বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’
আবহাওয়া প্রতিবেদকঃ কাটফাটা তাঁতানো রোদকে ঢাকা দিচ্ছে কালো মেঘ। গত কয়দিনে তাপমাত্রা কমেছে ক্ষাণিকটা। হাঁসফাঁস গরমের ভাবটা ম্রিয়মাণ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চোখ রাঙাচ্ছে বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’। ইতিমধ্যে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণাবর্তটি প্রবল সাইক্লোনে রূপান্তরিত হতে চলেছে।
আজকালের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে প্রথমে লঘুচাপ অতঃপর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা-খুলনা জেলায় আঘাত হানতে পারে। নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার পর এটির গতিপথ কোন দিকে যাবে তা জানা যাবে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাস্টেনিবিলিটির আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল (পলাশ) বলেন, এই মুহূর্তে ঘূর্ণাবর্তটি অবস্থান করছে দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং সন্নিহিত এলাকায়। গত ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো থেকে প্রাপ্ত পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির প্রাথমিক প্রক্রিয়া নিম্নচাপ সৃষ্টি হবে ৭ মে।
সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির স্থলভাগে আঘাত করার সময় তিন দিন পিছিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির গতিমুখও পরিবর্তন হয়েছে। ১৪ মে সকাল থেকে ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবনের ওপর দিয়ে (ইউরোপিয়ান মডেল অনুসারে) ও আমেরিকান মডেল অনুসারে ১৩ মে দুপুরের পর থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাতের আশঙ্কার কথা নির্দেশ করছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির স্থলভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। ইউরোপিয়ান মডেলের পূর্বাভাস সঠিক প্রমাণিত হলে ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে। পক্ষান্তরে আমেরিকান মডেলের পূর্বাভাস সঠিক প্রমাণিত হলে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে প্রভাব বেশি পড়বে।
স্মরণযোগ্য, মে মাস মানেই রাক্ষুসে, সর্বনেশে ঝড়ের মাস। ফ্ল্যাশব্যাকে চোখ রাখলে ট্র্যাক রেকর্ডটা এই রকম :২০০৯ সালের ২৫ মে ধেয়ে এসেছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। যার বীভৎসতায় ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছিল সুন্দরবন। ১১ বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে এই অঞ্চলে পুনরায় আছড়ে পড়েছিল ‘আম্ফান’। সেটাও ছিল এই মে মাস। ২০ মে! পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৬ মে হাজির হয়েছিল ‘ইয়াস’। এবার আসছে ‘আসানি’। নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া। ‘আসানি’ মানে ক্ষুব্ধ।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, দক্ষিণ আন্দামান সাগরের সম্ভাব্য লঘুচাপটি আজ শুক্রবার সৃষ্টি হতে পারে। এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হতে যাওয়া লঘুচাপটি পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও বাংলাদেশের দিকে মুখ করে আছে। তবে এর গতিপথ একেক সময় একেক দিকে দেখাচ্ছে। এ জন্য বলা মুশকিল, এটি তৈরি হলেও আসলে কোন দিকে ধাবিত হবে। তবে আমাদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী এটি পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা ও বাংলাদেশে আসবে। বাংলাদেশে প্রবেশ করলে ঘূর্ণিঝড়টি কোন দিকে আঘাত হানতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না, এটি কোন দিকে আঘাত হানবে। যে কোনো দিকে আঘাত হানতে পারে। এ ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের পশ্চিম অঞ্চলে যেতে পারে আবার পূর্বাঞ্চলেও যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি পর্যাপ্ত – প্রতিমন্ত্রী
ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ মোকাবিলায় সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় পূর্ব প্রস্তুতি বিষয়ে আয়োজিত সভা শেষে এ তথ্য জানান তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গতকাল জানতে পেরেছি, ভারত মহাসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি ‘ঘূর্ণি’ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আগামী ৯ মের মধ্যে লঘুচাপে রূপ নিতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ হবে।
তিনি বলেন, ১১ তারিখের দিকে নিম্নচাপে রূপান্তরিত হবে। পরে এটি গভীর নিম্নচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরের আশঙ্কা করা যাচ্ছে। যদি এটি ‘ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নেয় তাহলে এর নাম হবে ‘আসানি’। এর ল্যান্ডফলটা এখন পর্যন্ত ক্যালকুলেশন হয়নি। নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পর জানাতে পারব কবে এটা বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ দেশ। আমাদের অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে, লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এজন্য আমরা আজ এসওডি অনুযায়ী প্রাথমিক সভা ডেকেছি। সভায় ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আলোচনা করেছি। কবে লঘুচাপ, কবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটা স্টেপে আমাদের প্রস্তুতি কী, কাদের আমরা সংযুক্ত করব, কাদের দায়িত্ব দেব, কাদের নির্দেশনা দেব সেগুলো আমরা আজ ঠিক করেছি। পরবর্তীতে যদি সতর্কতা সংকেত দেওয়া হয় এবং আরেকটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে নির্দেশনাগুলো মাঠ পর্যায়ে দেওয়া হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিপিপি ভলান্টিয়ারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করছে, আমাদের যে এসওডি আছে সে অনুযায়ী কখন কী করতে হবে সে অনুযায়ী যেটা দরকার ছিল সবাইকে জানানো সেটা আমরা জানিয়ে দিয়েছি।