রাজধানীর শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজে সমাজকল্যাণ বিষয়ের সাবেক শিক্ষক, গাজীপুরের সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার, ঢাকা জেলার বর্তমান জেলা রেজিস্ট্রার ও বাংলাদেশ রেজিষ্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন এর সভাপতি অহিদুল ইসলাম। ফাইল ছবি।
সাগর চৌধুরীঃ গাজীপুরের সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার, ঢাকা জেলার বর্তমান জেলা রেজিস্ট্রার ও বাংলাদেশ রেজিষ্ট্রেশন সার্ভিস এসোসিয়েশন এর সভাপতি অহিদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা।
ঢাকা জেলার রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামের
দুর্নীতির টাকায় শাশুড়ির নামে ফ্ল্যাট ও নিজের বাবার নামে জমি ক্রয় করে আইনের মারপ্যাঁচে আবার নিজের নামে দলিল করেও শেষ রক্ষা হয়নি।
শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে তার অপকৌশল ধরা পড়েছে। শাশুড়ি ও পিতার নামে গড়া ওই সম্পদের উৎসের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারায় দুদকের মামলার আসামি হয়েছেন তিনি।
দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ঢাকা ১ এ মামলাটি দায়ের করেন।
আসামি জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর২০২৩) দুদকের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজে সমাজকল্যাণ বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
তিনি ২০০৪ সালের ৩ মার্চ বোরহানুদ্দীন কলেজের চাকরি থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন পরিদপ্তরে সাব-রেজিস্ট্রার হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন।
২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি পদোন্নতির মাধ্যমে জেলা রেজিস্ট্রার পদে যোগদান করেন। আর ২০২০ সালের ১ জুলাই গাজীপুর জেলায় বদলি হয়। পরে তিনি ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার পদে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন।
আসামি অহিদুল ইসলাম ২০০৫ সালে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী খুজিস্তা আক্তারা বানু বিসিএস ১৬তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। বর্তমানে ঢাকার বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন।
মামলার এজহারে আরও বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি হলে তিনি ২০২১ সালের আগস্টে তা জমা দেন। সেখানে তিনি ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদর্শন করেন। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তিনি ৩৯ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩ টাকার স্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করলেও ওই সম্পদ তার আয় হতে ক্রয়কৃত নয় বলে জানান।
তার দেওয়া বক্তব্য এবং আয়কর নথির তথ্য মতে ১৯৯৫ সাল হতে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বেসরকারি ও সরকারি চাকরির বেতন ভাতা, পিতা মাতার নিকট হতে দানমূলে প্রাপ্ত জমির আয়, গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে প্রাপ্ত রয়ালটি, গৃহ সম্পত্তির আয়, জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ, শেয়ার ব্যবসার আয় এবং এফডিআর/সঞ্চয়পত্রের মুনাফার প্রাপ্ত অর্থসহ সর্বমোট ২ কোটি ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা আয়ের উৎস প্রদর্শন করেছেন।
সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, তিনি তার নিজ অর্থ দ্বারা তার শাশুড়ির নামে ৩০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট এবং তার পিতার নামে ৭৬ লাখ ৫৩ হাজার -টাকার জমি ক্রয় করে নিজ ও সন্তানের নামে স্থানান্তর করেছেন। সব মিলিয়ে আসামির নামে ২ কোটি ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১ কোটি ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকার বৈধ উৎস পাওয়া যায়। কিন্তু ১ কোটি ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৪৯ টাকার কোনো বৈধ উৎস মেলেনি।
অনুসন্ধান বলছে, আসামির শাশুড়ি ৩০ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেই ৭ মাস পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি অহিদুল ইসলামের নাবালক পুত্র অয়নের নামে হেবা ঘোষণা দলিল মূলে দান করেন। অথচ অহিদুল ইসলামের শাশুড়ির উক্ত ফ্ল্যাট ক্রয়ের মতো আর্থিক ক্ষমতা ছিল না। অবৈধ সম্পদ লুকাতে আসামি এমন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়।
অবৈধ সম্পদ লুকাতে একইভাবে নিজের বাবাকে ব্যবহার করেছেন আসামি অহিদুল। বাবা আনছার উদ্দিন ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ১৬৪.৫৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে তা পরবর্তীতে অপর তিন পুত্র ও কন্যাকে না দিয়ে শুধু আসামির নামে হেবা ঘোষণা দলিল মূলে দান করেন।
যদিও সম্প্রতি,গাজীপুরের জেলা রেজিস্ট্রার থেকে বদলি হয়ে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার পদে যোগ দিয়েছেন অহিদুল ইসলাম। দুদকের মামলা সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে গতচার কর্মদিবস ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি।
ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে, ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের প্রধান অফিস সহকারী বলেন, স্যার সকালে অফিসে এসেছিলেন। অডিটে বেড়িয়েছেন।
যদিও সচেতন মহল বলছেন, দুদকের মামলা হওয়ার পর বর্তমান ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম নিজ পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
এর আগে গতবছর (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১) গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী খুজিস্তা আক্তার বানুর সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব চেয়ে গত রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১) নোটিস পাঠানো হয়েছে, বলে তথ্য নিশ্চিত করেছেন, দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফ সাদেক।
নোটিসে বলা হয়েছে, আগামী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্দিষ্ট ছকে সম্পদের হিসাব দাখিল করতে।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে কমিশনের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, আপনি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে/বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
তাই নোটিস পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নিজের, নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে হবে।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
পীরগাছা উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার ফজলে রাব্বী’র বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগে – দুদকের অভিযান
আরও সংবাদ পড়ুন।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সাব রেজিস্টার ও উচ্চমান সহকারীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগে – দুদকের অভিযান