তিন দিনের ডিসি সম্মেলন শুরু আগামী ২৪ জানুয়ারি
বিশেষ প্রতিবেদকঃ আগামী বছরের অর্থাৎ ২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে ২৪ জানুয়ারি। সম্মেলনটি ‘ডিসি সম্মেলন’ হিসেবে অধিক পরিচিত। তিন দিনব্যাপী সম্মেলন সশরীরে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেষ হবে ২৬ জানুয়ারি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ডিসি সম্মেলন। এবারের আয়োজনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
তারিখ নির্ধারণের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ-সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারপ্রধান সশরীরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিলেছে। এর মধ্যে ব্যতিক্রম না হলে তিন দিনেই সম্মেলন শেষ করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ তবে গতবারের মতো এবারও রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সম্মেলনের কার্য অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ডিসিরা রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ৬৪ জেলার ডিসিদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব আহ্বান করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সব জেলা থেকে আসা প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ডিসিদের কাছ থেকে আসা পাঁচ শতাধিক প্রস্তাব থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এই তালিকা আরও সংক্ষিপ্ত করার কাজ চলছে। সম্মেলনের সপ্তাহ খানেক আগে প্রস্তাবের তালিকা চূড়ান্ত হবে।
শীতকালে সম্মেলনের রীতি চালু হওয়ায় ডিসিরা ইতিবাচক বিষয় হিসেবে দেখছেন। কারণ ডিসি সম্মেলন সাধারণত জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে হতো। করোনাভাইরাস মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ ও ২০২১ ডিসি সম্মেলন না হওয়ার পর গত ডিসি সম্মেলন হয় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে।
ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন। এরপর সম্মেলনের কার্য অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হয় ওসমানী মিলনায়তনে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরের ডিসি সম্মেলনও জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগের একটি জেলার ডিসি গণমাধ্যমে বলেন, বছরের মধ্যভাগে বর্ষার সময়। ওই সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমস্যা থাকে। তাই সে সময় ডিসিরা জেলার বাইরে থাকলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সমস্যা হয়। শীতকালে ডিসি সম্মেলনের সিদ্ধান্তটি খুবই ভালো। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি ডিসি সম্মেলন হওয়ার পর চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল। করোনার কারণে দুই বছর সম্মেলন না হওয়ায় এ চিন্তা ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাকে সামনে রেখে এ চিন্তা থেকে সরে আসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসক সম্মেলন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। জেলা প্রশাসক হিসেবে মাঠ পর্যায়ে সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের অনন্য সুযোগ মেলে ডিসি সম্মেলনে। বিদ্যমান আইন, নীতি, বিধিমালা ও সরকারের নির্দেশনাবলি অনুসরণে কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা হয়ে থাকলে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব রাখেন ডিসিরা। নীতিনির্ধারকরা এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এ ডিসি সম্মেলন চলতি সরকার আমলের শেষ আয়োজন। তাই এ সম্মেলনে নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮ অনুযায়ী কোন জেলায় কী ধরনের প্রতিশ্রুতি ছিল তা মূল্যায়ন হতে পারে।
সেই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের বিষয়ে অর্জন এবং করণীয়সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।