পুলিশে ৪৮ বছরে নারী সদস্য ৮ শতাংশ

PicsArt_08-09-12.06.35.jpg

পুলিশে ৪৮ বছরে নারী সদস্য ৮ শতাংশ

বিশেষ প্রতিনিধি-‘উন্নয়নের রোল মডেল’ বাংলাদেশে বর্তমানে সব ক্ষেত্রেই বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। সংখ্যায় কম হলেও পুরুষের সঙ্গে সমান তালে অবদান রাখছেন নারীরা। তবে টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশ বাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৮ দশমিক ০২ শতাংশ।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, পুলিশ বাহিনীতে ক্রমেই বাড়ছে নারীর প্রাধান্য। যোগ্যতা ও সুযোগ অনুযায়ী বড় ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি ও দায়িত্ব পাচ্ছেন তারা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে জাতিসংঘ শান্িতরক্ষা মিশনেও উজ্জ্বল ভূমিকায় নারী পুলিশ সদস্যরা। স্বাধীনতার পর পুলিশ বাহিনীতে কোনো নারীর অংশগ্রহণ ছিল না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে প্রথম আট জন নারী কনস্টেবল নিয়োগ দেন। তবে তারা কাজ করতেন সাদা পোশাকে। এরপর পুলিশের পোশাকে নারী সদস্যদের নিয়োগ শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। মাত্র ১১ জন নারী সদস্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে যে পথচলা শুরু সেখানে আজ পুলিশে নারীর সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। যা প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের জুলাইয়ের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত মোট নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৪০২, যা ছিল সে সময়কার বাংলাদেশ পুলিশের মোট জনবলের ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত মোট জনবলের সংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৯ জন। এরমধ্যে নারীর সংখ্যা ১৫ হাজার ২৩৯ জন। যা মোট জনবলের ৮ দশমিক ০২ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় যা বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, পুলিশে উচ্চপর্যায়ে অর্থাত্ বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত প্রথম শ্রেণির নারী পুলিশ কর্মকর্তা ২৯৬ জন। এর মধ্যে ডিআইজি (গ্রেড-৩) দুই, অতিরিক্ত ডিআইজি তিন, পুলিশ সুপার ৮০, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১২১ ও সহকারী পুলিশ সুপার ৯০ জন। এছাড়া পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ১১৪, উপ-পরিদর্শক (এসআই) ৮৫৮, সার্জেন্ট ৫৭, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এক হাজার ১৩৩, এএসআই (স্বশস্ত্র) তিন, নায়েক ২৬১ ও নারী কনস্টেবল ১২ হাজার ৫১৭ জন।

১৯৮৬ সালে প্রথম সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে ফাতেমা বেগমের যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে উচ্চপর্যায়ে (বিসিএস) নারী নিয়োগ শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী পুলিশ অফিসারদের নিয়োগ চালু করেন। ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএসে আট জন নারী সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে নারীদের প্রবেশাধিকার আবার উন্মুক্ত হয়।

পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে নারী সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও আগে ট্রাফিক সার্জেন্ট পদে নারী সদস্যদের দেখা যায়নি। ২০১৭ সালে ৩২ জন নারী সার্জেন্টের যোগদানের মধ্য দিয়ে সার্জেন্ট হিসেবে রাজপথে কাজ করতে শুরু করেন নারী পুলিশ সদস্যরা। বর্তমানে শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগেই কাজ করছেন ৫২ নারী পুলিশ সদস্য।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ডিএমপিতে মোট জনবল ৩০ হাজার ৩৫৯ জন। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা ২৯ জন। পুরুষ কর্মকর্তা ৩০০ জন। নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে যুগ্ম কমিশনার এক জন, উপ-কমিশনার (ডিসি) তিন জন, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ১২ জন আর সহকারী কমিশনার (এসি) রয়েছেন ১৩ জন।

ডিএমপিতে সহকারী কমিশনারের নিচে নারীর সংখ্যা ২ হাজার ২৮ জন। এর মধ্যে পরিদর্শক আট, এসআই ১১৮, সার্জেন্ট ৩৫, এএসআই (নিরস্ত্র) ১৫৯, নায়েক ৪৩ ও কনস্টেবল ১ হাজার ৬৬৫ জন। বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিওএন) সূত্র জানায়, নারী পুলিশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, নেতৃত্ব ও দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০০৮ সালে চালু করা হয় উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক। ২০১২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় নারী পুলিশের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারী পুলিশের ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হয়। ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্িতরক্ষা কার্যক্রমে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরাও। চলতি বছরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৪৪ নারী পুলিশ সদস্য জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমানে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত ও বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিওএন) সভাপতি ডিআইজি আমেনা বেগম বলেন, দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ পুলিশের জয়যাত্রা চলছে। এতে পুরুষের মতো নারী পুলিশ সদস্যদেরও রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। সমাজে নারীর নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হলে পুলিশের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

কর্মক্ষেত্র হিসেবে পুলিশে নারী সদস্যদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্য ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধে নীতিমালা ও কর্মপম্হা ২০২১’ গ্রহণ করা হয়েছে। সুপিÌম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার ভিত্তিতে পুলিশ সদর দপ্তরের গাইড লাইনস অনুসরণ করে সব বিভাগে নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে এ নীতিমালা ও কর্মপম্হা প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top