আমিও ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে গেছি – সুপন রায়

PicsArt_06-16-12.44.07.jpg

আমিও ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে গেছি – সুপন রায়

আমিও ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে গেছি। মারাত্মক রকমের | ওষুধ খেতে হয়েছে | চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি | রাতে সবাই ঘুমাত | আমার ঘুম আসতো না | পিন পড়ার শবদও শুনতে পেতাম | দিনে এনারজী পেতাম না | অফিস করতে হত |

মুখে হাসি ঝুলিয়ে কথা বলতে হত | মিটিং করতে হত | ইন্টারভিউ বোরডে বসতে হত | চাকরির সাক্ষাত্কার নিতে হত | অমনোযোগী বুঝতে পেরে এক সহকর্মী একদিন বলেও ফেললেন, ইউ আর লসট | হেসে আড়াল করার অভিনয় করেছি | সিইওর কাছে বলেছি, ওষুধ নেবার কথা | অফিসে দেরী করে যাবার অনুমতি তিনি দিয়েছিলেন | ভাগ্যিস | ভয়ংকর | অসহ্য ছিল সে সময় |

লজ্জার কিছুই নেই স্বীকার করতে তা!! একসময় ছেডে দিলাম ওষুধ | ভাবতে শুরু করলাম পেছনে ফেলে আসা সফলতার গল্প গুলো | নিজের জীবন থেকে নিজে সংগ্রহ করতে থাকলাম গল্প | ভাগ্যিস সে রকম কিছু গল্প ছিল ঝুলিতে | একসময় পারলাম | একদম ঘুরে দাঁড়াতে | মনোবল চাঙ্গা করে নিলাম | তারপর থেকে আর সমস্যা হয়নি |

বলছি, বেশ কয়েক বছর আগের কথা | এভাবে যে ধাক্কা খাব জীবনে, সেটা আঁচও করতে পারিনি | মনে আছে, হঠাৎ ভয় পেয়ে বসে আমার ভেতর | আমি দেখতে থাকি, চোখের সামনে সাজানো সম্ভাবনা টুকু ধ্বংস হতে শুরু করেছে | আমার বহু দিনের লালিত স্বপ্ন | সেটি মেনে নিতে পারিনি | সেই যে ভয় পেলাম, সেই ধাক্কায় একটানা ৭ মাস | ভাবা যায় ?

একেবারে গুটিয়ে ফেলি নিজেকে | কারো সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগতো না | ফোন এলে রিসিভ করতে ইচ্ছে করত না | কথা বলতে জঘন্য লাগত | জোর করে বলতাম | মানুষ দেখলে বিরক্ত হতাম | কোনো কিছুই ভাল লাগত না |

ভাল লাগত না হয়তো মুম্বাইর তরুন অভিনেতারও | চলেই গেলেন দিললী থেকে আসা প্রকৌশলী তারকা সুশান্ত সিং রাজপুত | তরতাজা যুবক | প্রতিভাবান অভিনেতা | ক্যারিয়ারের গ্রাফ টা ভালই উঠছিল | অর্থ, নাম, যশ, মানুষের ভালবাসা, প্রচুর | এতোকিছু থাকার পরও যে গুলোর জন্য মানুষ বাঁচে, সে গুলো ছেডে দিয়ে চুপচাপ, নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করে, বিদায় নেয় নিজের ইচ্ছেয়, সবাইকে ছেডে |

করোনায় প্রচুর মরছে বিশবজুডে | মৃত্যুর মিছিল লেগেছে যেন | এখানেও মরছে দুমদাম | তারা কেউ কিন্তু মরতে চাননি | ভীষনভাবে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেষ্টা করেছেন | সুশান্ত কিন্তু সেটা করেননি | চলে গেলেন | জানান দিয়ে গেলেন, জীবন মানে যশ, অর্থ, প্রতিপত্তি নয় | জীবন মানে আরো অন্য কিছু |

আমরা কেউই জানি না, এর কারন কী ? কারোর SMS, কারোর শেষ কল, কারোর ঝগড়া, কারোর কান্নাকাটি | হয়তো জানতে পারবো সামনে | কারোর সঙ্গে মান অভিমান হতে পারে | সেটা বন্ধুত্ব | প্রেম | কারোর কাছ থেকে পাওয়া যন্ত্রনা হতে পারে | আমরা কেউ কিছু জানি না |

তারপরও আমাদের ভেতর থেকে অনেকে গবেষকদের মতো করে কারন লিখে ফেলছি | হতাশা | প্রেম | বিরহ | ম্যানেজার এর সঙ্গে বিরোধ | অমুক | তমুক | ভীষন Judgement করে বসছি | অসুস্হ সমাজ |

যার হয় সেই বোঝে | নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে, নিজেই নিজের সেনাপতি হয়ে হেরে যে যায়, সেই ভাল জানে | কতটা যন্ত্রনা পেলে মানুষ, এরকম একটা যন্ত্রনার মৃত্যু কে আহবান করে নেয় | সবকিছু থাকার পরও |

আমরা সফলতাটা দেখি | কিন্তু তার যে চাপ সেটা দেখি না | এই চাপের খবর কেউ জানে না |

সফল হবার পর সে মানুষটি আসলে একা হতে শুরু করে | যন্ত্রনার কথা | মান অভিমান | সংঘাত | এসব বলতে পারে না | স্বীকার করতে চায় না | বললে ছোট হয়ে যায় যদি আবার |

তাঁর আসলে একটা শক্ত কাঁধের দরকার হয় | ভালবাসার দরকার হয় | ওই কাঁধ টা থাকলে হয়তো ওই পথে যেতে হতো না রাজপুতকে | তাই ১০ লাখ ফ্যান ফলোয়াড নয়| ১ জন ভাল বনধু দরকার | প্রেমিক না| বনধু | বন্ধুর কাছে সব খুলে বলা যায় |

Depression তাই করোনা ভাইরাসের মতো | খোলা চোখে দেখা যায় না | হঠাৎ করে আঘাত করে | এটিরও কোনো vaccine নাই | যে কারোর হতে পারে | যখন তখন |

কেউ হয়তো বলে ফেলবেন, ওর আবার কিসের অভাব ? গাড়ী আছে | বাডী আছে | সম্পদ আছে | সফল সে | তার আবার কিসের Depression ?

Depression ও মন খারাপ এক জিনিস না | মন খারাপ যে কোনো মানুষের হতে পারে | খুবই সবাভাবিক তা | কিন্তু Depression হলে অস্বাভাবিক রকমের দীর্ঘ মেয়াদে ডাউন থাকে সব | জীবনের সমস্ত কিছু তখন অর্থহীন মনে হয় | Brain এর বায়ো কেমিক্যাল পরিবর্তন থেকেই মুলত এটা হয় |

তেমন হলে আপনি/আপনারা চিকিৎসক এর কাছে যাবেন | লজজা পাবেন না | এটি একটি রোগ| নিজে ডাক্তার হতে যাবেন না প্লিজ |

আঁধারের পাতা আপনাকেই উল্টাতে হবে | জোরে আওয়াজ তুলতে হবে – SPEAK OUT |

সুপন রায়
সিনিয়র গণমাধ্যম কর্মী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top