দৌলতখানে অর্থ নিয়ে সচ্ছলদের ঘর; বঞ্চিত
অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা
ভোলা জেলা প্রতিনিধিঃ অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ভোলার দৌলতখান উপজেলায়ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পাকা ভবন নির্মাণের নির্দেশ আসে। কিন্তু মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে দৌলতখান উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ইউনিয়ন সমাজকর্মী গিয়াস উদ্দিনের যোগসাজশে সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পাঠিয়ে ঘর পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন বঞ্চিত অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা।
দৌলতখান উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দৌলতখান উপজেলার অসচ্ছল/ভূমিহীন বীর মুক্তিদ্ধোদের জন্য আবাসন বরাদ্দ সংক্রান্ত অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ২১ জনের নাম চূড়ান্ত করে ৪ অক্টোবর ২০২০ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। চলতি বছরের ৩ আগস্ট মন্ত্রণালয় থেকে ২১ জনের বিপরীতে ১২ জনের নামে ঘর বরাদ্দ হয়ে এলেও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশই বাদ পড়েছেন এ তালিকা থেকে। তবে অভিযোগ ওঠে এখানে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নামও ওই তালিকায় পাঠানো হয়।
দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মৃত সোবহান হাওলাদারের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন হাওলাদার অভিযোগ করে জানান, মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বর্তমানে অর্থের অভাবে তিনি জরাজীর্ণ একটি ঘরে বসবাস করেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিয়েই চলে তার সংসার। কিন্তু অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের তালিকায় ২ নম্বরে তার নামটি দেখেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ওই সময় উপজেলা সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী গিয়াস উদ্দিন তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চান। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় গিয়াস উদ্দিন তার নামটি পাঠাননি। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে আসা ১২টি নামের মধ্যে তার নাম আসেনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মাও. আবু ছাইদের ছেলে ইকবাল হোসেন জানান, মেঘনা নদী ভাঙনে ঘর-ভিটে হারিয়ে অসহায় হয়ে দৌলতখান উপজেলা পরিষদের প্রাচীরের সঙ্গেই পরিত্যক্ত সরকারি একটি ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করছেন। অর্থের অভাবে আজও একটি ঘর নির্মাণ করতে পারেনি। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের তালিকার ২১ জনের মধ্যে ১ নম্বরে ছিল তাদের নাম। ওই সময় তার কাছেরও ঘর পাইয়ে দেওয়া কথা বলে গিয়াস উদ্দিন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তারও নাম পাঠানো হয়নি। তিনি আরও অভিযোগ করে জানান, ২১ জনের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে ৯ জনকে বাদ দিয়ে ১২ জানের নামে ঘর এসেছে। এই ৯ জনকে যদি মন্ত্রণালয়ই বাদ দিত তাহলে প্রথম ১২ জন রেখে শেষের ৯ জন বাদ পড়ত। কিন্তু এখানে তা হয়নি। আমরা যারা টাকা দিতে পারিনি তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে টাকা চাওয়া বিষয়টি অস্বীকার করে সমাজকর্মী গিয়াস উদ্দিন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন মুক্তিযোদ্ধারা এমনটাই দাবি করে জানান, যা কিছু হয়েছে কমিটির সদস্যদের মাধ্যমেই হয়েছে। আমার এখানে কোনো হাত নেই।
দৌলতখান উপজেলার নির্বাহী অফিসার তারেক হাওলাদার জানান, ঘর বরাদ্দ হয়ে টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখনো নির্মাণ কাজের অনুমতির বিষয়টি ছাড়াও দাপ্তরিক কিছু কাজকর্ম রয়েছে। তার আগে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ নতুন করে যাচাই-বাছাই করে দেখব। যদি তালিকায় সচ্ছল কোনো মুক্তিযোদ্ধা থাকে, প্রয়োজনে তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন করে প্রকৃত অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ঘর দেওয়া হবে।