বরিশাল বিভাগে আওয়ামী লীগে প্রতি আসনে ১২ জন প্রার্থী; ভাই দাঁড়িয়েছে ভাইয়ের বিরুদ্ধে

Picsart_22-12-30_20-44-06-800.jpg

বরিশাল বিভাগে আওয়ামী লীগে প্রতি আসনে ১২ জন প্রার্থী;ভাই দাঁড়িয়েছে ভাইয়ের বিরুদ্ধে

রাজনৈতিক প্রতিবেদকঃ আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন একাধিক জনেরও বেশী। বরিশালের ৬ জেলার ২১ আসনে নৌকা নিয়ে ভোটে লড়তে চান আওয়ামী লীগের ২৫৮ নেতা। যা গড় হিসাবে প্রতি আসনে প্রায় ১২ জন প্রার্থী।

দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন (মঙ্গলবার) পর্যন্ত তারা আবেদন জমা দিয়েছেন কেন্দ্রে। এ হিসাবে বরিশালের ২১ আসনের বিপরীতে গড়ে ১২ জন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন।

সবচেয়ে বেশি ২০ জন করে নৌকা চাইছেন পটুয়াখালী-৩, ৪ ও বরগুনা-১ আসনে। সবচেয়ে কম বরিশাল-১ আসনে জমা পড়েছে মাত্র ১টি মনোনয়ন।

এখানে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ১নং সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির বিরুদ্ধে কেউ নামেননি মনোনয়ন যুদ্ধে। এমন সৌভাগ্য অবশ্য জোটেনি আর কারও ভাগ্যে। দক্ষিণের অন্য দুই প্রভাবশালী নেতা দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি এবং তোফায়েল আহম্মেদ এমপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন চাইছেন ২ ও ৩ জন করে নেতা। সবচেয়ে অবাক বিষয় হচ্ছে, মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছেন যাদের চেনেন না নির্বাচনি এলাকার মানুষ। জীবনে কখনো নাম পর্যন্ত শোনেনি এমন অনেকেও চাইছেন মনোনয়ন। নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার পর ১৮ নভেম্বর থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আবেদন ফরম বিতরণ শুরু করে আওয়ামী লীগ। বরিশাল বিভাগের মনোনয়ন ফরম বিতরণের দায়িত্বে থাকা দলের জাতীয় নির্র্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড. বলরাম পোদ্দার জানান, ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ২১ আসনে ২৫৮ জন নিয়েছেন দলীয় আবেদন ফরম। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৭টি ফরম নিয়েছেন পটুয়াখালী জেলার ৪টি আসনের মনোনয়ন প্রার্থীরা। সবচেয়ে কম ১৫টি গেছে ঝালকাঠী জেলার ২টি আসনের বিপরীতে। ফরম নেওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে আছে বরিশাল জেলা। এই জেলার ৬টি আসনের বিপরীতে নৌকার মনোনয়ন পেতে আবেদন করেছেন ৬৪ জন। এছাড়া পিরোজপুর জেলার ৩টি আসনের বিপরীতে ৩৯ ভোলার ৪টি আসনের বিপরীতে ৩৮ এবং বরগুনার ২টি আসনের বিপরীতে ৩৬ জন দলীয় মনোনয়নের ফরম নিয়েছেন নৌকা পেতে। এদের বেশিরভাগই ইতোমধ্যে ফরম পূরণ করে জমাও দিয়েছেন।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে বরিশাল সদর আসন নিয়ে। এখানে মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন বেশ কয়েকজন জায়ান্ট নেতা। সদর আসনের বর্তমান এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম ছাড়াও এখানে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সদ্য বিদায়ি মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম এবং সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টুসহ ১০ জন। তাদের মধ্যে প্রথম ৩ জনকে নিয়ে চলছে বেশি আলোচনা। বরিশাল সদর আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৩ আসনেও মনোনয়ন চাইছেন জায়ান্ট নেতা নানক। যদিও শোনা যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত নাকি তিনি বরিশাল সদর আসনে মনোনয়নের আবেদন জমা দেননি।

মেয়র পদে দ্বিতীয়বার মনোনয়ন না পাওয়া সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীদের বিশ্বাস এবার আর ভাইয়ের ছেলেকে নিরাশ করবেন না দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে বর্তমান এমপি জাহিদ ফারুক শামিমের পক্ষে বেশ জোরেশোরেই মাঠে নেমেছেন বরিশালের বর্তমান মেয়র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।

অন্য সময়ে এখানে দলের ৩ নেতার বিরুদ্ধে মনোনয়ন লড়াইয়ে নামতেন না কেউ। তারা হলেন-উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, তোফায়েল আহম্মেদ এমপি এবং পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক পদে থাকা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি। তাদের মধ্যে হাসানাত আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে এবারও নৌকা চেয়ে আবেদন করেননি কেউ।

ঝালকাঠী-২ আসনে আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. গোলাম কবির রব্বানী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মিল্লাত হোসেন।

ভোলা-১ আসনে তোফায়েল আহম্মেদ এমপির বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুর রহমান হিরন এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হেমায়েত উদ্দিন মনোনয়ন চাইছেন। শেষ পর্যন্ত তাদের চাওয়া কতটুকু পূরণ হবে তা অবশ্য বলা মুশকিল। কেননা দলের নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল দুই নেতাকে বাদ দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। হেভিওয়েট নেতাদের বিরুদ্ধে অন্যদের মনোনয়ন চাওয়ার পাশাপাশি আরও বেশকিছু চমকপ্রদ ঘটনা ঘটছে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধে। এমন অনেক নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন যাদের চেনেন না খোদ নির্বাচনি এলাকার লোকজন। কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের পটুয়াখালী-৪ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেতে মোট ২০ জন দলীয় আবেদন ফরম নিয়েছেন শুনেছি। এদের মধ্যে এমন অনেকের নাম শুনছি যাদের আমি নিজেও চিনি না।’

ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পিরোজপুর-২ আসনে মনোনয়ন দাখিল করাদের মধ্যে কয়েকজন আছেন যাদের এলাকার সাধারণ মানুষও ভালো করে চেনেন না। অথচ এরা চাইছেন আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি দলের এমপি হতে।’

মনোনয়ন যুদ্ধে ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইয়ের নৌকা চাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি নির্বাচনি এলাকায়। পটুয়াখালী-৪ আসনের সাবেক এমপি সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদারের বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন পেতে আবেদন ফরম জমা দিয়েছেন তার আপন ছোট ভাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান মিলন।

পিরোজপুর সদর আসনের সাবেক এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে মনোনয়নের আবেদন ফরম কিনেছেন তার অপর ৩ ভাই যথাক্রমে পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, পিরোজপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মজিবর রহমান খালেক এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মশিউর রহমান মহারাজ।

এছাড়াও কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের পাশাপাশি মনোনয়নের আবেদন জমা দিয়েছেন তাদের স্ত্রীরা। তবে এ বিষয়টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে নয় তা নিশ্চিত। কোনো কারণে স্বামীর মনোনয়নে জটিলতা হলে সেক্ষেত্রে ব্যাকআপ হিসাবে এই আবেদন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও সংবাদ পড়ুন।

মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর; ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

আরও সংবাদ পড়ুন।

কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই পারে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে : প্রধানমন্ত্রী

আরও সংবাদ পড়ুন।

জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সব দলের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top