কম পুঁজিতে ধনী হতে ইউটিউব দেখে জাল টাকা তৈরি করে চক্রটি

Picsart_22-10-23_20-06-12-639.jpg

কম পুঁজিতে ধনী হতে ইউটিউব দেখে জাল টাকা তৈরি করে চক্রটি

নগর প্রতিবেদকঃ ইউটিউব, ফেসবুক ও গুগল থেকে জাল নোট তৈরির বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান অর্জন করে একটি চক্র।

এরপর জমানো টাকা দিয়ে ল্যাপটপ, প্রিন্টার, প্রিন্টিং ডাইস, পেনড্রাইভ, কাগজ, টিস্যু পেপার ও প্রিন্টারের কালিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনে তারা। এ চক্রের সদস্যদের বয়স তখনো ১৮ পেরোয়নি। তারা আগেই নেমে পড়ে জাল টাকার কারবারে। এর দেড় বছরের মধ্যেই র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন চক্রের চারজন। বর্তমানে তারা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক।

আজ রোববার (২৩ অক্টোবর২০২২) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীর কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. মাউন হোসেন সাব্বির (২১), মো. পারভেজ (২০), মো. তারেক (২০) ও মো. শিহাব উদ্দিন (২০)।

তাদের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকার সমমূল্যের জাল নোট, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি পেনড্রাইভ, অ্যান্টি কাটার, টাকার পানচিং রোল, জিলেটিং ৫০০ গ্রাম, প্রিন্টারে ব্যবহৃত কালির খালি বোতল ১২টি, গালা ৫০০ গ্রামসহ জাল টাকা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা র‌্যাবকে জানিয়েছেন, তারা পরস্পর যোগসাজশে প্রায় এক বছর ধরে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা ও যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট তৈরি করে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতো।

এছাড়াও এ চক্রের সদস্যরা নিজেরাও বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দোকান, মাছের আড়তসহ জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় জাল নোট ব্যবহার করতো।

চক্রের অন্যতম হোতা গ্রেফতার মাউন হোসেন সাব্বির ও এ চক্রের সঙ্গে আরও ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা কম সময়ে অল্প পুঁজিতে ধনী হওয়ার জন্য এ প্রতারণার আশ্রয় নেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ইউটিউব ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তারা জাল টাকা তৈরির প্রতি আকৃষ্ট হন। চক্রের অন্যতম হোতা সাব্বির ফেসবুকে ‘জাল টাকা প্রতারকচক্র বিরোধী পোস্ট’ নামে একটি পেজের মাধ্যমে গ্রেফতার অন্যদের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে তিনি জাল নোটের খুচরা ব্যবসা করার জন্য পরিকল্পনা করেন। ফেসবুকে একটি জাল নোট তৈরি চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। চক্রের কাছ থেকে তিন লাখ টাকার জাল নোট কেনার জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক ব্যক্তিকে ৩৫ হাজার টাকা পাঠান। জাল নোট ক্রয়ের জন্য সে অর্থ দিলেও চক্রটি তাকে কোনো জাল নোট দেয়নি। চক্রের কাছ থেকে জাল নোট না পেয়ে নিজেই জাল নোট তৈরির পরিকল্পনা করেন।

তিনি বলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা প্রথমে মেসেঞ্জারে একটি গ্রুপ খুলে জাল টাকা তৈরির বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করেন। এ গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে শিহাব কাজ করতেন। শিহাবের মাধ্যমে গ্রেফতার দুই সদস্য পারভেজ এবং তারেকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তিনি ইউটিউব, ফেসবুক এবং গুগল থেকে জাল নোট তৈরির বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান অর্জন করেন। বিভিন্ন সময়ে জমানো অর্থ দিয়ে জাল নোট তৈরির জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার, প্রিন্টিং ডাইস, পেনড্রাইভ, কাগজ, টিস্যু পেপার ও প্রিন্টারের কালিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয় করেন।

র‌্যাবের এ মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতার সাব্বির বগুড়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ২০১৯ সালের শেষের দিকে ঢাকায় আসেন। মিটফোর্ডে তার এক মামার ওষুধের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি অনার্স প্রথমবর্ষে অধ্যয়নরত। তিনি নিজ পেশার আড়ালে জাল নোট তৈরি চক্রটির অন্যতম হোতা হিসেবে প্রায় এক বছর ধরে চক্রটি পরিচালনা করছিলেন।

গ্রেফতার শিহাব স্থানীয় একটি কলেজে ডিগ্রি প্রথমবর্ষে অধ্যয়নরত। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সাব্বিরের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে এ চক্রের সঙ্গে তিন জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইউটিউব দেখে জাল নোট প্রিন্ট করার ধারণা নেন। চক্রটিতে জাল টাকা প্রিন্টিং, কাটিং ও প্যাকিংয়ের কাজ করতেন শিহাব। তিন প্রায় এক বছর ধরে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত’ বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top