কারিগরি বোর্ড জাল সনদের কারখানা! জড়িতদের শাস্তি কি হবে?

Picsart_24-10-15_09-39-18-378.jpg

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":false,"containsFTESticker":false}

কারিগরি বোর্ড জাল সনদের কারখানা! জড়িত শিক্ষকদের শাস্তি কি হবে?

অপরাধ প্রতিবেদকঃ জাল সনদের কারখানা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড! একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থের বিনিময়ে গত এক যুগে লক্ষাধিক জাল সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রিকালচার, ফিশারিজ, লাইভস্টক, ফরেস্ট্রি, মেডিক্যাল টেকনোলজির মতো বিষয়ে টাকা দিয়ে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট কিনে দেশে-বিদেশে অনেকে চাকরিরত আছেন। আবার অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।

কম্পিউটার শিক্ষার নকল সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। আর এই সার্টিফিকেটে এমপিওভুক্ত শিক্ষকও হয়েছেন কয়েক হাজার। এসব সার্টিফিকেট বানিয়ে সেই রেজাল্টের তথ্য বোর্ডের সার্ভারে আপলোড করে দেওয়া হতো। এ কারণ বোঝার উপায় ছিল না যে, এটা নকল সার্টিফিকেট।

গনমাধ্যমের অনুসন্ধানে ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে বর্তমানে কর্মরত পাঁচজন কর্মকর্তা ও সাবেক তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষাবিদরা বলেন, যার যে বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান নেই, সে সেই বিষয়ে কী সার্ভিস দেবে? তাদের চিহ্নিত করে সার্টিফিকেট বাতিল করা উচিত।

জাল সনদ বিক্রি করতে দেশ জুড়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক প্রধান কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ (সিস্টেম অ্যানালিস্ট) প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামান। তিনি ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায় সনদ বিক্রি করতেন। তবে ক্রেতারা দালালদের কাছ থেকে ন্যূনতম ২ লাখ টাকায় নিতেন। পুরো অসাধু চক্রে রয়েছেন প্রায় ৫০ জন। তাদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা- কর্মচারী ও বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, পরিচালক ও কর্মচারী।

পুরো বিষয়টির তদন্ত চলছে। শামসুজ্জামান নিজেই বোর্ডের বিশেষ সার্টিফিকেট পেপারে এই সনদ প্রিন্ট দিতেন এবং কম্পিউটারের সার্ভারে আপলোড করতেন। গত ১ এপ্রিল মিরপুরের দক্ষিণ পীরেরবাগের বাসা থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের তৎকালীন সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত ও শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারী ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিপুল পরিমাণ তৈরি করা জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র এবং এসব তৈরিতে নানা সরঞ্জামসহ বোর্ড থেকে চুরি করে নেওয়া হাজার হাজার অরিজিনাল  সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।

শামসুজ্জামান জিজ্ঞাসাবাদে জাল সার্টিফিকেট প্রদানের তথ্য স্বীকার করেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, লাখ লাখ সার্টিফিকেট জাল করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এর সঙ্গে অনেক রাঘববোয়াল জড়িত। তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রাকিব উল্লাহ গণমাধ্যমে বলেন, ঘুষ দিয়ে জালিয়াতি করে যারা সনদ নিয়েছিলেন ‘ফরেনসিক অডিটের’ মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। চলতি মাসের শেষে কিংবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ফরেনসিক অডিট হাতে পেতে পারি। প্রমাণিত হলে, সার্টিফিকেট বাতিল করা হবে।

তিনি বলেন, জাল সনদ প্রদান চক্রে জড়িত থাকায় এ কে এম শামসুজ্জামানকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, পরীক্ষা দিয়ে পছন্দমতো স্কোর করতে না পারলে, কিংবা ফেল করলে ঐ পরীক্ষার্থী কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তৈরি হওয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারিগরি বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্টের কাছে পৌঁছে যেতেন। তারপর প্রয়োজনীয় ঘুষের টাকা জমা দিয়ে পছন্দমতো সনদ নিতেন।

তিনি বলেন, পরীক্ষা দিয়ে কেউ হয়তো সিজিপিএ-২ স্কোর পেলেন। টাকা দিলে সেটি সিজিপিএ-সাড়ে ৩ হয়ে যেত। পরিবর্তী সময় স্কোরের সনদ অনলাইনেও আপলোড করা হতো। এমনভাবে সনদটি দেওয়া হতো সেটি মোটা দাগে ধরার কোনো সুযোগ থাকত না।

