বোরহানউদ্দিনে সরকারী চাল বিতরণে অনিয়মের সত্যতা মিলছে
সাগর চৌধুরীঃ ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বৈদ্যের পুল এলাকার মুসলিম বাজারে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির চাল বিতরণে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান।
কাচিয়া ইউনিয়ন সরকারি চাল ওজনের কম দেওয়া, ট্যাগ অফিসারকে অবগত না করে চাল বিতরণ করায় ডিলার ফয়সাল আহমেদ ও তার সহকারি নুন্নু সিকদার বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন সরকারী চালের কার্ডধারীরা।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্তকারী দলটি ঘটনা স্থলে পৌছালে ভুক্তভোগী কার্ডধারীরা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমানের
কাছে ওজনের কম দেওয়ায় বিষয়ে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন,খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজি মূল্যের চাল বিতরণ কার্যক্রমে কাচিয়া ইউনিয়নের ৪.৫.৬ নং ওয়ার্ডের ডিলার ফয়সাল আহমেদ। ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে ওই ডিলার প্রতি মাসে জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল ৫৪৩ জনকে বিতরণ করার কথা ছিল কিন্তু সেই শর্ত অনুযায়ী সে তা করেনি।
ট্যাগ অফিসার সহঃ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর তার উপস্থিতিতে চাল বিতরণের পরে ১০০ বস্তা চাল থেকে যায়। ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর ডিলার তাকে অবহিত না করেই চাল বিতরণ করেন।
মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মিরা ঘটনাস্থলে অভিযোগ করিদের কাছে জানেন, ডিলার ফয়সাল হলেও বিতরণ কার্যক্রমে মূখ্য ভূমিকায় থাকেন পূর্বের বহিস্কৃত ডিলার নুন্নু সিকদার। যার বিরুদ্ধে সরকারের চাল চুরি করার অভিযোগে কোর্টে মামলা চলমান আছে।
চাল চুরির অভিযোগে কার্ডধারী আঃ রশিদ এ-র স্ত্রী সাদিয়া বেগম, সিরাজ, লাল মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর, সেরা জলের ছেলে করিম, মহিবুল এ-র ছেলে মিলন মিয়া, মুনাফ এর ছেলে বারেক, আবু মিয়া, আবু তাহের স্থানীয় কাচিয়া ৪নং ওয়ার্ডের নয়া বাড়ির রমজনের ছেলে আবুল কাশেম, কালু হাওলাদার বাড়ীর নুরুজ্জামানের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, গফুর খায়ের বাড়ীর সিরাজ, সর্দার মফিজুল ইসলাম, ৬ নং ওয়ার্ডের উজ্জল মেম্বারের ছেলে জাহাঙ্গীরসহ একাধিক লোক অভিযোগ করে বলেন, তাদের কে ২২,২৩,২৫ কেজি করে চাল দেন।
কিন্তু তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই ৩০ কেজি চালের দাম রাখেন।
এই বিষয়ে তদন্ত করে জানাযায়, নুন্নু সিকদার আগে চালের ডিলার ছিল। তার অনিয়মের কারনে ডিলার বাতিল হয় এবং আদালতে মামলাও হয়েছে। জেলও খেটেছেন। পরে স্থানীয় ফয়সালের নামে চালের ডিলার আনেন নুন্নু সিকদার। সেখানে নুন্নু সিকদার চাল বিতরণের সব সময় দায়িত্বে থাকেন।
তবে মুসলিম বাজার কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান ও সম্পাদক চাল কম দেওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং গণমাধ্যমকর্মী, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের কাছে চাল চোর, চাল কালোবাজারী নুনু শিকদার ও ফয়সালের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আমিরুল ইসলাম নুন্নু সিকদার বলেন, আমার চাউল, জনগনকে ১০, ১৫, ২০ কেজি করে দিবো সেটা আমার একান্ত ব্যাপার। আপনাদের কি?
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি চাল বিতরণ করছি কিন্তু সাংবাদিকরা কেন এসে আমাদের ভিতরে ডিস্টার্ব করে। আমরা বাধ্য না তাদের কাছে এসব কথা বলতে। যা পারেন আপনারা করেন।
চালের ডিলার ফয়সালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন নুনু সিকদার আমার সহকারী।
বোরহানউদ্দিন খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোঃআবু বকর সিদ্দিক জানান, তদন্ত চলমান আছে।তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুর রহমান জানান, চাল কমে দেওয়ায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিধি অনুসারে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর ডিলার আমিরুল ইসলাম নুন্নু সিকদার ৪৪ বস্তুা চাল কালোবাজারে বিক্রি করার অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা সহজ জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়।
এদিকে সাংবাদিকদের হুমকি ধামকি দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও থানায় অবগত করার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকরা সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এর আগেও বিভিন্ন সময় বোরহানউদ্দিন উপজেলায় সরকারের চাল কালো বাজারে বিক্রি, সরকারি চাল চুরি ইত্যাদি বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমকর্মী বিভিন্ন জনের নামে অভিযোগ করেন এবং সেই সব অভিযোগে কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে।
স্থানীয় সরকারী চাল প্রাপ্ত কার্ড ধারীরা এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, সরকারের চাল বিতরণে কোনো অনিয়ম থাকবেনা, সরকারের সুবিধা গুলো সরাসরি সাধারণ মানুষ ভোগ করবে, সেখানে কোনভাবেই রাজনীতির কূটচাল চালানো যাবে না এবং চাল বিতরণে কোনরকম অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে স্থানীয় চাল প্রাপ্য কার্ডধারীরা মানববন্ধন সহ এসকল অনিয়মের প্রতিবাদে অনশণ বসবে।