বেসরকারি স্কুল-কলেজে অনিয়ম-দুর্নীতি! অভিযানে দুদক

Picsart_22-05-05_08-50-26-647.jpg

বেসরকারি স্কুল-কলেজে অনিয়ম-দুর্নীতি! অভিযানে দুদক

অপরাধ প্রতিবেদকঃ সারাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল ও কলেজে চলছে অনিয়ম-দুর্নীতি। কোথাও লুটপাট করছেন পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ অন্য সদস্যরা। আবার কোথাও লুটপাটে জড়িত খোদ অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক। ভর্তি-বাণিজ্য, টিউশন ও বিভিন্ন খাতের ফি বৃদ্ধি করে সেই অর্থ আত্মসাৎ,খাতা, কলম, কাগজ, স্কুল ড্রেস, ডায়ারি বিক্রি, নিম্নমানের বই পাঠ্যভুক্তি, জমি ক্রয়, ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ নানা কাজেই চলছে দুর্নীতির মহোত্সব।

শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, যে প্রতিষ্ঠানেই তদন্ত করা হয়, সেখানেই বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। জনবলের অভাবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আসা অভিযোগগুলো তদন্ত করা যাচ্ছে না। যদি সব প্রতিষ্ঠান তদন্ত করা যেত তাহলে বহু প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যেত।

রাজধানীর নামি প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি আইডিয়াল, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল, শাহআলী স্কুল, শাহআলী কলেজ সহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে হচ্ছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি।

রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ৫২ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগ শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা পড়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। ভর্তি-বাণিজ্য, এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ, স্কুল ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তাকে দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই অধ্যক্ষ অবসরে গেলেও রেখে গেছেন তার সহযোগীদের।

রাজধানীর মনিজা রহমান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি এক তদন্তে ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজে ড্রেস ক্রয়ে অর্থ আদায়, নিয়ম না মেনে শিক্ষক নিয়োগের প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। এর আগে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলে নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। নানা অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে মিরপুরের শাহআলী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীতে বেসরকারি স্কুল এবং কলেজ রয়েছে ৬৬৮টি। প্রতিনিয়ত এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে। নানা কারণে সব অভিযোগ আমলেও নেওয়া হয় না। যে অভিযোগগুলো আমলে নেওয়া হয়, সেখানেই মিলছে অনিয়ম ও দুর্নীতি।

এত সংখ্যক তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা আসে, যা সময়মতো তদন্ত করে রিপোর্ট জমাও দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। রাজধানীর নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের এক উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনার এক বছর পর তদন্ত শুরু করে। একইভাবে তদন্ত করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় শাহআলী স্কুলের।

মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন জানান, দুদকের সুপারিশের আলোকে ২৭টি প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করা হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমেই অনেক তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা আসে। কিন্তু সময়ের অভাবে সব প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করা যায়নি। এ কারণে রিশিডিউল করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরেও প্রতিনিয়ম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ জমা পড়ছে। এছাড়া নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিদর্শনও করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্হ এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, যেখানেই তদন্তে বা পরিদর্শনে যাওয়া হচ্ছে, সেখানেই অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলছে। তদন্তে বা পরিদর্শনে গিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়নি এমন খুব একটা উদাহরণ নেই। তিনি জানান, ঢাকার নামি প্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং মতিঝিলস্হ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

রাজধানীর মিরপুর কলেজের এক তদন্তে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। ঐ অধ্যক্ষ ঢাকায় কিনেছেন তিনটি ফ্ল্যাট। গ্রামের বাড়িতে হচ্ছে তিনতলা বাড়ি। শ্বশুরের চিকিত্সার খরচের জন্য বেনামে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন কলেজ তহবিল থেকে। টাকা বিনিয়োগ করেছেন সঞ্চয়পত্র ও শেয়ারবাজারে। নিয়ম ভেঙে কলেজ উন্নয়ন খাতে উপকমিটিকে সম্মানি বাবদ ১২ লাখের বেশি টাকা দিয়েছেন। তা ছাড়া নির্মাণকাজসহ বিভিন্ন খাত থেকেও কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বর্তমানে এ কারণে অধ্যক্ষ বরখাস্ত রয়েছেন।

তথ্য অনুযায়ী, মূলত শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রণীত বেসরকারি স্কুল ব্যবস্হাপনা কমিটি (এসএমসি) ও গভর্নিং বডি (জিবি) পরিচালনা বিধিমালায় সভাপতি সহ পর্ষদকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কর্মকাণ্ডের দায়ভার থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তি বলতে সর্বোচ্চ কমিটি ভেঙে দেওয়ার ঘটনা। এ কারণে দুর্নীতিবাজরা বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ লুটে নিচ্ছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই অধ্যক্ষরা ফেঁসে যাচ্ছেন। তাদের বরখাস্ত এবং এমপিও স্হগিত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top