ক্যাডার কর্মকর্তারা বৈষম্যৈ ও বঞ্চনার শিকার; ক্ষোভ ও অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে

Picsart_23-07-03_19-06-57-708.jpg

ক্যাডার কর্মকর্তারা বৈষম্যৈ ও বঞ্চনার শিকার; ক্ষোভ ও অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে

বিশেষ প্রতিবেদকঃ সারাদেশের আন্ত:ক্যাডার বৈষম্যৈ বঞ্চনার শিকার গণকর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। গণকর্মচারী আইন প্রণীত হলেও সেই আইনের অধীনে এই বৈষম্য নিরসনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একচেটিয়া স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে দিনকে দিন পদোন্নতি, পদায়নের ক্ষেত্রে আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য আরও বাড়ছে।

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশও এ ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হচ্ছে। যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতারও মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বেহিসাবি পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় কনিষ্ঠরাই অনেক ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠদের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হয়ে হয়ে বসে আছেন। ক্যারিয়ার পরিকল্পনা না থাকায় এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে, যোগ্যতা অর্জন করায় দাবিদার কর্মকর্তাদের পদোন্নতিও দিতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় প্রশাসনের কাঠামোসহ পদোন্নতি, পদায়নের ক্ষেত্রে আমূল সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

যদিও ৮০ শতাংশ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেলেও তাদেরকে আগের অধস্তন পদের কাজই করতে হচ্ছে। অনেকের বসারও জায়গা নেই। এক রুমে ভাগাভাগি করে বসতে হয় অনেককে। অবশ্য এটি সচিবালয়ের দৃশ্য।

স্বাধীনতাপরবর্তী সময় থেকেই প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে তৎকালীন অন্যান্য ২৬ (বর্তমানে ২৫) ক্যাডারের বৈষম্য চলে আসছে। এই বৈষম্য নিরসনে একাধিক কমিটি ও কমিশনের সুপারিশ হিমাগারে পড়ে আছে। অথচ প্রশাসনসহ সব ক্যাডারের কর্মচারী সরকারি কর্মকমিশনের একই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

তবে ক্যাডারে ভিন্নতা থাকলেও চাকরির ১০ বছর পূর্ণ হলে যে কোনো ক্যাডারের কর্মচারী উপসচিব পুলভুক্ত হতে পারেন। আর এই পুলভুক্ত হলে তাদের প্রাথমিক যোগদানকৃত ক্যাডার পরিচিতি থাকে না। সবাই একই ক্যাডারভুক্ত গণকর্মচারী হিসাবে বিবেচিত হন।

কিন্তু পদোন্নতির সময়ে কথিত কোটার দোহাই দিয়ে চলে বঞ্চনার খেলা। এতে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে নিয়োগপ্রাপ্তরাই ক্ষতিগ্রস্থ হন বেশি। যদিও সুপ্রিমকোর্ট কোটা পদ্ধতি অনুসরণের বিপক্ষে রায় দিয়েছে। এ সংক্রান্তে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২০০৩ সালে দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, ‘যখন কোনো কর্মকর্তা উপসচিব হবেন তখন তার পূর্ববর্তী ক্যাডার বিলুপ্ত হবে। তখন তিনি অন্যান্য উপসচিবের সঙ্গে একীভূত হবেন। উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশ কালীন ক্যাডার বিবেচিত হবে না। এসব পদে সবাই সমঅধিকার নিয়ে পদোন্নতির যোগ্য হবেন। কিন্তু এই রায় না মেনে কথিত কোটা পদ্ধতি বহাল রাখা হলেও তাও মানা হচ্ছে না।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, ট্যাক্স, রেলওয়ে, আনসার, কাস্টমস, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ প্রায় ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উপসচিবের তদূর্ধ্ব যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিবের পদোন্নতির সময় কোটার ফাঁদে ফেলে বঞ্চিত করা হয়।

আবার ২০০২ সালের পদোন্নতির বিধিমালা অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডার থেকে উপসচিব পুলে অন্তর্ভুক্ত ২৫ শতাংশ কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়ার কথা থাকলেও, সেটিও মানা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের পদটি সব সময়ই প্রশাসন ক্যাডার দ্বারা পূরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর বাইরে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ডিডি এলজি, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ইত্যাদি পদও প্রশাসন ক্যাডারভুক্ত পদ। অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা শুধু মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রণালয়ের অধীনের কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থায় সমমানের পদে নিয়োগ লাভ করতে পারেন।

পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে ২৫৫ জন কর্মকর্তা সিনিয়র সচিব বা সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এরমধ্যে ২৩২ জনই প্রশাসন ক্যাডারের। বাকি ২৩ জন অন্যান্য ক্যাডার থেকে। শতাংশ হারে এটি ৯ শতাংশ। গ্রেড-১ ভুক্ত কর্মকর্তা বিগত পাঁচ বছরে হয়েছেন ৭৬ জন। এর মধ্যে একজন মাত্র অন্য ক্যাডারের।

গত ১২ মে অতিরিক্ত সচিব পদে সর্বশেষ পদোন্নতি দেয়া হয় ১১৫ জনকে। এর মধ্যে ১০৩ জনই প্রশাসন ক্যাডারের । অন্যান্য ক্যাডারের ১২ জন। অর্থাৎ ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে সর্বশেষ পদোন্নতি দেয়া হয় সেখানে ২২১ জনের মধ্যে ১৯৭ জনই প্রশাসন ক্যাডারের বাকি ২৫ জন অন্যান্য ক্যাডারে। ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডার থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন। ২৫ শতাংশ হলেও ৫৫ জনের বেশি পদোন্নতি পাওয়ার কথা। এ ছাড়া গত দশ দফা পদোন্নতির ক্ষেত্রে উপসচিব পদে ২ হাজার ৭৯৮ জন পদোন্নতি পেয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ১৫২ জন ছিলেন প্রশাসন ক্যাডারে আর অন্যান্য ক্যাডার থেকে পুলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার (উপসচিব) আবেদন করলেও নেওয়া হয়েছে ৬৪৬ জনকে। যা মোট পদোন্নতির ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। 

এরই মধ্যে বঞ্চিত অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পরবর্তী করণীয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করছেন।

এসব কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে বঞ্চনার প্রতিকার চেয়ে আবেদন করবেন। এছাড়াও তারা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আরও সংবাদ পড়ুন।

চলতি মাসে আরও উপসচিব-অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি; উপেক্ষিত বিধিমালা

আরও সংবাদ পড়ুন।

২৭০ কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব হলেন

আরও সংবাদ পড়ুন।

২২১ কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি; পদের প্রায় তিনগুণ হলো যুগ্ম সচিব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top