দেশের সব আদালত খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন – খন্দকার মাহবুব
বিশেষ প্রতিবেদকঃ করোনায় দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকায় মামলার ভয়াবহ জট তৈরি হচ্ছে- এজন্য দ্রুত দেশের সব আদালত খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
শনিবার (২৯ মে) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী।
তিনি বলেন, সুরক্ষা মেনে দ্রুত সব আদালত খুলে না দিলে বর্তমানে যে অবস্থা আছে তা যদি চলতে থাকে তাহলে বিচার বিভাগ ভেঙে পড়বে, ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়বে। বিচারের প্রতি যদি মানুষের অনীহা আসে তাহলে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তিনি।
খন্দকার মাহবুব বলেন, করোনার আগেই আমাদের বিচার বিভাগ মামলার সংখ্যা নিয়ে একটা সঙ্কটপূর্ণ অবস্থায় ছিল। করোনার পরে দীর্ঘদিন নিম্ন আদালত উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে সেই সঙ্কট একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে গণপরিবহনসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। অথচ বিচার বিভাগ এমন একটা অবস্থায় রয়েছে যে, মানুষ বিচার না পেয়ে হতাশার মধ্যে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই অবস্থায়ও আইনজীবীরা যেন মোটামুটি সুরক্ষা নিয়ে চলতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। পেশাগত কাজে যে আইনজীবীরা আদালতে যান তাদের করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করারও দাবি জানান তিনি।
খন্দকার মাহবুব বলেন, বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক মামলা। এমনকি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও দীর্ঘদিন ধরে কনডেম সেলে রয়েছে। এসব মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটা কমিশন করা উচিত। তারা সুচিন্তিত মতামত দেবেন কীভাবে মামলা নিষ্পত্তি করা যায়। নতুবা এখন যে অবস্থা সেটি যদি চলতে থাকে তাহলে বিচার বিভাগ ভেঙে পড়বে, ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়বে।
তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থার মধ্যে সব আদালতকে সুরক্ষা নিয়ে চালু করতে হবে। যেহেতু গণপরিবহনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান চলছে, বিচার বিভাগকে সংকুচিত করা উচিত নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোর্ট ম্যানেজমেন্ট যদি ঠিক করা হয়, তাহলে মানুষের ভিড় অনেকাংশে কমে যাবে। নিম্ন আদালতে এতো মানুষের ভিড়, এটার তো প্রয়োজন নেই। আইনজীবীর মাধ্যমে যারা কেবল মামলার আসামি, তারাই হাজিরা দেবেন।
বিচারক সঙ্কট নিয়ে তিনি বলেন, আপিল বিভাগে তিনটা বেঞ্চ করতে পারে, বর্তমানে সেখানে দুটি বেঞ্চ আছে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই অনুপাতে বিচারক সংখ্যা অনেক কম।
তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল, দুর্ভাগ্যবশত ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তারই ফলে বিচার বিভাগ এখন সঙ্কটপূর্ণ অবস্থায় আছে। বিচার বিভাগ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায় আছে। মানুষ কিন্তু বিচার পাচ্ছেন না। এজন্যই মামলার জট কমাতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন করা দরকার।
করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকেই বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব আদালত। এরপর গত বছরের মে মাস থেকে আইন সংশোধন করে সীমিত পরিসরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল আদালত চালু হয়। এরপর করোনা সংক্রমণের হার কমে এলে আদালত পর্যায়ক্রমে খুলতে থাকে। এরপর চলতি বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে আবারও আদালত বন্ধ করা হয়। সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালিত হয়ে আসছে।
এ অবস্থায় বিভিন্ন আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আদালত খোলার দাবিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদনও জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টর রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাধারণ আইনজীবীদের পক্ষে সাবেক সম্পাদক ড. মো. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী।
আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, করোনা পরিস্থিতি বুঝে আদালত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।