ হাজার ২৭৫ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। দীর্ঘদিন ধরে এখানে আবাসিক সংযোগে ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

স্থানীয় শিল্পকারখানা তেমন ছিল না। আর চারদিকে পানিবেষ্টিত বলে ভোলার গ্যাস রাজধানী ঢাকা বা পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পাইপ লাইনে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সব মিলিয়ে এ লাইন সম্পন্ন করতে আরো কমপক্ষে তিন বছর লাগবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।  তাই শিল্পকারখানায় বিদ্যমান গ্যাস-সংকট কমাতে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে বিশেষ গাড়িতে পরিবহনে করে ভোলার বাইরে গ্যাস নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিগত সরকারের জমানায় গ্যাস ট্রান্সপারের কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়েছিল বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকো’কে।

ইতিমধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও ময়মনসিংহের চারটি কারখানায় গ্যাস (সিএনজি) সরবরাহ শুরু করেছে ওই কোম্পানিটি।

বাপেক্স জানায়,জেলায় মোট ৩ টি গ্যাস ক্ষেত্র’র ৯টি কূপ রয়েছে।

এগুলো হলো-জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহাবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রে ৬টি কূপ, ভোলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ভোলা নর্থ’র ২টি ও সর্বশেষ জেলা সদর ভোলার ইলিশা গ্যাস ক্ষেত্রের ইলিশা ১ কূপ। যা থেকে দৈনিক মোট ১ শত ৮০ থেকে ২ শত মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা রয়েছে।

একের পর এক গ্যাসে সন্ধান পাওয়া যায় এ জেলাটিতে। সর্বশেষ ঘোষিত হয় দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র ভোলার ইলিশা-১।

বাপেক্স সূত্রে জানা যায়,এখানে ২ শ’ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে। দেশীয় গ্যাসের বাজার মূল্যে মজুদ গ্যাসের দাম ৬ হাজার ৫ শ’ কোটি টাকা। আর আমদানিকৃত এলএনজির দর বিবেচনায় মূল্য দাঁড়াবে ২৬ হাজার কোটি টাকা। দৈনিক উত্তোলন করা যাবে ২০ থেকে ২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

ভোলার সর্বসাধারণের মাঝে দেখা দেয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির নানা স্বপ্ন। এলাকাবাসীর দাবি, ভোলাতে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়িসহ ভোলার গ্যাস প্রথমে ভোলার মানুষকে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হোক।

ভোলায় স্থাপিত সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে,এখানে বর্তমানে ছয়টি শিল্প কলকারখানা, দুইটি বাণিজ্যিক, দুইটি ক্যাপটিভ এবং ২ হাজার ৩ শত ৭৪ টি আবাসিক সংযোগসহ সর্বমোট ২ হাজার ৩ শত ৮৪ জন গ্রাহক গ্যাসের সুবিধা ভোগ করছেন।

বাসা বাড়ি বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্টসহ গ্যাসের ব্যবহার করতে পেরে খুবই আনন্দিত ভোলা বাসি। বিশেষ করে বাসা বাড়িতে রান্নার কাজে ঘ্যাস ব্যবহার করতে পেরে স্বস্তির কথা জানালেন অনেকেই।

তবে ভোলার গ্যাস ব্যবহার করতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে অনেকেরই। তাই ভোলার গ্যাস রক্ষায় নানা সময় নানান ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। নয়টি জেলার মানুষ একত্রিত হয়ে গঠন করে ‘ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন’ কমিটি।  কমিটিতে রয়েছে বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এ কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে গ্যাস রক্ষার চেষ্টা করে আসছে।

বিভিন্ন ব্যানারের মাধ্যমে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তাদের দাবি, ১৯৯৪ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিনে প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পর কেটে গেছে প্রায় ত্রিশ বছর। সবশেষ তালিকায় যুক্ত হয়েছে জেলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র। এতো এতো গ্যাসের ভাণ্ডর থাকা সত্ত্বেও বরাবরই গ্যাস সুবিধা বঞ্চিত দক্ষিণ জনপদের মানুষেরা। এখনো বাসা-বাড়িতে জ্বলে কাঠের চুলা।

একইভাবে পদ্মাসেতুর দ্বার উন্মোচনের পর সম্ভাবনা তৈরি হলেও গাজীপুর,ময়মনসিংহ’সহ অন্যত্র ‘সরবরাহের জন্য ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তি অনুন্নত বঞ্চিত শিল্প-কলকারখানাও। ‘অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ গ্যাস ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার কলকারখানায় ও আবাসিক খাতে সংযোগ দেয়ার জন্য এ অঞ্চলের মানুষের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিগত  সরকার এ দাবি উপেক্ষা করে গত ২১ মে’২০২৪ বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকোর সঙ্গে ভোলার গ্যাস ঢাকা,আশুলিয়া, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের স্বপ্নকে বহুগুণ পিছিয়ে দেবে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।

এবিষয়ে ভোলার জেলা প্রশাসক “আজাদ জাহান’র সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান,দেশে গ্রাহক পর্যায়ে চলছে গ্যাসের তীব্র সংকট। চাহিদা অনুযায়ী ডলার ও টাকা জোগানে সমস্যা হচ্ছে। যদিও সমস্যা সাময়িক। ফলে এলএনজি আমদানিও সীমিত করতে হচ্ছে । ঘাটতি কমাতে স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে জোর দেয়া হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলার তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়িয়ে শিল্পখাতকে আরো বাস্তবসম্মত করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে এখানকার গ্যাসভান্ডারকে কেন্দ্র করে ভোলায় বিভিন্ন শিল্প,কল কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার প্রস্তুতি চলছে। কিছু কিছু গড়েও উঠেছে। এতে করে জাতীয় অর্থনীতিতে এজেলা ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরীর মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান হবে এমনটাই প্রত্যাশা ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলবাসীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top