দারিদ্র্য বিমোচনের নামে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ দারিদ্র্য বিমোচন ও সমাজসেবার নামে প্রতারণাসহ বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলা এলাকা থেকে সাইদুজ্জামান নূর রাকিব নামে একজনকে আটক করেছে র্যাব। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। একইসঙ্গে ‘নূর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন’ ও ‘নূর প্রপার্টিজ এলিভিয়েশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’ নামে তার দুইটি ভুয়া যৌথ প্রতিষ্ঠানের অফিস সিলগালা করা হয়। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত র্যাব-১১ এ অভিযান চালায়। এসময় বিপুল পরিমাণ অবৈধ পাসপোর্ট ও জাল নথিপত্রসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
জামতলা ধোপাপট্টি এলাকার সামছুল হুদার সাত তলা বাড়ির ছয় তলার একটি ফ্ল্যাটে তিন বছর ধরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা এলাকার সাইদুজ্জামান নূর রাকিব। একইসঙ্গে ওই বাড়ির ছাদ ভাড়া নিয়ে সেখানে ‘নূর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন’ ও ‘নূর প্রোপাটিজ এলিভিয়েশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’ নামে দুইটি ভুয়া মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের অফিস খুলে বসেন তিনি।
তবে এই দুই প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি কোনও সংস্থার অনুমোদনের লাইসেন্স নেই। সেখানে ৩২জন কর্মীও রয়েছেন যারা রাকিবের মাধ্যমে আর্থিকভাবে প্রতারণার শিকার। মাত্র এসএসসি পাস এই ব্যক্তি নিজেকে ‘দৈনিক মানবতার আলো’ এবং ‘নিউজ ডাইজেস্ট ওয়ার্ল্ড’ নামে দুইটি বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক দাবি করলেও এর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে র্যাব বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালায়। পরে তার ফ্ল্যাট বাসায় ও অফিসে তল্লাশি করে শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণার নথিপত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের ভুয়া চেক-রশিদের ফটোকপি, অর্ধশত অবৈধ পাসপোর্ট, একটি টেলিস্কোপ, বিদেশ থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ইতালির তৈরি একটি অত্যাধুনিক খেলনা পিস্তল ও বড় আকারের একটি ছুরি জব্দ করা হয়। পরে এসব অবৈধ আলামতসহ র্যাব তাকে আটক করে।
র্যাব-১১ সিনিয়র সহকারী পরিচালক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন জানান, আটককৃত সাইদুজ্জামান নূর রাকিব রাশিয়া, থাইল্যান্ড ও দুবাইসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র সফর করে এনজিও ও মানবাধিকার সংস্থার বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, মানবসেবার জন্য রাশিয়া থেকে একশ’ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছেন এমন কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া শুরু করেন।
প্রতারণার মাধ্যমে এ পর্যন্ত তিনি কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। র্যাব আরও জানায়, তার প্রতারণার শিকার এমন শতাধিক ব্যক্তির বায়োডাটা ও তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বেশি হতে পারে। আটককৃত রাকিবের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে।