ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার সাবেকুন নাহারের দুর্নীতি ও অনিয়ম
অপরাধ প্রতিবেদকঃ চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে ছিলেন তিনি, ফিরে এসেছেন রাজকীয় ভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে। প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে রেখেছেন নিজের অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বাক্ষর।
ভাই ও ছেলেকে দিয়ে দলিল ও দাপ্তরিক কাজ করানো, ঘুষ বানিজ্য, বদলি বানিজ্য সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম বর্হিভুত ভাবে সুবিধা দিয়ে অর্থ আদায় করার অভিযোগ করেছেন তার বিরুদ্ধে। ধানমন্ডি, কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার একাধিক স্থানে পরিবারের নামে
গড়েছে সম্পদের পাহাড়।
ধারাবাহিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহারের অনিয়ম দুর্নীতি চিত্র।
ধানমন্ডি ১০/এ সড়কের এই গোলাপ ভিলা নামের ভবনের মালিক ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকু নাহার।
প্রশ্ন উঠতে পারে সরকারি চাকরি করে কিভাবে তিনি
এই বাড়ির মালিক হলেন সাবিকুন নাহার? কত টাকা বেতন দিয়ে চাকুরী জীবন শুরু করেছেন তিনি? বর্তমানেই বা কতটাকা বেতন পান তিনি? সম্প্রতি অনুসন্ধানে উম্মোচিত হয়েছে এর সত্যতা।
বর্তমান জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার চাকরি জীবনে কর্মরত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, দোহার, ও নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা জেলার গুলশানের মত গুরুত্বপূর্ণ সাবরেজিস্টার অফিসে।
অনুসন্ধানের তথ্য বলছে যখন যে অফিসে কর্মকত ছিলেন সাবিকুন নাহার সেখানেই অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে যুক্ত থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সখ্যতা ও আওয়ামীলীগের নামে সাবেকুন নাহারের মুখে খই ফুটলেও ঘুষ ও অনিয়মের রানী ঢাকা জেলার জেলা রেজিস্ট্রার, সাবেকুন নাহারের নিয়োগ হয়েছে, বিএনপি জামায়াতের জোট সরকারের আমলে।
ঢাকা জেলার জেলা রেজিস্ট্রার, সাবেকুন নাহারের অনিয়মের ধারাপাত
২০০৮ সালে দোহারে যৌথবাহিনীর অভিযানে তিনি ধরা পড়েন। যৌথবাহিনীর অভিযানে জাল-দলিল, ভূমির শ্রেণী পরিবর্তনের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে তার বিরুদ্ধে। সে সময় কালের আইজিআর মজদার হোসেনের অনুরোধে সেই যাত্রায় বেঁচে যান বর্তমান ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার। কিন্তু নিজের দোষ চেপে গিয়ে সেই অপরাধে তার পিয়ন ও সহকারীকে জেলে যেতে হয়।
ঘটনাটি এমন ঘটেছে যে, এই সময় কালের আই জি আর মজদার হোসেন তাকে রূপগঞ্জে বদলি করেন। কিন্তু চোরে শোনে না ধর্মের কাহিনি। অনিয়ম ও দুর্নীতির মহারানী রূপগঞ্জে গিয়েও তার কার্যক্রম চলমান রাখেন।
২০১৪ সালে রূপগঞ্জে ৪০৫২ এবং ৪৫২৭ নং দলিল সম্পাদন করেন তিনি। যেখানে সরকারের শত কোটি টাকা রাজস্ব হারায়, ফলাফল সেই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হন বর্তমানের ঢাকা জেলার ঢাকা জেলার জেলা রেজিস্ট্রার, সাবেকুন নাহার।
এখানেই দুর্নীতি ও অনিয়মের ইতি টানতে পারতেন ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার। কিন্তু না তিনি থেমে থাকেন নি, ঢাকা জেলার গুলশান সাব রেজিস্ট্রার অফিসে জয়েন করে মাত্র সাত মাস চাকরি করেন।
সেখানে জয়েন করে তিনি দুই কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ০৩/১১/২০১১ সালে একটি দলিল সম্পাদন করেন তিনি। দলির নাম্বার ৯১৫০ সেই দলিলের কারণেই ২০১৬ সালে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা হয়।
এছাড়াও ৬৯৭৮, ৯৩৫৫ এবং ২৯২২ নাম্বারের দলিল সম্পূর্ণ করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ঢাকা জেলার জেলা রেজিস্ট্রার, সাবেকুন নাহার কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
বর্তমান সময়ে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন্নাহার নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন শেষ করে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের চেয়ার দখল করে রেখেছেন।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তার ছেলে ও তার ভাই ইয়ামিনকে দিয়ে অবৈধ দলিল ও অবৈধ টাকা লেনদেন করার পাশাপাশি করাচ্ছেন দাপ্তরিক কাজও।
এছাড়াও কেরানীগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার এর ভাই ইয়ামিনের অবৈধ দলিল করার বিষয়টি উঠে আসে এবং গণমাধ্যমে নাম শুনেই তিনি রেজিষ্ট্রার বিল্ডিং এর পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান।
অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ঢাকা জেলার জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার এর কাছে জানতে চাইলে, তিনি গণমাধ্যমের সামনে কথা বলবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন।
এদিকে, ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকু নাহারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে ও জানাতে,নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শহীদুল আলম ঝিনুক এর সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব মো: মাহবুব হোসেন বলেন, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তিনি যেই হোন- দুদক অনুসন্ধান করতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় এটিরও অনুসন্ধান চলবে।