অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন কারা!
বিশেষ রিপোর্টঃ প্রশাসনে আবারও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি হতে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে ১৩তম ব্যাচের যাদের বিবেচনায় নেওয়া হয়নি তাদের ভাগ্য এবার সুপ্রসন্ন হচ্ছে। সঙ্গে যথারীতি লেফটআউট তালিকা থেকেও বেশ কয়েকজন পদোন্নতি পাবেন। পদোন্নতির এ ট্রেন ধরতে ১৫তম ব্যাচ বেশ জোরেশোরে চেষ্টা-তদবির করলেও এ যাত্রায় তাদের বিবেচনায় নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এদিকে সময় প্রমার্জন দিয়ে ১১তম ব্যাচের অতিরিক্ত সচিবদের সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার প্রাথমিক আভাস মিলেছে। তবে এ প্রস্তাবের নানান যৌক্তিকতা নিয়ে এসএসবির বৈঠকে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে।
গত ২৬ সেপ্টেবর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শনিবার অতিরিক্ত সচিব পদে ৯৮ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ১৩তম ব্যাচকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু এই ব্যাচের যেসব কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর যুগ্মসচিব হয়েছিলেন তাদের সবাইকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এ তালিকায় অতিরিক্ত সচিব হওয়ার জন্য ১২২ জন ফিট থাকলেও বিবেচনায় নেওয়া হয় ৮৮ জনকে। যাদের মধ্যে পদোন্নতি পান ৬৭ জন। বাকিরা পদোন্নতিবঞ্চিত হন বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া বিবেচনার বাইরে থেকে যায় ৩৪ জন। এভাবে ব্যাচ ভেঙে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার ঘটনাটি নজিরবিহীন ছিল বলে সে সময় কর্মকর্তাদের অনেকে দাবি করেন। তারা বলেন, ১৯৯৪ সালে একবার এভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর আর ঘটেনি।
গুরুত্বপূর্ণ এ পদে ব্যাচমেটদের সঙ্গে পদোন্নতি না পাওয়ায় কর্মস্থলে এবং সামাজিক কর্মসূচিতে বিব্রত হওয়ার মনোকষ্টে আছেন অনেকে। তবে ৯ মাসের মাথায় তাদের সে কষ্ট ঘুচতে যাচ্ছে। ৬ জুন দুপুর ২টায় এসএসবির বৈঠক আহবান করা হয়েছে। এদিন লাইনপোস্টের অন্যান্য এজেন্ডার পাশাপাশি অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে আলোচনা হবে। বিবেচ্য কর্মকর্তার সংখ্যা কম হওয়ায় এক বৈঠকেই সুপারিশ চূড়ান্ত হওয়ার কথা। প্রয়োজনে বৈঠক মুলতবি রেখে একাধিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে।
এবার ১৩তম ব্যাচসহ পদোন্নতিবঞ্চিত সিনিয়র কর্মকর্তারাও প্রত্যাশা করছেন এ যাত্রায় যেন তাদের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। কেউ কেউ বলেন, কারও বিষয়ে কোনো সংস্থার নেতিবাচক মন্তব্য থাকলে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে গোপনীয় প্রতিবেদন এনে যাচাই করা উচিত।
আবার ১১তম ব্যাচকে সময় প্রমার্জন দিয়ে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে ব্যাচের নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাদের অনেকে বেশ কিছুদিন থেকে চেষ্টা-তদবির করে আসছেন। বিশেষ করে সরকারের গুডবুকে থাকা এ ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই তাদের ক্ষেত্রে যেন সচিব করার শর্ত হিসেবে চাকরির মেয়াদ ২ বছর থাকার অলিখিত নিয়ম প্রয়োগ করা না হয়, এমন চাপও প্রবল রয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলও চান, বিশ্বস্ত ও অধিকতর যোগ্য কর্মকর্তাদের সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে চাকরির মেয়াদ ২ বছর থাকার শর্ত আরোপ করা সমীচীন হবে না। দরকার হলে সময় প্রমার্জন দিয়ে তাদের সচিব পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে সরকারের আস্থাভাজন ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে ১০ম ব্যাচের যেসব কর্মকর্তা এখনো সচিব হতে পারেননি, তাদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।
