ভোলার মেঘনায় বেপরোয়া জলদস্যুরা – ১ সপ্তাহে ১৫ নৌকায় ডাকাতি
জেলা প্রতিনিধিঃ ভোলায় মেঘনা নদীতে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলার ডাকাতির শিকার হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে মেঘনার জেলেরা। এই চিত্রে নিস্ব হচ্ছে জেলেরা! নির্বিকার স্থানীয় মহলদার,ঘাট ব্যবসায়ী,মাছ ব্যবসায়ী এবং দাদন দাতারা।
ভরা মৌসুমেও ইলিশ সহ অন্যান্য মাছের আকাল থাকলেও থেমে নেই মেঘনার জলদস্যুদের তৎপরতা। জেলেরা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে মাছ শিকার করতে গিয়ে জাল নৌকা ও মাছ ধরার সরঞ্জামাদি হারিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছে নিস্ব হয়ে।
মেঘনায় জলদস্যুরা নৌকা ও জেলেদেরকে জিম্মি করে নৌকা ভেদে হাজার হাজার টাকা, ক্ষেত্র বিশেষে লক্ষ লক্ষ টাকা মুক্তিপন আদায় করে নিচ্ছে। বেঁধে দেয়া পনের টাকা জিম্মি হওয়া জেলেদের স্বজনরা জলদস্যুদের দেয়া বিকাশ নাম্বারে না দেয়া পর্যন্ত জাল নৌকা ও জেলেদের মুক্তি মেলে না। টাকা দিতে লেট হলে চলে শারিরীক নির্যাতন এমনকি জেলেদের করা হয় হত্যা।
বাধ্য হয়েই ধার দেনা করে জলদস্যুদেরকে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনা ভুক্তভোগীর পরিবার। আর প্রাণভয়ে এসব নীরবে হজম করে যান জেলেরা। প্রশাসন ও আইনশৃংখলা সংস্থাকে জানাতে ভয় পান। জানালেও এরা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন!
দিনের বেলা মাছ ধরতে গিয়ে শার্টের ওপরে নৌপুলিশের জ্যাকেটপরা একটি চক্রের চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেরা। জেলেদের অভিযোগ নানান ছুতায় নৌকাসহ জেলেদেরকে আটক করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে তারাও জলদস্যুদের কৌশলই অবলম্বন করে থাকেন।
সোম ও মঙ্গলবার দু’দিন উপজেলার মেঘনা সংলগ্ন জেলে অধ্যুসিত ঘোষের হাট, মাঝির হাট, সাতবাড়িয়া ও এসহাক মোড় এলাকায় সরেজমিন ঘুরে জেলেদের দেয়া বক্তব্যে এসব তথ্য জানা যায়। এসময় তাদের চোখে মুখে ভীতির ছাপ ছিলো স্পষ্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব জেলেরা জানান, গত এক সপ্তাহে দৌলতখানের জেলেদের ১৫ টি নৌকা জলদস্যুদের ডাকাতির শিকার হয়েছে। গত ২৩ জুন গভীর রাতে উপজেলার এসহাক মোড় এলাকার শাহাবুদ্দিন মাঝির নৌকা, ২৫ জুন রাতে একই এলাকার ইদ্রিছ মাঝির নৌকায় হানা দিয়ে জলদস্যুরা জেলেদেরকে বেধড়ক পিটিয়ে জাল, মাছ, সোলার প্যানেল, জেলেদের মোবাইল ফোনসহ সব সরঞ্জাম নিয়ে যায়। ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে ২৬ জুন রাতে।
ওই এক রাতেই মেঘনায় দৌলতখানের এসহাক মোড় এলাকা থেকে বোরহান উদ্দিনের হাকিমুদ্দিন, তজুমদ্দিন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ছয়টি মাছ ধরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে বলে জেলেরা জানান। এদের মধ্যে জসিম মাঝি ও কামাল মাঝির দু’টি নৌকা এক লাখ টাকা ডাকাতদের দিয়ে জিম্মি করা নৌকা ও জেলেদেরকে ছাড়িয়ে আনা হয়।
২৪ জুন রাতে দৌলতখানের পাতার খাল ঘাট থেকে মোল্লা মাঝির ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি নিখোঁজের পর আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ সব ঘটনা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা সংস্থাকে জানানো হচ্ছে না কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জেলেরা বলেন, তাহলে আমরা জীবন নিয়েই নদী থেকে ফিরতে পারবো না।
এ ব্যাপারে নৌপুলিশের হাকিমুদ্দিন ক্যাম্পের ইনচার্য রুহুল আমিন বলেন, মেঘনায় দিনরাত নৌপুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা শুনেছি একটি চক্র নৌপুলিশ ও আইনশৃংখলা সংস্থার নাম করে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে।
তিনি আরও জানান, দৌলতখান ও তজুমউদ্দিনে জেলেদের নৌকায় ডাকাতির বিষয়টি আমরা শুনিতে পেরেছি। ডাকাতি রুখতে নৌপুলিশের টহল আরও বৃদ্ধি করা হবে বলে এ কর্মকর্তা জানান।