২০০৭ থেকে শুরু হলেও ২০১২ সাল থেকে ব্যাপক হারে বাড়ে। তার মতে, দেশ জুড়ে একাধিক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষরা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জাল সনদের বৈধতা দিত খোদ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। সনদ যাচাইয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে তথ্য না দিয়ে জাল সনদধারীদের সুরক্ষা দিত তারা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, নিয়োগের বৈধতা ও একাডেমিক সনদ যাচাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)।

গত এক দশকে কয়েক হাজার জাল সনদধারী শিক্ষককে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা। সম্প্রতি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাল সনদসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়। সেখানে ১ হাজার ১৫৬ জন শিক্ষকের জাল সনদের তথ্য দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২৯৬ জনের কম্পিউটার শিক্ষার সনদ জাল। যার অধিকাংশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে নেওয়া হয়েছে।

গত ৩ অক্টোবর জাল সনদে চাকরি করা ২০২ জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। অভিযোগ রয়েছে, কারিগরি বোর্ড সংস্থাটিকে সনদ যাচাই করতে সহায়তা করে না। দীর্ঘ এক দশকে কয়েক হাজার শিক্ষকের সনদ যাচাই করে দিতে বললে কারিগরি বোর্ড থেকে নামমাত্র কিছু সনদ যাচাই করে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, একাধিকবার চিঠি দিলেও কারিগরি বোর্ড থেকে সদুত্তর মেলেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কারিগরি বোর্ড থেকে যত জাল সনদ তৈরি হয়েছে তার একটি বড় অংশ কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সনদ। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষক পদে এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য এ সনদ বাধ্যতামূলক। সরকার ২০১১ সালে প্রতিটি স্কুলের জন্য একজন কম্পিউটার শিক্ষক আবশ্যক বলে ঘোষণা দেয়। এছাড়া দেশের বাইরে পড়াশোনা বা চাকরির জন্য কম্পিউটার সনদের বেশ কদর রয়েছে। এ সুযোগে কারিগরি বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেদার আইসিটির ওপর বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদের কোর্সের নামে সনদ বিক্রি শুরু করে। সেসব সনদের বৈধতা দেয় কারিগরি বোর্ড।

শিক্ষা প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নতুন শিক্ষকরা সেই সনদ দেখিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন এবং পরে তা দেখিয়ে এমপিওভুক্ত হন। সারা দেশে প্রায় ৩৬ হাজার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। এর মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার কম্পিউটার শিক্ষক রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই জাল সনদে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কারিগরি বোর্ডের সাবেক একজন চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেসরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা সনদ যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হলে তা পত্রগ্রহণ শাখা থেকে গায়েব হয়ে যেত। কিছু কিছু যদিও আসত, তা সংশ্লিষ্ট শাখা বা সচিবের দপ্তর পর্যন্ত। এরপর সেই চিঠির কোনো হদিস পাওয়া যেত না।

আরও সংবাদ পড়ুন।

৬৭৮জন শিক্ষকের জাল সনদে চাকুরী! ফেরত দিতে হবে ভেতন ভাতার টাকা

আরও সংবাদ পড়ুন।

ঘুষ দুর্নীতির ২০ সিন্ডিকেট শিক্ষা প্রশাসনে

আরও সংবাদ পড়ুন।

২০২ জন শিক্ষকের জাল সনদে চাকরি; ফেরত দিবে বেতন ভাতা, হবে ফৌজদারি মামলা

আরও সংবাদ পড়ুন।

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে ফিরছে বার্ষিক পরীক্ষা

আরও সংবাদ পড়ুন।

মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে – এক ব্যক্তি পরপর দু’বারের বেশি সভাপতি হতে পারবেন না

আরও সংবাদ পড়ুন।

কোচিং শিক্ষকদের নিয়ে কঠোর মাউশি; কোচিং করায় শিক্ষকদের বিষয়ে প্রশিক্ষনে নিষেধাজ্ঞা

আরও সংবাদ পড়ুন।

কোচিং ব্যবসা পরিহারের নিদের্শ রাষ্ট্রপতির

আরও সংবাদ পড়ুন।

সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে ইন্টারনেট সংযোগসহ দুটি কম্পিউটার বাধ্যতামূলক

আরও সংবাদ পড়ুন।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছে মাউশি

আরও সংবাদ পড়ুন।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা – এক বছরেই দেড়’শ কোটি টাকার অনিয়ম

আরও সংবাদ পড়ুন।

ছয় শতাধিক শিক্ষক চাকরি হারাচ্ছেন; তাদের বিরুদ্ধে সাত দফা শাস্তির নির্দেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top