একাধিক প্রকল্পে একজন পিডি নয়; শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশ

PicsArt_12-13-03.18.48.jpg

একাধিক প্রকল্পে একজন পিডি নয়; শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশ

বিশেষ প্রতিবেদকঃ আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে এক ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) থাকতে পারছেন না। আর প্রত্যেক পিডিকে প্রকল্প এলাকায় অবস্থান করতে হবে। প্রকল্পের বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকার বেশি হলেই পূর্ণকালীন পিডি নিয়োগের এই বাধ্যবাধকতা মানতে হবে। যদিও বর্তমানে একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পিডিদের অনেকেই মনে করেন, হঠাৎ করে পিডি পরিবর্তনে প্রকল্পের কাজে অসুধিবা হতে পারে।

প্রকল্প ছাড়তে চাইলেও আরও কিছু সময় চান তারা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা সহ একটি চিঠি সব কটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়। এই চিঠি পাওয়ার পর থেকেই একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পিডিরা মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিতে থাকেন সময় বাড়ানোর জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত সপ্তাহেও বলা হয়েছে, এ নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল রবিবার বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টিকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে এখন কাজ চলছে। কোনো পিডি একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব থাকতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে তার প্রক্রিয়া জানাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক পিডি প্রকল্প এলাকায় যান না।

আবার একজন পিডির পক্ষে একাধিক প্রকল্পে সশরীরে থাকাও সম্ভব নয়। এতে কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। এজন্য একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পে পিডি রাখা হবে না। প্রয়োজনে পিডি নিয়োগের জন্য একটা পদ্ধতি বের করা হবে।

২২ ফেব্রুয়ারির পর সময় বাড়বে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সময় বাড়ানোর দরকার পড়বে না। কারণ কী পদ্ধতিতে সমাধান হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। এটা নিয়ে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে প্রকল্প ও পিডিদের দায়িত্ব পালনকালীন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে বারবার সময় বাড়ানো এবং প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়া তো দূরের কথা দফায় দফায় প্রকল্প সংশোধন এবং ব্যয় বাড়ানো একটা রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চান, কেন প্রকল্পের ধীরগতি এবং কেন বারবার ব্যয় বাড়ছে। এ ছাড়া বড় প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে পিডিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এসব বৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখতে পান, একই ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের পিডি হিসেবে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বিষয়টি নজরে আসার পর তিনি বিষয়টি পরিকল্পনামন্ত্রীকে অবহিত করেন। এক ব্যক্তি এক প্রকল্পের বেশি পিডি থাকতে পারবেন না, এটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে পরিকল্পনামন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
যদিও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে দুই বছর ধরে চেষ্টা করেও লাভ হয়নি।

এ ছাড়া প্রকল্পের ব্যয় এবং দফায় দফায় সময় বাড়ানো সহ প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রতিবেদনে আইএমইডিও প্রকল্পের ধীরগতির পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। সম্প্রতি দেওয়া ওই প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী নিজেও দেখেছেন বলে তার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন কর্মকর্তা ১০টি থেকে ১৪টি প্রকল্পের পিডি। ৫টির পিডি একজন এ রকম অনেকগুলো প্রকল্প রয়েছে। একজনের অধীনে যদি এতগুলো প্রকল্প থাকে তাহলে প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি হয় না। এমনকি ঠিকমতো মিটিং করাও সম্ভব হয় না। প্রকল্পের কাজে ধীরগতি হলে তখন খরচ বেড়ে যায়। কারণ একজন কর্মকর্তার পক্ষে একাধিক প্রকল্প দেখাশোনা করা সম্ভব হয় না। আবার পিডির পক্ষে একাধিক প্রকল্পে সশরীরে থাকা হয় না। আর এতেও কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যেসব প্রকল্পে একজন পিডি সেখানে কাজের অগ্রগতি ভালো হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই প্রতিবেদন দেখার পর প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানে পরামর্শ আসে, পিডি যদি প্রকল্প এলাকায় থাকেন তাহলে কাজের অগ্রগতি ভালো হয়। তা ছাড়া প্রতিটি বড় প্রকল্পে যদি ব্যয় ও সময় বাড়ে তাতে সরকারের ইমেজ সংকট হয়।

২০০৮ সালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি সংক্রান্ত পরিপত্রের ১৬.৩৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫০ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি হলে একজন পূর্ণকালীন প্রকল্প পিডি নিয়োগ দিতে হবে। একই সঙ্গে পিডিকে হতে হবে অভিজ্ঞ ও যোগ্য। এ ছাড়া একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পের পিডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, একজন কর্মকর্তার ১০টি, ১৪টি প্রকল্পের দায়িত্ব পালনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একেকজনকে শুধু একটি করে প্রকল্পের পূর্ণকালীন পিডি হিসেবে রাখা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে একজন কর্মকর্তাকে পিডি নিয়োগ দিয়ে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

সব মন্ত্রণালয় থেকে হালনাগাদ তথ্য পাওয়ার পর একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, এটা প্রমাণিত যে একজন কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পে পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চলমান প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চিঠিতে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা একই সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৪টি প্রকল্পে পিডির দায়িত্ব পালন করছেন। ওই মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা ১৩টি করে এবং পাঁচজন কর্মকর্তা ১০টি বা ততোধিক প্রকল্পে পিডির দায়িত্বে রয়েছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগে ৩৮ জন কর্মকর্তা দুই বা ততোধিক প্রকল্পে, ১৪ জন কর্মকর্তা ৩ থেকে ৬টি প্রকল্পে পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়েও একজন কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পে নিয়োজিত। এ ছাড়া পানিসম্পদ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েও একেকজন কর্মকর্তা ২-৩টি প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব পালন করছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, কোনো কোনো পিডি কয়েক মাসেও প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যেতে পারেন না। ফলে প্রকল্পের গতি কমে যায় এবং খরচ বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top