আগামী নির্বাচনে বিএনপি না এলেও আওয়ামী লীগ ভোটকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ করবে

Picsart_23-03-03_08-34-59-181.jpg

আগামী নির্বাচনে বিএনপি না এলেও আওয়ামী লীগ ভোটকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ করবে

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার জন্য দেশের ভেতরে এবং উন্নয়ন-সহযোগী কিংবা প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছ থেকে একধরনের চাপ অনুভব করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে সেভাবেই ছক কষা হচ্ছে। বিএনপি শেষ পর্যন্ত না এলেও নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

সেক্ষেত্রে দল মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি প্রতিটি আসনে অন্তত দুজন করে ডামি প্রার্থী দেওয়ার কৌশলকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। অতীতে জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েও যারা পরবর্তীকালে ক্ষমা পেয়েছেন, তারাও দলের অনুমতি নিয়ে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। এছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেতে পারেন দলের ক্ষমাপ্রাপ্ত বহিষ্কৃত নেতারাও।


আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে আগামী নির্বাচনে ডামি প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে। কোন আসনে কাকে কাকে ডামি প্রার্থী করা যায়, সে বিষয়ে এখন থেকেই ভাবতে দলীয় এমপিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ঐ বৈঠকে। নিজেদের দাবিতে অটল থেকে বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোটে নাও আসতে পারে, অথবা কৌশলগত কারণে প্রথমে মনোনয়নপত্র দাখিল করে পরে প্রত্যাহার করে নিতে পারে—এমন দুটি সম্ভাবনা মাথায় রেখেই ডামি প্রার্থী দেওয়ার কৌশল নিয়ে ভাবছে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, অতীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও এবং দল থেকে বহিষ্কারের পর যারা ক্ষমা পেয়েছেন, তারা এবং ডামি প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীর মোড়কে। বিএনপি না এলে নির্বাচনকে দেশে-বিদেশে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে যেহেতু অধিক প্রার্থিতাকে উৎসাহিত করা হবে, সেই সুযোগে সিংহভাগ আসনে আওয়ামী লীগের অনেকে দলের অনুমতি না পেলেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হতে পারেন। দলের কাছে ‘বিদ্রোহী’ হলেও, নির্বাচনে তাদেরও পরিচয় হবে ‘স্বতন্ত্র’। এছাড়া ভোটের মাঠে প্রতিযোগিতায় দেখা যেতে পারে ছোট-মাঝারি-নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত-নামসর্বস্ব অনেক দলের প্রার্থীকে। তাদের কেউ থাকবেন দলীয় প্রতীকে, কেউ থাকবেন ‘স্বতন্ত্র’ পরিচয়ে। সব মিলিয়ে একেকটি আসনে গড়ে প্রার্থী-সংখ্যা হতে পারে ৮ থেকে ১০ জন।


বিএনপি না এলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে অধিক প্রার্থিতাকে উৎসাহিত করার ফলে আগামী নির্বাচনে বেশির ভাগ আসনে দেখা যেতে পারে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দলীয় দ্বন্দ্ব-কোন্দল-সংঘাতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে সময়ে-সময়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনের সময় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছিল। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, এমন কথাও বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে।

তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘বিদ্রোহীরা’ কেন্দ্রের এই হুঁশিয়ারিকে আমলে নেননি, কিংবা গুরুত্ব দেননি। পরবর্তীকালে দেখা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউ কেউ নির্বাচিত হওয়ার পর দল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং বরণ করে নিয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করায় দল অতীতে বিভিন্ন সময়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন আর কেন্দ্রের সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিতে চান না বিদ্রোহীরা।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের মতে, অতীতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আগামী সংসদ নির্বাচনেও অনেক আসনে দলের একাধিক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন। কারণ, অতীতের ঘটনাপ্রবাহে বিদ্রোহীদের এমন বিশ্বাস জন্মেছে যে, দলের কেন্দ্র থেকে যত শক্ত কথাই বলা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত আসলে কিছু হবে না।


এদিকে, ডামি প্রার্থী দেওয়ার কথা আলোচনায় আসার পর বর্তমানে আওয়ামী লীগের এমপি রয়েছেন- এমন বেশির ভাগ আসনেই গড়ে পাঁচ-সাত জন করে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে এখন থেকেই মাঠে তৎপর। তাদের প্রায় প্রত্যেকেই গত ১৪ বছরে নানা উপায়ে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন। অর্থের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে তারা এলাকায় নিজ নিজ বলয়ও গড়ে তুলেছেন। তাদের বদ্ধমূল ধারণা—দলীয় মনোনয়ন পেলেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত। এমন ধারণা কিংবা বিশ্বাস থেকে তাদের প্রত্যেকেরই এখন পূর্ণ মনোযোগ ও সব ধরনের প্রচেষ্টা দলীয় টিকিট প্রাপ্তির দিকে।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য এই কৌশল শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নিলে এবং প্রতিটি আসনে গড়ে ৮-১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী হলে, তখন নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ প্রমাণ করতে কোনো জোটের কিংবা রাজনৈতিক মিত্রও প্রয়োজন নাও হতে পারে ক্ষমতাসীনদের। স্থানীয় রাজনীতির বর্তমান ছবি এবং ভূরাজনীতি বিবেচনায় নিলেও ‘জোটের কিংবা রাজনৈতিক মিত্রও প্রয়োজন নাও হতে পারে’—কথাটি মান্যতা পায়।

আরও সংবাদ পড়ুন।

দলগুলো নিজেরা মতপার্থক্য নিরসনে চেষ্টা করুক – সিইসি

আরও সংবাদ পড়ুন।

বিএনপি আন্দোলনের পথেই হাঁটছে

আরও সংবাদ পড়ুন।

দালালি করে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ নেই – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top