দুদক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মতবিনিময় সভা

Picsart_22-11-22_00-43-31-239.jpg

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে শুধু চুনোপুটিদের ধরে না। বিশ্ব রেকর্ড করার মতো রাঘববোয়ালও ধরেছে। দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। এছাড়া বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা, বিদেশের ব্যাংকগুলোতে অর্থ জব্দ করা, মানিলন্ডারিং মামলায় আসামীদের সাজা, প্রাতষ্ঠিানিক দুর্নীতি চিহ্নিত করে সেগুলো বন্ধের সুপারিশ, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান, তদন্ত এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য রয়েছে কমিশনের।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা হয়। বক্তব্য দেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক। সভা পরিচালনা করেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

আজ দুদকের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ঢাকায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয় ও সারাদেশের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়। গত ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে দুদককে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মানিলন্ডারিং আইনের ২৭টি ধারার মধ্যে ২৬টি ধারার ক্ষমতা ব্যবহার করছে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। মাত্র একটি ধারার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে দুদককে। গুরুত্বপূর্ণ সাতটি ধারার ক্ষমতা চেয়ে দুদক থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্থ পাচার অভিযোগ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সহায়তা নিতে হয়।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদকের মামলায় আসামীদের সাজা নিশ্চিৎ করতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের নিয়ে আইনজীবী প্যানেল গঠন করা হচ্ছে।’

বিদেশে পাচার অর্থ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি দেশে অর্থ ফ্রিজ করা হয়েছে। ওইুসব মামলার রায় কমিশনের পক্ষে গেলে তখন ওইসব অর্থ ফেরত আনা হবে।’

কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কমিশনের অবস্থানকে সুসংহত করা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা হলে সেগুলো যাচাই করে আমলে নিয়ে কমিশন আইনি ব্যবস্থা নেবে। দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ সম্পর্কে কেউ কোনো পরামর্শ দিলে সেটাও সাদরে গ্রহণ করা হবে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনার জহুরুল হক বলেন, ‘সব সময় বলা হয়, দুদক সব সময় চুনোপটিদের ধরে। দুদক কতোগুলো রাঘববোয়াল ধরেছে তা আপনারা দেখছেন কখনও। দেখুন বিশ্ব রেকর্ড করার মত রাঘববোয়াল ধরেছে। এসব খেয়াল করতে হয়। এগুলো বিশ্বে নেই।’ এসব খবর গণমাধ্যমে প্রচার করতে তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

কমিশনার আরও বলেন, ‘মানিলন্ডারিংয়ে দুদকের ভাল অর্জন আছে। সিঙ্গাপুর থেকে এ পর্যন্ত ২১ কোটি টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় ২২ লাখ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত জব্দ করা হয়েছে। কানাডায় ২১টি ব্যাংক হিসাবে ৬৫.৯১ কানাডিয়ান ডলার, ৪৩.৯৫ মার্কিন ডলার জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া অষ্ট্রেলিয়ার ২৪টি ব্যাংক হিসাব থেকে ৬১.৫০ অষ্ট্রেলিয়ান ডলার এবং কানাডিয়ান ৫.৫০ ডলার জব্দ করা হয়েছে। দুদক ২০২০ সালে ৮টি, ২০২১ সালে ১৩টি মানিলন্ডারিং মামলা করেছে। এর মধ্যে ২০২০ ৪টা মামলার চার্জশিট ও ২০২১ সালে আরও একটি মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং মামলায় আসামীদের সাজার হার ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top