আবারও সাইবার হামলার আশঙ্কা; সারাদেশে ব্যাংকগুলোতে সতর্কতা জারি
অর্থনৈতিক প্রতিবেদকঃ যে ধরনের সাইবার হামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছিল, সেই ধরনের সাইবার হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোকে অনলাইন লেনদেনে সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উত্তর কোরিয়ার একটি হ্যাকার গ্রুপ এই হামলা চালাতে পারে বলে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অনেক ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং সেবা সীমিত করেছে। আবার কোনও কোনও ব্যাংক অন্য ব্যাংকের গ্রাহকদের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করতে দিচ্ছে না।
এরইমধ্যে ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের নিউইয়র্ক শাখা থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়েছিল।
গত কয়েক দিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এ ব্যাপারে একাধিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মনিটরিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বিশেষ নজরদারি করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও অনলাইন লেনদেনে অধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন পরিস্থিতিতেও বিশেষ নজর রাখছে। এর অংশ হিসেবে ছুটির দিনেও অনেক ব্যাংকের অনলাইন শাখা ও কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তারা অফিস করেছেন।
দেশে আবার এ ধরনের সফটওয়্যারের সন্ধান পেয়ে কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়কে অবহিত করা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইন লেনদেনে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবগুলোতে লেনদেনের ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরইমধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক রাত ১১টার পর এটিএম লেনদেন বন্ধ রেখেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নতুন পাওয়া ম্যালওয়্যারটি বড় ধরনের বিপদ ঘটাতে পারতো। কিন্তু তার আগেই এটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এখন সবাই সতর্ক। নতুন করে আর কিছু করতে পারবে না।
এটিএম বুথগুলোতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক তাদের নিজস্ব কার্ড ছাড়া অন্য ব্যাংকের কার্ড বা আন্তর্জাতিক কার্ডের লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারটিকে অকেজো করতে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। একইসঙ্গে তারা এর গতিবিধির ওপর বিশেষ নজর রাখছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে তথ্য আসে, ‘বিগল বয়েজ’ নামে একটি হ্যাকার গ্রুপ ব্যাংকগুলোতে সাইবার হামলা চালাতে পারে। গ্রুপটি উত্তর কোরিয়ার বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। চিঠি পাওয়ার পর সব ব্যাংকই বিশেষ ব্যবস্থা নেয়। কেউ তদারকি জোরদার করে, আবার কেউ গ্রাহকদেরও সচেতন থাকার জন্য খুদেবার্তা পাঠায়।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এটিএম বুথ বন্ধ রাখার ব্যাপারে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চিঠি পাওয়ার পর আমরা সতর্কতার সঙ্গে লেনদেন করছি। এটিএম লেনদেন রাতে বন্ধ রাখছি। দিনে বুথগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
তবে পূবালী ব্যাংকের এমডি আবদুল হালিম চৌধুরী জানান, তার ব্যাংকে কোনও সমস্যা নেই। এ বিষয়ে তিনি কোনও নির্দেশনাও দেননি।
তবে সতর্কতা বাড়িয়েছে সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য সব ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর তথ্য প্রযুক্তি, অনলাইন ব্যাংকিং ও অলটারনেটিভ ডেলিভারি চ্যানেলের কর্মকর্তারা জানান, সতর্কতা আসায় তদারকি জোরদার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরিতেও উত্তর কোরিয়ার একটি চক্র জড়িত ছিল বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) তদন্তে বেরিয়ে আসে। চক্রটি ম্যালওয়্যারের মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপরই ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (৬৮০ কোটি টাকা) চুরি হয়।