পিরোজপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাত্তার হাওলাদারের অনিয়ম ও দূর্নীতি

Picsart_24-01-23_08-51-51-918.jpg

এলজিইডির বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সহিদুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কর্মকর্তা আগামী ২৩ জানুয়ারি সকাল ১০টায় পটুয়াখালীর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদার, ঠিকাদার সুরেশ বিশ্বাস ও মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. খলিলুর রহমান খানসহ সংশ্লিষ্টদের পটুয়াখালী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসে উপস্থিত থেকে তার বক্তব্য প্রদানসহ তদন্তকাজে সহযোগিতা করতে বলেছেন।

অপরাধ প্রতিবেদকঃ ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ না করে বা আংশিক কাজ করেই কমিশনের বিনিময়ে বিল পরিশোধ করেন তিনি। কাজ পাইয়ে দেওয়া, বিল ও জামানতের চেক পরিশোধের ক্ষেত্রেও নেন কমিশন। আর যেসব ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করেন তবে কমিশন দিতে চান না তাদের বিল পেতে ঘুরতে হয় বছরের পর বছর। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলেও সুবিধাভোগী প্রভাবশালী ঠিকাদারদের খুঁটির জোরে রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আলোচিত এ কর্মকর্তা হলেন পিরোজপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার হাওলাদার। দক্ষিণ অঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীন পটুয়াখালী জেলায় তিনটি বিলের অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে অর্ধ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটি ২৩ জানুয়ারি তাকে হাজির হতে বলেছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার হাওলাদার বর্তমান কর্মস্থলের আগে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে কমিশনের বিনিময়ে কাজ দেওয়া এবং কাজ ঠিকমতো না করেই বিল পরিশোধ করে আলোচিত তিনি। এ ছাড়া গ্রামীণ সড়কের আইডি ব্যবহার করে অবৈধভাবে এলজিইডির বরাদ্দ করে সদর পৌরসভায় শ্বশুরবাড়ি সড়কের আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও করেন। তার দুর্নীতি নিয়ে ওই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়। তবে তার অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেলেও সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে এলজিইডি। প্রধান প্রকৌশলী সরেজমিন গিয়ে সংস্থাটির আওতায় দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীন নির্বাহী প্রকৌশলী সাত্তারের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ের বিভিন্ন অনিয়ম ধরেন। পটুয়াখালী জেলায় তিনটি বিলের অর্থ পরিশোধের বিপরীতে শুধু বিল রেজিস্টার ও ক্যাশবই ব্যতিরেকে অন্য কোনো ডকুমেন্ট (নথি, বিল ভাউচার ও পরিমাপ বহি) সংরক্ষিত না থাকায় প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী জেলায় বরাদ্দ করা অর্থ এবং অগ্রগতি প্রতিবেদনের ব্যয় অর্থের সঙ্গে ৫০ লাখ ৪২ হাজার টাকার গরমিল পান।

এ অনিয়ম তদন্তে এলজিইডির বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সহিদুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কর্মকর্তা আগামী ২৩ জানুয়ারি সকাল ১০টায় পটুয়াখালীর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদার, ঠিকাদার সুরেশ বিশ্বাস ও মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. খলিলুর রহমান খানসহ সংশ্লিষ্টদের পটুয়াখালী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসে উপস্থিত থেকে তার বক্তব্য প্রদানসহ তদন্তকাজে সহযোগিতা করতে বলেছেন।

এলজিইডির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এই নির্বাহী প্রকৌশলী ৫ শতাংশ কমিশন নেন সাধারণ ঠিকাদারদের কাছ থেকে। প্রায় পাঁচ বছর আগে দক্ষিণ অঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীনে পিরোজপুরে আয়রন ব্রিজের জন্য ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার পর এখনও কাজ শুরু না করলেও নির্বাহী প্রকৌশলী তাদের কার্যাদেশ বাতিল করেননি।

অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এর আগে ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) আবদুস সাত্তার হাওলাদারকে পিরোজপুর থেকে ফরিদপুরে বদলি করার পাশাপাশি ২০ সেপ্টেম্বর থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলেও তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি।

এ ছাড়া ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে মো. আমিনুর রহমান যোগ দিলেও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি আবদুস সাত্তার। বরং স্থানীয় একটি প্রভাবশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে ২২ সেপ্টেম্বর তার বদলি আদেশ ৩১ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত স্থগিত করার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ৩১ মার্চ পর্যন্ত বদলি আদেশ স্থগিত থাকলেও পরে এ বদলি আদেশ প্রত্যাহার হয়েছে কি না সে বিষয়ে কর্মকর্তারা কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। বদলি আদেশ স্থগিত করানোর পর থেকে এই নির্বাহী প্রকৌশলীর দাপট আরও বেড়ে যায় এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে ভয় পেতে শুরু করেন বলে জানা গেছে। ঠিকাদার সিন্ডিকেটের জোরে তিনি এখনও দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকাকালে আবদুস সত্তার ২০২০ সালে এপ্রিল ও মে মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২টি আয়রন ও গার্ডার ব্রিজের দরপত্র আহ্বান করেন। পটুয়াখালী পৌর শহরের দক্ষিণ পাশে উপজেলা পরিষদের খালে সেতারা ক্লিনিকের সামনে থেকে ইসহাক মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় দেখানো হয় আটটি লং আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। কিন্তু বাস্তবে সেখানে ব্রিজের কোনো অস্তিত্ব পায়নি তদন্ত কমিটি। বরং সেখানে রয়েছে পৌরসভার আরসিসি রাস্তা ও উভয় পাশে অনেক বহুতল ভবন। একই রাস্তার ওপর দুটি ১৫ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজ দেখানো হলেও সেখানে ব্রিজের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ২০২১ সালের ১১ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের তৎকালীন সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ সরকারি নোটিসে নির্বাহী প্রকৌশলী সাত্তার হাওলাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ণতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

এরপর তাকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতেও বলা হয়েছিল। তবে প্রকৌশলী সাত্তারের ঠিকাদার সিন্ডিকেটের ক্ষমতার জোরে শাস্তি থেকে বেঁচে যান।

সিনিয়র সচিবের নোটিসে বলা হয়েছিল, ‘আপনার কার্যক্রম সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ৩(খ) ও ৩(ঘ) বিধি অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ণতার পর্যায়ভুক্ত অপরাধ। কেননা আপনি পটুয়াখালী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাবস্থায় পটুয়াখালী সদর উপজেলার কাশিপুর বাজার এলাকার সড়কের নির্মাণ কাজে বিটুমিন ৫ দশমিক ০ থেকে ৫ দশমিক ৫ ভাগের স্থলে ৩ দশমিক ৬ ভাগ, ৪ দশমিক ৫ ভাগ ও ৩ দশমিক ৪ ভাগ এবং পুরুত্ব ৪০ মিলিমিটারের স্থলে ৩৬ মিলিমিটার করেছেন। যেহেতু আপনি অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে বর্ণিত ত্রুটিপূর্ণ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন তাই আপনাকে অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ণতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলো।’

আরও সংবাদ পড়ুন।

পিরোজপুরে মঠবাড়িয়ায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে – দুদকে অভিযান

আরও সংবাদ পড়ুন।

সমবায় অধিদপ্তরে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ সিন্ডিকেট; ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার টার্গেট

আরও সংবাদ পড়ুন।

এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সেখ মোহাম্মদ মহসিন এর অনিয়ম-দুর্নীতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top