এজন্য ১১তম ব্যাচকে এখনই সচিব করার ঘোরবিরোধী ১০ম ব্যাচের অনেকে। ১১তম ব্যাচকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর। ওই ব্যাচের ১২৬ জন ফিট কর্মকর্তার মধ্যে পদোন্নতি পান ৯৬ জন। নিয়মিত ব্যাচসহ সে সময় মোট ১৫৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী সচিব পদে পদোন্নতি পেতে হলে অতিরিক্ত সচিব পদে ২ বছর কর্মরত থাকতে হবে। এছাড়া বিদ্যমান অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী চাকরির মেয়াদ থাকতে হবে আরও ২ বছর। এ হিসাবে ১১তম ব্যাচ সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করবে আগামী ২৩ অক্টোবর। তাই এ ব্যাচ থেকে এখন সচিব পদে পদোন্নতি দিতে হলে বাকি ৪ মাস সময় প্রমার্জন করতে হবে। অতীতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত সচিব পদে নিয়োগ দিয়ে ৬ মাস সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে ডিসি ফিটলিস্টের মতো এসএসবির বৈঠকে সচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ সংবলিত ফিটলিস্ট তালিকা প্রস্তুত করা হয়। ওই তালিকা থেকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তবে ডিসি ফিটলিস্টের মতো তালিকায় থাকলেও যেমন সবাইকে ডিসি করা হয় না, তেমনি সচিবের ফিটলিস্ট তালিকা থেকে সরকার যাকে দায়িত্ব দিতে চান তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হয়।
সিনিয়র ব্যাচের চাপা ক্ষোভ : কর্মরত অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে সিনিয়র ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তা রোববার বলেন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৮৪ ব্যাচের ৪ জন, ৮৫ ব্যাচের ৪৮ জন, ৮৬ ব্যাচের ৩৭ জন কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। যাদের অনেকে সচিব হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। অথচ বিনা দোষে তাদের ৯/১০ম ব্যাচের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। যা খুবই বেদনার। অতীতে জুনিয়রের অধীনে এত বেশি কর্মকর্তার কাজ করার নজির নেই। তারা আরও বলেন, যুগ্মসচিব পদে ৮৫ ব্যাচের ৩২ জন এবং ৮৬ ব্যাচের ৩১ জন কর্মরত আছেন। অথচ বর্তমানে ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও যুগ্মসচিব। ২০তম ব্যাচও যুগ্মসচিব হওয়ার পথে।
ইতোমধ্যে ১৩তম ব্যাচকে অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে এবং ১৫তম ব্যাচও অতিরিক্ত সচিব হওয়ার অপেক্ষায়। এ অবস্থায় তারা মনে করেন, হয়তো এসব অধিকতর সিনিয়র কর্মকর্তাদের সচিব না করার পেছনে অনেক যুক্তি থাকতে পারে। আমরা সে বিতর্কে যাচ্ছি না। তবে মর্যাদা সুরক্ষার বিকল্প হিসেবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে যেসব সংস্থায় সচিব ও গ্রেড-১ এর পদ রয়েছে, সেখানে অন্তত তাদের পদায়নের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা সিনিয়র স্যারদের অভিযোগ ও আবেগের সঙ্গে হয়তো অনেক ক্ষেত্রে একমত পোষণ করব। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় এর চেয়ে ভালো আর কী করা সম্ভব ছিল। মূলত সমস্যা হলো- উপরের দিকে থাকা ৮২, ৮৪, ৮৫ ও ৮৬ ব্যাচের মতো বড় ব্যাচগুলোর কারণে নিচের দিকে বহুদিন থেকে চিঁড়েচ্যাপটা অবস্থা বিরাজ করছে। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই, সচিব হওয়ার মতো অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা এখনো রয়ে গেছেন; কিন্তু তাদের প্রত্যেককে সচিব করতে হলে প্রশাসনে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হবে। প্রশাসন পিরামিড ঠিক রাখতে হলে প্রতিটি ব্যাচকে যথাসময়ে উপরে তুলে আনতে হবে।’