পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় রাতেই দাম বাড়াল ব্যবসায়ীরা

PicsArt_09-07-04.12.29.jpg

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় রাতেই দাম বাড়াল ব্যবসায়ীরা

বিশেষ প্রতিবেদকঃ অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় কথা বলে আপাতত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।

সোমবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই সিদ্ধান্ত আসার পরপরই দেশে অসাধু ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সন্ধ্যার পর রাজধানীর কাওরান বাজারের আড়তে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকায় নিয়ে গেছে। অনেকে আড়ৎ থেকে পেঁয়াজের বস্তা সরিয়ে ফেলছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে এই ঘোষণা শোনার পর অনেকেই কাওরান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে ভিড় করেন। গত বছরেও ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় পেঁয়াজের কেজি আড়াই থেকে তিনশ টাকায় উঠেছিল।

এবারও অসাধু ব্যবসায়ীদের একই ধরনের তত্পরতা দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেক ক্রেতা।

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ দেশে আসেনি। হিলি স্থল ও শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার সাইদুল আলম গতকাল রাতে বলেন, পেঁয়াজ সংকটের কারণে ভারত রপ্তানি সাময়িক বন্ধ রাখায় কোনো পেঁয়াজ আসেনি।

তবে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, মূল্যবৃদ্ধির কৌশল হিসেবে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। গত বছরও রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধের আগে কয়েক দফায় মূল্য বাড়ায়। এদিকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য যেসব এলসি খোলা রয়েছে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোর বিপরীতেও কোনো পেঁয়াজ রপ্তানি হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

পেঁয়াজ আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম বলেন, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের মতো কোনো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। এটা মূল্যবৃদ্ধির কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।

এদিকে পেঁয়াজের দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক প্রত্যাহারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) গত সপ্তাহে চিঠি দিয়েছিল। তবে এনবিআর পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের পক্ষে নয় বলে গতকাল সংস্থাটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে নিজেদের ‘অপারগতা’র কথা জানিয়ে দিয়েছে। এনবিআর মনে করছে, পেঁয়াজে বর্তমানে যে শুল্ক রয়েছে, তার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে দাম তেমন বাড়ার কথা নয়। বরং স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকদের উত্সাহিত করতে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক থাকা প্রয়োজন।

গত বাজেটে এনবিআর পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এনবিআরের শুল্ক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই শুল্ক দাম বাড়ার জন্য বাস্তবে দায়ী নয়। এর আগেও এ বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম। অন্যদিকে ট্যারিফ কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘমেয়াদে পরনির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে স্থানীয় উত্পাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হওয়া দরকার। এজন্য কীভাবে তাদের রক্ষা করা যায়, তা ভাবতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন। আর এই চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। কারণ, গত কয়েক বছরে দেশে পেঁয়াজের উত্পাদন বাড়লেও আমদানি বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন ১৭ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টনে স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু এই সময়ে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে অনেক বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top