উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দূর্নীতি; ভেঙে পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর
অপরাধ প্রতিবেদকঃ মুজিববর্ষ উপলক্ষে বরগুনার তালতলীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বিশেষ উপহারের বেশিরভাগ ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ—নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের কারণে ভেঙে পড়ছে এসব বসত ঘর। বরাদ্দের থেকে কম ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে পুরো কাজটাই সেরেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার বলছেন, স্থানীয়রা ঘর ধরে নাড়াচাড়া করায় এসব পাকাঘর ভেঙে পড়ছে।
তালতলী উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে রাখাইনদের জন্য ১১০টি ঘর উপহার দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ঘরই এখন ভেঙে ভেঙে পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা উর্মিলা রানী সরকারও পেয়েছেন একটি ঘর।
উর্মিলা রানী বলেন, ‘বিয়ের আগে বাবার বাড়িতে থাকতেও ভাঙাচোরা ঝুপড়িতেই থাকতাম। অভাবের তাড়নায় অল্প বয়সেই বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ঝুপড়ি ঘরেই থাকতাম। তবে অভাব পিছু ছাড়েনি। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু সেই খুশিতে বাধ সাধলো তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দুর্নীতি। এই ঘরটি নির্মাণ চলার সময়ের মধ্যে ভেঙে পড়ে দুই বার। ’ তিনি বলেন, ‘পরিমাণে সিমেন্ট কম দেওয়ায় নির্মাণের সময়ই এমন অবস্থা হয়েছে। এই ঘর আবারও জোড়া-তালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।’
উর্মিলা রানীর প্রতিবেশী সঞ্জয় সরকার, মিতু রানী ও অলোক শীল বলেন, ‘উর্মিলা রানীকে প্রধামন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়ায় আমরা খুশি হয়েছিলাম। যেনতেনভাবে নিম্নমানের মালামাল দিয়ে এই ঘরের কাজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।’
চাউলাপাড়া এলাকার সীমা রানি সরকার বলেন, ‘এখনো ঘর তৈরির কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু সব ঘরের কলাম ও দেয়াল ভেঙে পড়ছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ঘর আমরা নেবো না।’
একই অভিযোগ করে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, পরিমাণ অনুযায়ী সিমেন্ট ও ইট না দেওয়ায় তারা কাজে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খাম-খেয়ালি করে এসব কাজ করাচ্ছেন। তাই তারা অসহায়। এসব ঘর ভেঙে পড়ে যেকোনো সময় প্রাণহানি ঘটতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।
গেছে, ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বাজেট ধরে ৪৫ ব্যাগ সিমেন্ট ও সাড়ে ৬ হাজার ইট দিয়ে একেকটি ঘর তৈরি করার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘর প্রতি ইট দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার। সিমেন্ট দেওয়া হয়েছে ৩০ ব্যাগ। এই কারণেই উপজেলার সব ঘরই এখন ভেঙে ভেঙে পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। পিলার ধসে পড়ার পর
দেখা গেছে, উপজেলার ছোটোবগী, রাখাইন পল্লী, চাউলাপাড়াসহ ১১০ ঘরের বিভিন্ন পিলার ভেঙে পড়ে আছে মাটিতে। ঘরের দেয়ালেও ফাটল ধরেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ করা ঠিকাদার মো. রাশেদ বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দারা ধরে নাড়াচাড়া করায় এসব ঘর ভেঙে পড়েছে।’
ঘর বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব তালতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা রুনু বেগম বলেন, ‘ঘর তৈরিতে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে কিছুই জানাননি। তিনি একাই সব কাজা করেছেন।’
নিম্ন মানের মালমাল দিয়ে ঘর নির্মানের বিষয় জানতে চাইলে এই কমিটির সদস্য তালতলী ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, ‘প্রচুর অনিয়ম হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিম্ন মালের মালামাল ব্যবহার করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্থানীয় জন-প্রতিনিধি। আমাকে তালতলীতেই থাকতে হবে। ইউএনও বদলি হয়ে চলে যাবে। সব দায়ভার আমার ওপর পড়বে। ভুক্তভোগীরা আমার কাছে একাধিক বার এসেছে সিমেন্ট ও ইট কম দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে। আমি ইউএনওকে বলেছি, অনুরোধ করেছি। তারপরও তিনি আমার কথা শোনেননি।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও অফিসে পাওয়া যায়নি তাকে। তবে, মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘১ লাখ ৭১ হাজার টাকায় এই ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তাই আমি আমার মতো করেই কাজ করেছি। ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছি।’
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান
ঘর নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। ঢাকা থেকেও কয়েক দফা তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আমরাও তদন্ত করছি।’ অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।