ফরিদপুরের সাবেক জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সাগর চৌধুরীঃ আসামী আবুল ফজল মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন (৬০), সাবেক অডিটর (বর্তমানে অবঃ), জেলা হিসাব রক্ষণ অফিস, ফরিদপুর, তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মোট ৩৯,১৫,৬৮৮/- টাকার সম্পদের তথ্য প্রদর্শন না করে গোপণ করে মিথ্যা তথ্য প্রদান সহ অবৈধ উৎস হতে মোট ৪১,২৫,৯২১/- টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা কার্যালয়, ফরিদপুর এর উপপরিচালক, রেজাউল করিম বাদী হয়ে আজ দুদক, সজেকা, ফরিদপুর-এ একটি মামলা দায়ের করেছেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক আবুল ফজল মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এর প্রতি তার নিজের, তার স্ত্রীর ও তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে/বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাব সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও উহা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী ফরম নং-০০০২৮৫৮ জারী করা হয়। তিনি গত ২৪/০৩/২০২০ খ্রি: তারিখে উপপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ফরিদপুর বরাবরে তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন যা দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকার ই/আর নং-তদন্ত-১/১৬২/২০২০/ফরিদপুর ভুক্ত করে যাচাই/অনুসন্ধান করা হয়।
দেখা যায়, দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে আবুল ফজল মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ২৪/০৩/২০২০ খ্রি: পর্যন্ত সময়ের মোট ৬১,৭২,৫০০/- টাকার স্থাবর ও ৪৬,২০০/- টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদর্শন করেন। যাচাই/অনুসন্ধানকালে তার ৭৪,৩১,৭২৫/- টাকার স্থাবর এবং ২৭,০২,৬৩৩/-টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তিনি(৭৪,৩১,৭২৫-৬১,৭২,৫০০)= ১২,৫৯,২২৫/- টাকার স্থাবর ও (২৭,০২,৬৩৩- ৪৬,২০০)= ২৬,৫৬,৪৩৩/- টাকার অস্থাবর মোট (১২,৫৯,২২৫+২৬,৫৬,৪৩৩)= ৩৯,১৫,৬৮৮/- টাকার সম্পদের তথ্য প্রদর্শন না করে গোপণ করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
যাচাই/অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি ২০১৬-১৭ করবর্ষের পূর্বের সঞ্চিত আয় দ্বারা ৪,২০,০০০/- টাকা স্থাবর সম্পদ এবং ৩,৬৬,৩৫০/- টাকা সঞ্চয় দেখিয়ে আয়কর নথি দাখিল করেন। তার চাকুরী জীবনের আয়ের দ্বারা ২০১৬-১৭ করবর্ষের পূর্বের অর্জিত ও প্রদর্শিত সম্পদ আয়ের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ মর্মে প্রতীয়মান হয়। সে বিবেচনায় তার ২০১৬-১৭ করবর্ষ হতে সম্পদ বিবরণী দাখিল পর্যন্ত অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, আয়-ব্যয় ও দায়-দেনার বিষয়ে যাচাই/অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়।
উক্ত সময়ে স্থাবর ৭০,৮৯,৭২৫/- টাকা ও অস্থাবর ২৬,৬৮,৩৩৩/- টাকার সর্বমোট (৭০,৮৯,৭২৫+২৬,৬৮,৩৩৩)= ৯৭,৫৮,০৫৮/- টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায় এবং দায়ের পরিমাণ ২৪,৬২,৮৫৭/- টাকা।
উক্ত ২০১৬-১৭ করবর্ষ হতে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত সময়ে তিনি পূর্বের সঞ্চয়, বেতনভাতা, কৃষি আয়, নিজ ও স্ত্রীর নামীয় জমি বিক্রয় হতে আয়, গৃহ নির্মাণ ঋণ হতে আয় সহ বৈধ উৎস হতে সর্বমোট ৭৩,৬৪,৫৬৫/- টাকা আয় করেন এবং পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় করেন ১৭,২২,৪২৮/- টাকা।
এক্ষেত্রে তার সঞ্চয় ৫৬,৪২,১৩৭/- টাকা। অর্থাৎ উক্ত ৯৭,৫৮,০৫৮/- টাকা সম্পদের বিপরীতে তার নীট আয় ৫৬,৪২,১৩৭/- টাকা। সুতরাং তিনি (৯৭,৫৮,০৫৮-৫৬,৪২,১৩৭)= ৪১,১৫,৯২১/- টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এমতাবস্থায়, আসামী আবুল ফজল মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন (৬০), সাবেক অডিটর (বর্তমানে অবঃ), জেলা হিসাব রক্ষণ অফিস, ফরিদপুর এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ফরিদপুরে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩৯,১৫,৬৮৮/- টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদর্শন না করে গোপণ করতঃ মিথ্যা তথ্য প্রদানসহ ২০১৬-১৭ করবর্ষ হতে ২৪/০৩/২০২০ খ্রি: পর্যন্ত সময়ে ৪১,২৫,৯২১/- টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ফরিদপুর এর উপপরিচালক, রেজাউল করিম বাদী হয়ে আজ দুদক, সজেকা, ফরিদপুর-এ একটি মামলা দায়ের করেছেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ জানান, তদন্তকালে অত্র মামলার অপরাধের সহিত অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইনামলে আনা হবে।