অপরাধী ‘ক্যাসিনো পুলিশের’ তালিকা ডিএমপি কমিশনারের হাতে; চলছে তদন্ত; অপরাধীরা আতঙ্কে
নগর প্রতিবেদকঃ রাজধানীতে পুলিশের নাকের ডগায় ক্যাসিনোর বিস্তার নিয়ে জোর সমালোচনা চলছে। অভিযোগ উঠেছে, সদ্যবিদায়ী ডিএমপি কমিশনার সহ গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের সবাই ক্যাসিনোর কথা জানতেন। এসব বন্ধে উদ্যোগ না নিয়ে তারা বরং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উল্টো মাসোহারা নিতেন। এ অবস্থায় ইমেজ সংকটে পড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন সদ্যনিযুক্ত কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
এরই মধ্যে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা করে ডিএমপি থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর থেকে খোদ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিষয়টি তদারকি করছেন।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে দেখছি। এছাড়া যারা অ্যারেস্ট হয়েছেন, তারা কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা ফিল্ড থেকে পাওয়া তথ্যসহ সব মিলিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর ৪ দিনের মাথায় ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাব ঢাকার বিভিন্ন ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে সরঞ্জামসহ নগদ টাকা উদ্ধার করে র্যা ব। এর জেরে স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগ ওঠে, ডিএমপি পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে চলতো ক্যাসিনো?
রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ক্যাসিনো চলতো মতিঝিল এলাকায়। এই এলাকার পুলিশ সদস্যরা ক্যাসিনো সম্পর্কে সবকিছু জানতেন। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শিবলী নোমান এসব বন্ধে কোনও উদ্যোগই নেননি। গুলশানেও একাধিক ক্যাসিনো সহ বিভিন্ন ক্লাবে মদ-জুয়ার আসর বসতো। অলিগলিতে চলতো স্পা’র নামে অবৈধ কর্মকাণ্ড। গুলশান বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদও এসব বিষয় জানতেন। কিন্তু তিনিও এসব বন্ধে উদ্যোগ নেননি। বর্তমানে তিনি পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত রয়েছেন।
পুলিশের মধ্যমসারির একজন কর্মকর্তা জানান, যুবলীগের শীর্ষ নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যাসিনো বা জুয়ার আসর বন্ধ করার ক্ষমতা নেই মাঠপর্যায়ের পুলিশের। একাধিকবার এসব বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে ডিএমপি কমিশনার বরাবর পাঠানোও হয়েছে। কিন্তু কোনও নির্দেশনা আসেনি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনারের সরাসরি তদরকিতে ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ডিভিশন—আইইডি নামে একটি বিভাগ রয়েছে। ওই বিভাগ আইনশৃঙ্খলাসহ পুলিশের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপকর্মসহ সব তথ্য আপডেট করে নিয়মিত ডিএমপি কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন পাঠায়। ফলে সদ্যবিদায়ী কমিশনারের এসব না জানা থাকার কোনও কারণ নেই।’ মাঠপর্যায়ের মধ্যমসারির কয়েক জন পুলিশ কর্মকর্তাও এসব কর্মকাণ্ডে সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।