অতিরিক্ত সচিব নিতিশ চন্দ্র সরকার মেডিকেল কলেজে ভর্তির নামে প্রতারণায় জড়িত
অপরাধ প্রতিবেদকঃ দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির নামে প্রতারণায় একজন সদ্য সাবেক অতিরিক্ত সচিবের নাম এসেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে তাঁর নাম নিতিশ চন্দ্র সরকার। তিনি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার এস এম আনিস নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে সাবেক অতিরিক্ত সচিব নিতিশ চন্দ্র সরকারের।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নিতিশ চন্দ্র সরকার গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে বলেন, মেডিকেল কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে আনিস তাঁর সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি কয়েকটি মেডিকেলে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেননি।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আনিসের নেতৃত্বাধীন প্রতারণা চক্রে সদ্য অবসরে যাওয়া সরকারি একজন কর্মকর্তার নাম এসেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় দালালি ও প্রতারণা–বাণিজ্য করে আনিস ইতিমধ্যে দুটি হোটেল এবং রাজধানীর মনিপুরি পাড়ায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।’
অভিযোগ তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির একটি সূত্র জানায়, এক শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে আনিসের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকা নিয়েছিলেন নিতিশ চন্দ্র সরকার। বিষয়টি নিয়ে আনিসের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের একটি রেকর্ড রয়েছে ডিবির হাতে। তবে এ পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থীকে তিনি ভর্তি করাতে পেরেছেন, সে তথ্য জানা যায়নি। আনিস ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ছাড়াও জাহিদ নামের আরেক ব্যক্তির জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন।
মনিপুরি পাড়া থেকে আনিসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে ২০২৩ সালের চলমান এমবিবিএস পরীক্ষার অনেকগুলো প্রবেশপত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক চেক, পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরিপ্রার্থীদের প্রবেশপত্র, বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, একাধিক প্যাড, পাঁচটি ডিজিটাল ও সনাতন স্ট্যাম্প, সিল এবং একটি মুঠোফোন উদ্ধার করেছে ডিবি।
গ্রেপ্তার আনিসের বরাত দিয়ে ডিবির উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, আনিস এএসসি পাস। তিনি একসময় জুট মিলে কাজ করতেন। রাজধানীর ফার্মগেট ও গ্রিন রোড এলাকায় ভর্তি পরীক্ষার ফরমও বিক্রি করেছেন। একপর্যায়ে তিনি মেডিকেলে ভর্তি প্রতারণায় জড়িয়ে যান।
ডিবি সূত্র জানায়, মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার উদ্দেশ্যে সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে একটি কনসালট্যান্সি ফার্মও খোলেন আনিস।
আগে থেকে এই প্রতারণা করে আসছিলেন জাহিদ। তাঁর মাধ্যমে আনিসের সঙ্গে সাবেক অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। আনিস গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, নিতিশ চন্দ্র সরকার অতিরিক্ত সচিব থাকা অবস্থায় অন্তত ৩০ বার বিভিন্ন কাজে তিনি মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের জন্য আনিসকে পাসের ব্যবস্থাও করে দিতেন তিনি।
আনিসের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি জানিয়েছে, তিনি মূলত শিক্ষার্থী সংগ্রহের কাজটি করতেন। আর ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ফোন করে বলে দিতেন এসব মেডিকেল কলেজের তদারকির দায়িত্বে থাকা ওই অতিরিক্ত সচিব।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।
আরও সংবাদ পড়ুন।